Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তারা তো তোমাদেরই ভাই-বোন

মাওলানা ইমদাদুল হক | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ২৯ মে, ২০২১

শিরোনামটি নবীজী (সা.) এরই বাণী থেকে গৃহীত, যার মাধ্যমে তিনি দাস-দাসী ও কাজের মানুষের হকের বিষয়ে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। আজ আমাদের অনেকের অধীনেই কাজের মানুষ থাকে। বিশেষভাবে মা-বোনদের সহযোগিতার জন্য ঘরে ছোট মেয়ে, কিশোরী বা নারী সহযোগী থাকে, যাদেরকে সমাজ কাজের বুয়া, কাজের মেয়ে ইত্যাদি বলে সম্বোধন করে থাকে। যদিও এ ধরনের শব্দ এড়িয়ে চলা ভালো।

আসলে ধনসম্পদের ক্ষেত্রে কেউ অর্থবান, কেউ দরিদ্র বা নিঃস্ব। এ তফাৎ স্বয়ং আল্লাহ্ই করেছেন। এতে হেকমত রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ...আমিই তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করেছি পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অপরজনের ওপর মর্যাদায় উন্নত করেছি; যাতে তারা একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে। (সূরা যুখরুফ : ৩২)।

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা কাউকে অর্থ দিয়েছেন আবার কাউকে দেননি। যেন অর্থশালী দরিদ্র ব্যক্তি থেকে শ্রম নিতে পারে আর দরিদ্র ব্যক্তি অর্থশালী থেকে অর্থ গ্রহণ করতে পারে। এভাবে একে অপরের উপকার করার মাধ্যমে পুরো সমাজ যেন মিলেমিশে বাস করতে পারে।
প্রতিটি মানুষ অন্যের মুখাপেক্ষী। এটি আল্লাহ তাআলার হেকমত। তাই আল্লাহ তাআলা যদি কাউকে কোনো মর্যাদা দান করেন তার কর্তব্য হলো শোকর করা। অর্থাৎ বিনম্রচিত্তে সর্বদা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার অনুভূতি জাগ্রত রাখা। আল্লাহর শোকর করা যে, হে আল্লাহ! এটা তোমারই দান। তুমি না দিলে আমার পাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। তুমি চাইলে আমাকে নাও দিতে পারতে। তাই শোকর তোমার। আর তুমি চাইলে মুহূর্তে ছিনিয়েও নিতে পারো। তাই প্রার্থনা, তা ছিনিয়ে নিয় না।

আর নিআমতের বড় শোকর হলো, উক্ত নিআমতের বিষয়ে বিনয়ী হওয়া; অহংকার থেকে বেঁচে থাকা। ব্যক্তি যখন বিনয়ী হবে তখন অন্যকে ছোট ভাবা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা থেকে বিরত থাকবে।
বর্তমান শহরে তো বটেই গ্রামেও অনেকের ঘরে কাজের সহযোগী হিসেবে ছোট ছেলে-মেয়ে বা বয়স্ক মহিলা থাকে। তাকে আল্লাহ আমার অধীন করে দিয়েছেন। সুতরাং আমার উচিত তার সাথে কোমল ও দয়ার আচরণ করা; কোনো রূঢ় আচরণ না করা। সে দুর্বল, তার অভিভাবক দুর্বল; কিন্তু তার রব-মহাপরক্রমশালী; তিনিই সকল দুর্বলের শক্তিমান অভিভাবক। তার অভাবের কারণে হয়ত সে আজ আমার অধীন; হতে পারত তার স্থানে আমি হতাম। তখন আমি যে আচরণ প্রত্যাশা করতাম তার সাথেও সে আচরণ করব।

আমার মাতা-পিতা, ভাই-বোন যেমন আছে তারও তো তেমন আছে। আমার কষ্টে আমার মাতা-পিতা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানেরা যেমন কষ্ট পান তার ক্ষেত্রেও তো তেমন। আমার বাবা-মা যেমন আমাকে আদর করেন তাকেও তার বাবা-মা আদর করেন। আমি যেমন আমার সন্তানকে সর্বদা আমার কাছে রাখতে চাই তার বাবা-মাও তো তাকে কাছে রাখতে চান। কিন্তু হয়তো অভাবের তাড়নায় এ ছোট বয়সেই দূর দূরান্তে, পরবাসে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমার সন্তান যেমন, সেও তেমন; তফাৎ শুধু- সে অভাবী, অভাবীর সন্তান।

ঈদ বা কোনো মুসলমানদের কোনো উৎসবে আমার সন্তান আমার ঘরে থাকবে নাÑ তা কল্পনা করতেও আমাদের কষ্ট হয়। সুতরাং তার বিষয়টাও খেয়াল রাখব; এক উৎসবে যেমন এক ঈদ থাকল তো আরেক ঈদে ঈদের জামাসহ তাকে তার মা-বাবার সাথে ঈদ করার ব্যবস্থা করব। নবীজী (সা.) এ বাস্তবতাকেই উপলব্ধি করার জোর তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, দাস-দাসী (কাজের মানুষ) তোমাদেরই ভাই। তাদের প্রতি ‘ইহসান’ কর, সদাচারী হও। (মুসনাদে আহমাদ : ২৩১৪৮)।

আরেক হাদীসে নবীজী বলেন, তারা তো তোমাদেরই ভাই(-বোন)। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী : ৬০৫০)। এ বিষয়ে আরো অনেক হাদীস রয়েছে। তবে চিন্তার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। এখানে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন : এক. তারা আমাদের ভাই। দুই. আল্লাহ তাদেরকে আমাদের অধীন করে দিয়েছেন।
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা চাইলে আমাকে তার অধীন করে দিতে পারতেন; যেমনিভাবে তাকে আমার অধীন করেছেন। আর মনে রাখতে হবেÑ সে আমার ভাই। আমি আমার ভাইয়ের ক্ষেত্রে যে আচরণ আশা করি তার সাথেও আমার তেমন আচরণই করা চাই।
এ বিষয়টি যখন মানুষ ভুলে যায় তখন সে স্বেচ্ছাচারে লিপ্ত হয়, জুলুমের আচরণ করে। এজন্য নবীজী (সা.) আমাদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তাঁর সারা জীবনের কর্ম ও নির্দেশনার মাধ্যমে তো করেছেনই; এমনকি ইন্তেকালের সময় তাঁর শেষ ওসিয়ত ছিল, নামাজ, নামাজ! (নামাজের প্রতি যত্নবান হও!) আর দাস-দাসীদের (অধীনস্থ কাজের মানুষের) বিষয়ে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর!



 

Show all comments
  • Ahmed hossain khan ২৯ মে, ২০২১, ১২:৫৯ এএম says : 0
    More mon mohonay manobota houk mudrito. Maya momotay mui jeno hoi unnoto. Dooner doone ami na hoi soto. amar kotay karo kolijay jeno na hoy kooto.
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নাজমুল ইসলাম ২৯ মে, ২০২১, ৫:৪০ এএম says : 0
    বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে আল্লাহতায়ালা মানুষকে বিভিন্ন স্তরে সৃষ্টি করেছেন। কাউকে আর্থিক সচ্ছলতা ও ধনদৌলত দিয়েছেন, আবার কাউকে করেছেন নিঃস্ব-এতিম। কেউ দুহাতে টাকা ব্যয় করছেন, কেউ পেটের ক্ষুধা নিয়ে মানুষের কাছে হাত পাতছেন। আদর্শ পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে পৃথিবীতে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় এই বৈচিত্র্য খুবই জরুরি। তবে এর উদ্দেশ্য এই নয় যে, ধনী ব্যক্তি সম্পদের অহংকারে বিভোর থাকবে এবং দরিদ্র ব্যক্তি আল্লাহর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলবে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাজনীন জাহান ২৯ মে, ২০২১, ৫:৪০ এএম says : 0
    আল্লাহ চান ধনী তার সম্পদের সঠিক ব্যবহার করুক এবং অসহায় ব্যক্তি অভাবের দিনগুলোয় ধৈর্যধারণ করুক। তাই ধন-ঐশ^র্যের বিনিময়ে ধনীকে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে এবং তার নির্দেশিত পথে তা ব্যয় করতে হবে। আর দারিদ্র্য জয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করাই দরিদ্র ও অসহায় মানুষের দায়িত্ব।
    Total Reply(0) Reply
  • তানিম আশরাফ ২৯ মে, ২০২১, ৫:৪০ এএম says : 0
    ধনী-হোক বা দরিদ্র, মানুষ দৈনন্দিন জীবনের সব কাজ সে একা করতে পারে না। প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে অন্যের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এজন্যই মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে কিংবা করতে হয়। আর সমাজের শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সমাজের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, মমতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়।
    Total Reply(0) Reply
  • নোমান মাহমুদ ২৯ মে, ২০২১, ৫:৪১ এএম says : 0
    সমাজের সব ধরনের মানুষের এই সেতুবন্ধনে ফাটল ধরে তখন, যখন একে অন্যের প্রতি জুলুম করে। দেখা যায়, অনেক সময় কর্তাব্যক্তি অধীনস্থের অধিকার দিতে কার্পণ্য করেন এবং অধীনস্থরা নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন। ফলে উভয়ের মধ্যে তৈরি হয় বিভেদের এক অদৃশ্য দেয়াল, যা তাদের উভয় পক্ষের লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায়।
    Total Reply(0) Reply
  • বদরুল সজিব ২৯ মে, ২০২১, ৫:৪১ এএম says : 0
    প্রিয়নবী (সা.) কখনো অধীনস্থদের প্রতি বিরূপ আচরণ করেননি। এক হাদিসে উল্লেখ আছে , নবীজি তার খাদেম আনাস বিন মালিক (রা.)-কে বলেছেন, ‘বাছা, তোমার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তুমি সকাল-সন্ধ্যা এমনভাবে অতিবাহিত করবে, যেন তোমার অন্তরে কারও প্রতি বিদ্বেষ না থাকে। কারণ এটি আমার সুন্নত। আর যে আমার সুন্নতকে উজ্জীবিত করে সে আমাকে ভালোবাসে। আর যে আমাকে ভালোবাসে সে আমার সঙ্গে জান্নাতে থাকবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৬৭৮)
    Total Reply(0) Reply
  • সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মাহবির ২৯ মে, ২০২১, ১১:৩৫ এএম says : 0
    খুব সন্দর হয়েছে। আপনাদের কল্যান হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohd,Helal.Makkah ৬ জুন, ২০২১, ১১:৪৪ পিএম says : 0
    আল্লাহ তোমার এই মেহনত কবুলকরূন আর আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তাওফিকদিন।আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন