Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দেশি ফলের চাহিদা বেশি

নেই ফরমালিন আতঙ্ক বেশি বেশি খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

যদি ভালো থাকতে চান তাহলে প্রতিদিন অন্তত একটি ফল খান। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের এই উপদেশ অনুযায়ী শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মানুষের মধ্যে ফল খাওয়ার প্রবণতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির এ সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনেকে এখন বেশি করে ফল খাচ্ছেন। চলছে মধুমাস। মৌসুমী নানা জাতের ফলে বাজার ভরপুর। আর এসবের দামও মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে। এছাড়া ফলে ফরমালিন নামক বিষের আতঙ্কও এখন আর নেই। সব মিলিয়ে দেশীয় ফলের বাজার এখন বেশ জমজমাট।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) জানিয়েছে, এখন বাজারের সব ফলমূলই ফরমালিন মুক্ত। বিএসটিআই গত বছর নিয়মিতভাবে দেশের বিভিন্ন বাজার থেকে ২৯৬টি ফলের নমুনা পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে একটিতেও ক্ষতিকর মাত্রায় ফরমালিনের উপস্থিতি মেলেনি। গত কয়েক বছর আগে ফলে ক্ষতিকর ফরমালিন আছে এ কথা বলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে শত শত মণ ফল ধ্বংস করেছে। তবে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী ও পুষ্টিবিদরা এখন বলছেন, সে সময়ের ওই সব কার্যক্রম ছিল একেবারেই ভুল। ফরমালিন পরীক্ষায় ভুল যন্ত্রের ব্যবহারের কারণে এমন হয়েছে তখন। আসলে ফলমূল থেকে শুরু করে শাক-সবজি সংরক্ষণে ফরমালিনের কোনো ভূমিকা নেই। এখন পর্যন্ত কৃষি ও খাদ্যসংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কোন সংস্থার পরীক্ষায় আমসহ বিভিন্ন ফলে ক্ষতিকর মাত্রায় ফরমালিন পাওয়া যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতঙ্কের ওই সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ফরমালিন পরীক্ষার জন্য ‘জেড-৩০০’ নামের যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তা ফলমূলে ফরমালিন মাপার যন্ত্র ছিল না। বাতাসে ফরমালিনের উপস্থিতি মাপতে পারে ওই যন্ত্র। সে মেশিনের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছিল। তাতে মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়, যা এখনো পুরোপুরি কাটেনি।

স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা বলছেন, ফলমূল ফাইবার (তন্তু) জাতীয় খাবার। এতে প্রোটিনের উপস্থিাতি খুবই কম। এমন খাবারে ফরমালিন কোনো কাজ করে না। ফরমালিন হচ্ছে ফরমালডিহাইডের জলীয় দ্রবণ, যা অতি উদ্বায়ী একটি রাসায়নিক। এটি মূলত প্রোটিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে।
এ বিষয়ে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম) মো. সাজ্জাদুল বারী ইনকিলাবকে বলেন, বিএসটিআইয়ে নিয়মিত ফরমালিন পরীক্ষা হচ্ছে। কখনো ফলের মধ্যে ক্ষতিকর মাত্রার ফরমালিন মেলেনি।
পুষ্টি ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশি বেশি ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিশেষত ভিটামিন সি আছে এমন ফল খাওয়ার কথা বলছেন তারা। সাধারণত কমলা, লেবু, জলপাই, মাল্টা, জাম্বুরা, আমলকি, জাম, পাকা পেঁপে, পেয়ারা, আনারস, তরমুজ, আম, লিচুর মতো মিষ্টি ফলে প্রচুর ভিটামিন সি আছে।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অধ্যাপক বিশিষ্ট পুষ্টিবিজ্ঞানী আধাপিকা নাজমা ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের দেশীয় বিভিন্ন ফলে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। এগুলো খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এখন ফলের মৌসুম। করোনামহারির এই সময়ে তাই সবার প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে ফল খাওয়া উচিত। আমাদের দেশীয় ফল যেমন আম, জাম, লিচু, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু এসব এখন প্রচুর পরিমাণে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষও সব ভীতি দূর করে বেশি বেশি ফল খাওয়ার বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, ফল বা সবজি খাওয়া বা রান্নার আগে প্রবহমান পানিতে চার-পাঁচ মিনিট ধুয়ে নিতে হবে। পচা ও আঘাতপ্রাপ্ত অংশ ফেলে দিয়ে ফল খেলে তা হবে পুরোপুরি স্বাস্থ্যকর।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (জনস্বাস্থ্যা ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, ফরমালিনের আতঙ্ক আগের মতো নেই। তারপরেও আমরা নিয়মিত গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ফরমালিন নেই এ বিষয়টি প্রচার করছি। এছাড়া রেগুলেটরি সংস্থা হিসেবে আমরা খাদ্য নিরাপদ করতে বিভিন্ন আইন ও বিধি-বিধান তৈরি করেছি। সেসব বাধ্যবাধকতা মানা ছাড়া ব্যবসায়ীদের কোনো উপায় নেই। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আমাদের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

দেশি ফলের চাহিদা যেমন বেড়েছে তেমনি উৎপাদনও বেড়েছে কয়েকগুণ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, পাঁচ বছরের ব্যবধানে দেশে ফলের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২২ লাখ টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ফল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লাখ টন। পাঁচ বছরের ব্যবধানে গত ২০১৯-২০ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ২২ লাখ ৯৩৪ টন। আগামীতে এই উৎপাদন আরো বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মেহেদী মাসুদ গতকাল ইনকিলাব বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ফল খাওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেকেই এখন বেশি বেশি ফল খাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির আগে একটা সময়ে আমদানি করা ফলের প্রতি মানুষের বেশি আগ্রহ ছিল। ফল বলতে আগে মানুষ আঙ্গুর, বেদানা, নাসপাতি, মালটা এসব বিদেশি ফলকেই বুঝতো। তবে এখন সবাই বুঝতে পারছে, আমাদের দেশি ফল যেমন, আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, পেঁপে, আনারস, বড়ই, আমড়া, জাম্বুরা, কমলা-লেবু এসব ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। তাই মানুষ এখন প্রচুর পরিমাণে দেশি ফলই কিনে খাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ