Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দুর্যোগঝুঁকি প্রশমনে আরো বেশি সচেতন হতে হবে

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষকে সুরক্ষা প্রদানে সম্ভব সবকিছুই সরকার করছে। দুর্যোগঝুঁকি প্রশমনে প্রযুক্তির ব্যবহার জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে হ্রাস করলেও জনগণকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। শুধু সরকারে নয়, বিরোধী দলে থাকার সময়ও আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকুক আর বিরোধী দলে থাকুক সব সময় মানুষের পাশে থেকেছে।

গতকাল রোববার সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ২২৫টি স্থাপনার উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর একটা ঘূর্ণিঝড় কিন্তু আসছে। আমরা আধুনিক প্রযুক্তির কারণে অনেক আগে থেকেই জানতে পারি। আর এসব বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা আমরা ইতোমধ্যে নিতে শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা সতর্ক থাকব এবং ঝুঁকি হ্রাস করতে পারব। সরকার নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সব সময় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেননা, সম্পদ চলে গেলে সম্পদ পাওয়া যায়, কিন্তু জীবন চলে গেলে আর পাওয়া যায় না। এ জন্য জনসচেতনতা বেশি প্রয়োজন। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, টর্নেডো, বজ্রপাত, ভূমিধস অথবা ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড সবকিছুতেই মানুষকে রক্ষা করা বা সুরক্ষিত রাখার জন্য যা যা করণীয় সে ব্যবস্থাগুলো আমরা করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, মনে রাখতে হবে এটা ব-দ্বীপ। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে। তাছাড়া, বাংলাদেশে মাঝে মাঝে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগও আসে। সব মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা এগিয়ে যাব। মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এদিন দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ১১০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি জেলা ত্রাণ গুদাম-কাম-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র ও পাঁচটি মুজিব কিল্লার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি একইসাথে ৫০টি মুজিব কিল্লার ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন। সঠিক দিকনির্দেশনা, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, আদর্শ নিয়ে চললে বাংলাদেশের মানুষকে কেউ কখনো দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সেভাবেই দেশকে গড়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

করেনাভাইরাস সম্পর্কে সকলকে পুনরায় সতর্ক করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলে মিলে এই দুর্যোগকেও আমরা প্রতিহত করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের কাজ নিজে করা, বিশেষ করে যুবসমাজ যাতে নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে তার ওপর জোর দেন তিনি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ওপর একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শিত হয়। গণভবন থেকে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী নোয়াখালীর সুবর্ণচর, বরিশালের উজিরপুর এবং গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে পরে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্যোগ মোকবেলায় যে সক্ষমতা তা আজকে সারাবিশ্বে সমাদৃত। যে কারণে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গ্লোবাল অ্যাডাপটেশন সেন্টারের কার্যালয় বাংলাদেশে স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, একটা ছোট্ট ভূখণ্ডের মধ্যে প্রতিনিয়ত দুর্যোগ মোকাবেলা করেও আমরা মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারছি। সে কারণে আমাদের ওপর দায়িত্ব পড়েছে সারাবিশ্বে কিভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করা যেতে পারে তার পরিকল্পনা নেয়ার, বাস্তবায়ন এবং মনিটরিং করার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নানা সময়ে নানাভাবে আসে সে বিষয়ে কাজ করার জন্যই এই গ্লোবাল অ্যাডাপটেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হয়েছে এবং সারাবিশ্ব এখন বাংলাদেশকে দুর্যোগ মোকাবেলায় একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখে। যেটা বাংলাদেশ এবং এর জনগণের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক। তিনি বলেন, দুর্যোগকালীন মানুষের কাছে খাদ্য সাহায্য দ্রুত যাতে পৌঁছানো যায় সে জন্য সরকার পরিকল্পনা করে এই উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিটি জেলায় সরকার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করে দিচ্ছে যাতে যেকোনো দুর্যোগে দমকলকর্মীরা দ্রুত সেখানে পৌঁছে ব্যবস্থা নিতে পারে। সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ভলান্টিয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসার-ভিডিপি থেকে শুরু করে প্রশাসন এবং অন্যান্য সকলে এবং বিভিন্ন ভলান্টিয়ার অর্গানাইজেশনগুলো যারা দুর্যোগ সম্পর্কে নানা সচেতনতা সৃষ্টি করা থেকে শুরু করে ত্রাণ তৎপরতা সকল কাজেই অংশগ্রহণ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, দুর্যোগ দুর্বিপাকে মানুষের জন্যই মানুষ। মানুষের পাশেই মানুষ থাকবে- সেই চিন্তা থেকেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ইতোমধ্যেই আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসনে ২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছি অগ্নিনির্বাপন, বা ভূমিকম্প বা ভূমিধস হলে সেখান থেকে মানুষকে রক্ষা করা এবং তাদের উদ্ধার কাজ কিভাবে পরিচালনা করা যায় সে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। এখানে আমাদের ফায়ার সার্ভিস এবং সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটা ব-দ্বীপ কাজেই এই ব-দ্বীপ অঞ্চলটাকে সুরক্ষিত করে আমাদের মানুষের জীবনযাত্রাটা যাতে সুরক্ষিত হয় এবং সেটা আজকের জন্য নয় আগামী প্রজন্মের জন্য শতবর্ষের একটা পরিকল্পনা অর্থাৎ ২১০০ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে, কিভাবে নিরাপদ হবে, মানুষের জীবনযাত্রা কিভাবে উন্নত হবে সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বা ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা-দীক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি বিতরণ এবং আমরা ঘর তৈরি করে দিচ্ছি, যাতে একটি মানুষও আর গৃহহীন না থাকে, যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল, সেটা আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। একটি সেমিপাকা ঘর বা এখন দুর্যোগ মোকাবেলায় সহনশীল ঘর আমরা করে দিচ্ছি।



 

Show all comments
  • Abdul Hasan Pinto ২৪ মে, ২০২১, ২:১১ এএম says : 0
    বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার লাল সবুজের দেশে উন্নয়ন নিয়ে ব‍্যাস্ত আজকের প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী শেখ হাসিনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Malik Mlik ২৪ মে, ২০২১, ২:১২ এএম says : 0
    ভয় হয় অাপনি যে এত কষ্ট করে এই অাশ্রয় কেন্দ্র গুলো বানিয়েছেন সেটা ধসে পড়ে নাকি কারন সরকারি দান ঘর গুলো সিমেন্ট রডের অভাবে এক এক করে ধসে পড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বেঈমান ঠিকাদার দের শায়েস্তা করুন অমানুষ থেকে মানুষে পরিণত করুন তার পর এসব দায়িত্ব দিন বাংলাদেশের এমপি মন্ত্রী ঠিকাদার বিষণ প্রতারক বেঈমান চুর
    Total Reply(0) Reply
  • Maahi Ahmed ২৪ মে, ২০২১, ২:১৩ এএম says : 0
    Congratulations Honourable Prime Minister Sheikh Hasina
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নাজমুল ইসলাম ২৪ মে, ২০২১, ২:১৬ এএম says : 0
    জনসচেতনতা বাড়ানো গেলে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমানো যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • রেজাউল করিম ২৪ মে, ২০২১, ২:১৭ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে একমত। সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • নূরুজ্জামান নূর ২৪ মে, ২০২১, ২:১৭ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ আমাদের দুর্যোগ থেকে রক্ষা করুন আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • মেঘদূত পারভেজ ২৪ মে, ২০২১, ২:১৮ এএম says : 0
    ঘুর্ণিঝড় জশ থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। ক্ষয়ক্ষতি যাতে কম হয় সেজন্য এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • রুবি আক্তার ২৪ মে, ২০২১, ২:১৯ এএম says : 0
    প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সচেতনতা বাাড়াতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ