Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গাজায় মানবিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি

যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান নিরাপত্তা পরিষদের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

ইসরাইলি বাহিনীর টানা ১১ দিনের নারকীয় তাণ্ডবের পর এখন কিছুটা শান্ত গাজা উপত্যকা। তবে ইসরাইলের পৈশাচিকতার স্পষ্ট ক্ষত পুরো ভুখণ্ডজুড়ে। নির্বিচার হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন নারী এবং নিষ্পাপ শিশুসহ ২৪৩ জন। আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন বহু মানুষ। তবে যারা প্রাণ নিয়ে নিজ ভিটায় ফিরেছেন, তাদের সঙ্গী হয়েছে স্বজন হারানোর আহাজারি কিংবা মাথা গোজার ঠাঁই হারানোর বেদনা।

গাজার শিশুদের আর্তনাদই বলে দেয়, ইসরাইলি বাহিনীর নৃশংসতার মাত্রা। সন্তান হারানো মায়ের আহাজারি জানান দেয়, গত কয়েক দিনে ইসরাইলি বাহিনীর পৈশাচিকতা। টানা ১১ দিন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সাধারণ ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালানোর পর ইসরাইল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও এ কয়দিনে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। নারী ও শিশুসহ ২৪৩ জনের প্রাণহানির পাশাপাশি আহত হয়েছেন বহু মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অনেকে আবার পঙ্গু হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। ইসরাইলি বর্বর হামলা থেকে বাঁচতে যারা নিজ বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছিলেন, যুদ্ধবিরতির পর তাদের অনেকেই পেয়েছেন শুধু কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপ। কেউ আবার হারিয়েছেন আপনজন। তবুও এসব নিপীড়িত মানুষের একটিই চাওয়া, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। সেখানকার নাগরিকরা বলছেন, আমাদের রক্ত জেরুজালেমের জন্য। আমাদের রক্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড রক্ষা করার জন্য। তাদের একজন বলেন, আমার ১১ বছর বয়সী ভাতিজাকে হত্যা করা হয়েছে। কেন তাকে মরতে হলো? বিশ্ব কি কিছুই দেখছে না?

জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে প্রবেশের দাবিতে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভের জেরে, গেল ১০ মে গাজা ভূখণ্ডে নির্বিচারে বোমা হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। এর জবাবে ইসরাইলের অভ্যন্তরেও রেকর্ড সংখ্যক রকেট নিক্ষেপ করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিঙ্কেন আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার ইসরাইল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীর সফরে যাবেন বলে জানা গেছে। গাজায় অবকাঠামো পুনর্র্নিমাণে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

১১ দিন পর এই প্রথম গত শুক্রবার রাতে গাজা উপত্যকা ছিল শান্ত। এই রাতে ইসরাইলের দিক থেকে কোনো বিমান হামলা চালানো হয়নি। হামাসের পক্ষ থেকেও কোনও রকেট নিক্ষেপ করা হয়নি। শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি বলবৎ হবার পর দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত কোনও পক্ষ থেকে সেই সমঝোতা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেনি। গাজার বাসিন্দারা তাদের বাড়ির বাইরে বের হয়ে এসেছেন। দেখেছেন কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবারও ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে বেশ কয়েকটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সংঘর্ষে অন্তত ২৪৮ ফিলিস্তিনি এবং ১২ ইসরাইলি নিহত হয়েছে। আহত লোকজনকে সরিয়ে নিতে করিডোর তৈরির আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

জাতিসংঘ বলছে, সর্বশেষ এই যুদ্ধে ৮০ হাজারের মতো মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে। তাদের কেউ কেউ এখন নিজেদের বিধ্বস্ত বাড়িতে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। তবে গাজায় ইতোমধ্যেই মানবেতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ১১ দিনের ইসরাইলি আগ্রাসনে বহু পানির পাইপলাইন ধ্বংস হয়ে গেছে, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ইসরাইল সীমান্তের একটি জায়গা আংশিকভাবে খুলে দেয়ার পর ৫০টির মতো লরি জরুরি খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে গাজায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। সাহায্য সংস্থাগুলোর ধারণা, ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘর ও অবকাঠামো পুনরায় নির্মাণ করতে কোটি কোটি ডলার খরচ হবে এবং এই কাজটি করতে লেগে যাবে কয়েক বছর।

এদিকে, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনকে যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি মেনে চলতে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। শনিবার এই আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদেশগুলো বলেছে, ফিলিস্তিনের জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে গাজায় অবিলম্বে মানবিক ত্রাণ পাঠানো প্রয়োজন।
গাজায় ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে ১১ দিনের সংঘর্ষের পর এই প্রথম জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ বিবৃতি দিল। বিবৃতিতে ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী অব্যাহত সমর্থন ও ইসরাইলি জনগোষ্ঠীর আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান। ইসরাইলে কয়েক হাজার রকেট হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে সংঘাতের জন্য হামাসকে দায়ী করে ইসরাইল। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আশা করি, গাজায় পুনর্বাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হামাসের প্রতি নিন্দা জানাবে এবং তাদের নিরস্ত্র করার উদ্যোগ নেবে।’ জাতিসংঘের বিবৃতির পরে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ফিলিস্তিন।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল সব সময় ইসরাইলকে জোরালোভাবে সমর্থন করে। মার্কিন প্রতিনিধিদল গাজায় অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ ও মানবিক ত্রাণ বিতরণের জন্য ফ্রান্সের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। চীন, নরওয়ে ও তিউনেসিয়ার প্রস্তাবিত চূড়ান্ত বিবৃতিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদেশগুলো গাজায় চলমান সহিংসতায় হতাহত ব্যক্তিদের প্রতি কেবল শোক জানিয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজায় পুনর্বাসন ও পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে গুতেরেসের এ আহ্বানের প্রতি সমর্থন জানানো হয়। ওই বিবৃতিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মিসর ও অন্যান্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এএফপির সংবাদকর্মী জানিয়েছেন, গত শুক্রবার যুদ্ধবিরতি কার্যকরের এক দিন পরে শনিবার গাজায় ত্রাণ সরবরাহে বাধা দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় কমপক্ষে ছয় হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসরাইলি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ