Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভূগর্ভস্থ মাটি লুট

৫০-৬০ ফুট গভীর কৃত্রিম নর্দমা : কুমিল্লায় বড় দুর্ঘটনা, কৃষি-পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ হিসেবে দেখা উচিত : ড. বদরুল ইমাম বিষয়টি স্ট্রংলি দেখব : ভূমি সচিব

সাঈদ আহমেদ, কুমিল্লা থেকে ফিরে | প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০২১, ১২:০৬ এএম

লুট হয়ে যাচ্ছে মাটি। ড্রেজার দিয়ে ভূগর্ভস্থ কোটি কোটি ঘণফুট মাটি লুটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। লুণ্ঠিত মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ভুক্তভোগীরা স্থানীয় প্রশাসন এবং দায়িত্বশীলদের কাছে ফরিয়াদ জানালেও পাচ্ছেন না স্থায়ী প্রতিকার। কুমিল্লার উত্তরাঞ্চলে ভূগর্ভ থেকে অবাধে মাটি উত্তোলন বহুমাত্রিক সর্বনাশ ডেকে আনবে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। পরিবেশবাদী সংগঠন ‘এইচআরপিবি’ বলছে, কৃষি জমি রক্ষায় সরকারি নীতিমালা রয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় রাজনীতিক ও প্রভাবশালীরা দীর্ঘদিন ধরে চালাচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদের লুণ্ঠন। ক্রমাগত ভূগর্ভস্থ মাটি উত্তোলনের ফলে শত শত একর ফসলি জমি পরিণত হচ্ছে কৃত্রিম নর্দমায়। ভূগর্ভে সৃষ্টি হচ্ছে গভীর কূপ। সৃষ্ট ৫০/৬০ ফুট গভীর কূপের কারণে চিরতরে উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে ভূম। পাড় ভেঙে কৃত্রিম কূপে বিলীন হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ফসলি জমি। লুটেরাদের লোভের জিভ এতোটাই ভয়ঙ্কর যে, ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক, কৃষকের অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকছে না। কুমিল্লা জেলার উত্তরাঞ্চল পরিদর্শনে মিলেছে এমন ভয়াবহ চিত্র।

৫০-৬০ ফুট গভীর কৃত্রিম নর্দমা :
পরিদর্শনে দেখা যায়, গগনবিদারী শব্দে ফসলি জমি কাটছে দানবীয় মেশিন। দেখলে মনে হতে পারে বুঝি কোনো সেচ-প্রকল্প। কিন্তু না। এখানে স্থাপন করা হয়েছে ড্রেজার। প্রথমে এস্কেবেটর দিয়ে ‘টপ সয়েল’ কেটে নেয়া হয়। ইঁটভাটাগুলোতে এ মাটির কদর খুব। টপ সয়েল বিক্রি শেষে পাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে পুকুর। ভূগর্ভস্থ পানিতে পুকুর ভরে উঠলে স্থাপন করা হয় ফ্লোটিং ড্রেজার। কুমিল্লার মেঘনা, তিতাস, হোমনা, মুরাদনগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় এভাবেই চলছে ভূগর্ভস্থ মাটি লুণ্ঠন। কোনো কোনো এলাকায় একই স্থান থেকে ১০-১২ বছর ধরে ভূগর্ভস্থ মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে ফসলি ক্ষেতগুলো পরিণত হয়েছে গভীর কৃত্রিম নর্দমা। মুরাদনগর উপজেলার ইউসুফ নগর গ্রাম পরিদর্শনে দেখা যায়, এখানে অন্তত ৩২ বিঘা এলাকা জুড়ে বিশাল কৃত্রিম নর্দমা। স্থানীয়রা জানান, এটির গভীরতা ৫০ থেকে ৬০ ফিট। এখান থেকে ১২ বছর ধরে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। মটকির চর গ্রামের মৃত মজনু হাজীর ফসলি জমি ছিলো জলাশয়ের ৪৫ শতাংশ। মাটি তুলে গভীর খাদের সৃষ্টি করা হলে ভাঙনের শিকার হয় আশপাশের অনেক ক্ষেত। এখানকার সোনাউল্লা গ্রামের ফজলুর রহমানের ৩০ শতাংশ ধানী ক্ষেত বিলীন হয়ে গেছে কৃত্রিম নর্দমায়। ভুক্তভোগীরা জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামের মমতাজউদ্দিন হাজীর ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম এখানে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করেন। তার আগে আরো কয়েকজন একই জায়গা থেকে মাটি তুলেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের বুঝিয়েছেন, বর্ষার পলি পড়ে এ গর্ত দ্রুত ভরাট হয়ে যাবে।

স্থানীয় মকবুল হোসেন জানান, ইউসুফনগরের স্বচ্ছপানির কৃত্রিম এই নর্দমা কতটা গভীর তা কেউ বলতে পারে না। এটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় প্রচলন হয়েছে ‘মিথ’। এখানে কেউ গোসলে নামলে জীবিত ফিরে আসে না। এক ব্যক্তি পাড়ে দাঁড়িয়ে গামছা ধুইছিলেন। হেঁচকা টান লেগে গামছাটি গ্রাস করে এই দিঘি। সম্প্রতি গভীর এই কূপে তলিয়ে গেছে নানাবাড়ি বেড়াতে আসা শিশু জাহিদুল (১১)। তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটির খোঁজ মেলেনি। স্থানীয় ডুবুরিরাও এই কূপে নামতে ভয় পান। দু’দিন পর ফুলে শিশুর পঁচা-গলা লাশ ভেসে ওঠে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দু’টি ড্রেজার জব্দ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আলম কমল। কিন্তু পালিয়ে যায় খনন কাজে জড়িত রফিক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। মামলা হয়েছে। এ ঘটনার পর এই এখান থেকে মাটি খনন আপাত বন্ধ রয়েছে। তবে ড্রেজার বসিয়ে একই পদ্ধতিতে রাত-দিন ভূগর্ভস্থ মাটি উত্তোলন চলছে নিকটস্থ কাচারিকান্দি মৌজাস্থিত দড়িকান্দি (পাঁচকিত্তা) গ্রামে। পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা জানান, গ্রামটির প্রাচীন গোরস্তানের পাশ ধরে ডুমুরিয়া বাজারের দিকে চলে গেছে চওড়া সরকারি হালট। সংলগ্ন অন্তত ৮ বিঘা ধান ক্ষেতজুড়ে চলছে মাটি উত্তোলন। লুট করা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ ফুট ভূগর্ভস্থ মাটি। মাটি খননের আপাত কারণ হিসেবে দেখানো হয়, ঈদগাহ, গোরস্থান কিংবা সড়কের খানা-খন্দ ভরাট। কখনওবা ভিটা-বাড়ি ভরাটের কথা বলা হয়। ‘নিজের জমি নিজে কাটা’র যুক্তি দেখিয়ে অনেকে বিষয়টিকে ‘অপরাধ’ নয়-মর্মে যুক্তি দেন স্থানীয় রাজনীতিকের প্রশ্রয়ে থাকা শক্তিশালী সিন্ডিকেট। কিন্তু আড়ালে প্রাকৃতিক রাষ্ট্রীয় এ সম্পদ বিক্রি করে ব্যক্তিগতভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

পরিদর্শনে দেখা মেলে, গভীর থেকে মাটি ওঠানোর সাথে সাথে ভেঙে পড়ছে চারপাশের মাটির চাঙ। এভাবে ক্রমশই বাড়ছে খাদের বিস্তৃতি ঘটছে। ভয়াবহতা অনুধাবন করে দড়িকান্দি গ্রামের কয়েকজন সচেতন মানুষ বিষয়টি অবহিত করেন মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সহকারী কমিশনার ভূমি)কে। অবহিত করেন স্থানীয় এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনকেও। এ প্রেক্ষিতে গত মার্চে এসি (ল্যান্ড) সাইফুল ইসলাম কমল দু’টি ড্রেজার জব্দ করে নিয়ে যান। কিছুদিন মাটি উত্তোলন বন্ধ থাকে। কিন্তু কিছুদিন যেতেই একই স্থানে আবারো শুরু হয় খনন। গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, প্রশাসনকে মোটা অঙ্কের নজরানা দিয়ে পুনরায় মাটি লুট শুরু হয়েছে। বারবার প্রশাসনকে জানালেও জড়িতদের বিরুদ্ধে স্থায়ী এবং কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না।

আলাপচারিতায় স্থানীয়রা জানান, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দড়িকান্দি গ্রামের মৃত আব্দুল খালেক মোল্লার পুত্র আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে ভূগর্ভস্থ মাটি লুণ্ঠনের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। একই গ্রামের আব্দুল করিমের পুত্র মো. আলাউদ্দিন, গোলাম মোস্তফার পুত্র গিয়াসউদ্দিন এই সিন্ডিকেটের সদস্য। স্থানীয় একজন প্রভাবশালী রাজনীতিকের ছত্রছায়ায় তারা কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। এ মাটি বিক্রি করে চক্রের সদস্যরা রাতারাতি বনে গেছেন কোটিপতি।

এদিকে কুমিল্লার মেঘনা, হোমনা, তিতাস, দেবীদ্বার এলাকায়ও চলছে একই পদ্ধতিতে মাটি লুণ্ঠন। এখানে স্থানে স্থানে রয়েছে ভূগর্ভস্থ মাটি লুণ্ঠনের গভীর ক্ষত। মেঘনা উপজেলা সদর সংলগ্ন নয়াগাঁও-আলগীর মধ্যবর্তী স্থানে এলজিইডি’র সড়ক লাগোয়া ধানি জমিতে চলছে ড্রেজারে মাটি উত্তোলন। দীর্ঘ পাইপ দিয়ে এ মাটি বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন গ্রামে। চারদিকে নদীবেষ্টিত এই উপজেলায় আগে নদীর বালু মহাল থেকে বালু তোলা হতো। নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত আস্তর বালুতে সুনাম রয়েছে মেঘনার। কিন্তু নদী থেকে বালু উত্তোলন ব্যয়বহুল। সরকারের কাছ থেকে বালুমহাল ইজারা নিতে হয়। তবে কৃষি জমি কিনে সেখান থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন সহজ ও ব্যয় কম। এ কারণে মেঘনা উপজেলায় সম্প্রতি শুরু হয়েছে ভূগর্ভস্থ মাটি লুণ্ঠন।

পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)র প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, কৃষি জমি সংরক্ষণের একটি নীতিমালা তৈরি হয়েছে। জমি বিনষ্ট না করার জন্য সরকারের প্রচ্ছন্ন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে নিজের জমিও খনন করেন আর তাতে যদি পার্শ্ববর্তী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।

আইন কী বলে ? : ভূগর্ভস্থ মাটি খনন এবং বিক্রি রোধে প্রত্যক্ষ কোনো আইন নেই। তবে ২০১০ সালে প্রণীত ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন’ নামে একটি আইন রয়েছে। সে অনুসারে উত্তোলনকৃত মাটি কেউ বিক্রি করতে পারেন না। মাটির ‘একক কর্তৃত্ব’ ভূমি মন্ত্রণালয়ের হাতে রেখে আইনটিতে উল্লেখ করা হয় (৬)(১) দেশের যে কোনো চর এলাকা অথবা যে কোনো স্থলভাগ হইতে বালু বা মাটি সরকার কর্তৃক ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে এবং সরকারি যে কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দিষ্ট নদী, নদী বন্দর, সমুদ্র বন্দর, খাল-বিল প্রভৃতি স্থান হইতে উত্তোলিত বালু বা মাটির বিপণনের প্রয়োজন দেখা দিলে উক্ত বিপণনের জন্য একক কর্তৃপক্ষ হইবে ভূমি মন্ত্রণালয়।

এ আইনে ভূগর্ভস্থ বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন সংক্রান্ত একটি বিশেষ বিধান (৫ নং বিধান) রয়েছে। এতে বলা হয়েছে (১) পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাইবে না। (৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন ড্রেজিং কার্যক্রমে বাল্কহেড বা প্রচলিত বলগেট ড্রেজার ব্যবহার করা যাইবে না। বেআইনি এই কার্যক্রম সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএ প্রতিবেদককে বলেন, অভিযোগটি গুরুতর। বিষয়টি আমরা স্ট্রংলি দেখব। ফসলি জমি থেকে কিভাবে মাটি উত্তোলন এবং বিক্রি বন্ধ করা যায়-এর বিধানের খসড়া প্রণয়ন হয়েছে।

লঘু দণ্ডে বন্ধ হচ্ছে না খনন : মাটি লুটের সত্যতা স্বীকার করে মেঘনা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কামরুল হাসান বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই চন্দনপুর থেকে একটি ড্রেজার জব্দ করেছি। ওখানে এক ব্যক্তি ড্রেজার ভাড়ায় এনে নিজ জমি থেকে মাটি উত্তোলন করছিলেন। যদিও এটি বেআইনি। তবে নয়াগাঁও-আলগী গ্রামের মাটি উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুমিল্লা জেলার নবগঠিত বাঙ্গুরা বাজার থানা এলাকাধীন রামচন্দ্রপুর পরিদর্শনেও মিলেছে ফসলি জমিতে ড্রেজার বসিয়ে ভূগর্ভস্থ মাটি উত্তোলন দৃশ্য। সরকারদলীয় প্রভাবশালী এক রাজনীতিকের ছত্রছায়ায় চলছে মাটি লুণ্ঠন। স্থানীয় শফিকুল ইসলাম জানান, এক অভিনব পদ্ধতিতে ভূগর্ভস্থ মাটি লুণ্ঠন চলছে এখানে। লুণ্ঠনকারীরা প্রথমে ৩ থেকে ৬ লাখ টাকা বিঘা দরে কৃষি জমি কিনে ওই জমি থেকে মাটি তুলে ৩০/৪০ লাখ টাকা বিক্রি করছে।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার ব্রাহ্মণপাড়া, দেবীদ্বার, নবগঠিত বাঙ্গরা বাজার থানা, হোমনা, তিতাস, দাউদকান্দি এবং মেঘনা উপজেলায় চলছে ভূগর্ভস্থ মাটি লুণ্ঠন। অভিনব এই লুণ্ঠন বন্ধে প্রত্যক্ষ কোনো আইন নেই। এটিকেই সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা। সুদূর প্রসারী বহুমাত্রিক ক্ষতির বিপরীতে লঘু দণ্ডের এবং নামমাত্র জরিমানায় বন্ধ করা যাচ্ছে না মাটি লুট।

সূত্রমতে, গত কয়েক বছরে কৃষি জমি বিনষ্ট করে ভূগর্ভস্থ মাটি উত্তোলনে ব্যবহৃত অন্তত ৩৫টি ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে শুধু মুরাদনগর উপজেলা থেকেই। বেশকিছু ড্রেজার পুড়িয়েও ফেলা হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে জব্দ করা হয়েছে শতাধিক ড্রেজার। মাটি কেটে বিক্রির দায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেল-জরিমানাও করছেন। এ অপরাধের সঙ্গে যুক্ত অন্তত: ৫০ জন এখন কুমিল্লা জেলা কারাগারে রয়েছেন। কিন্তু বিদ্যমান আইনের ফাঁক এবং প্রয়োগিক ফাঁকিতে দুষ্কৃতকারীরা কারামুক্ত হচ্ছে দ্রুত। বেরিয়ে সম্পৃক্ত হচ্ছে একই অপরাধে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি দায়িত্বে আসার পর এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। শতাধিক ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে। জেল-জরিমানাও হচ্ছে। মাটি লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত অর্ধশত দুষ্কৃতকারী এখন কারাগারে রয়েছে। মঙ্গলবার সকালেও প্রত্যেক থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বহুমাত্রিক ক্ষতির আশঙ্কা : ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, কুমিল্লা একটি অঞ্চলটি খনিপ্রবণ এলাকা। জেলার উত্তরাঞ্চলে নলকূপ স্থাপন করতে গেলে পাইপ দিয়ে গ্যাস নির্গত হয়। জেলার মুরাদনগরের বাখরাবাদে চলমান রয়েছে দু’টি গ্যাস ফিল্ড। এখানে ৮টি কূপ থেকে নির্গত হচ্ছে গ্যাস। গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর ৬ কিলোমিটারের মধ্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে একাধিক ৪০ থেকে ৬০ ফুট গভীর খাদ।

বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)র তথ্য মতে, ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এই ক্ষেত্র দু’টিতে ৩০ থেকে ৩৫ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস রয়েছে। অর্থাৎ এখনও গ্যাসের যথেষ্ট চাপ বিদ্যমান। মুরাদনগর নিকটস্থ শ্রীকাইলে রয়েছে দু’টি গ্যাস ক্ষেত্র। জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ভূগর্ভে রয়েছে সিলিকা বালি। কুমিল্লার উত্তরাঞ্চল জুড়ে রয়েছে বিশেষ ধরনের আঠালো মাটি। মূল্যবান এই মাটি থেকে মৃৎশিল্প। রয়েছে ভূগর্ভস্থ পানি সম্পদ। এ পানি জেলার সেচ প্রকল্পগুলোকে সৃমদ্ধ করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব এলাকায় ব্যক্তিপর্যায়ে যেকোনো গভীর খননই ঝুঁকিপূর্ণ। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে মাগুরছড়া কিংবা ট্যাংরাটিলার মতো দুর্ঘটনা। বহুমাত্রিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কাতো রয়েছেই। কারণ, গভীর থেকে মাটি তুলে আনার ফলে ভূগর্ভে সৃষ্টি হচ্ছে পানি এবং বালিমাটির শূন্যতা। এতে পার্শ্ববর্তী ফসলি জমিও একএক করে ধসে পড়ছে। মাটির উর্বরা শক্তি বিনষ্ট হচ্ছে। ভূ-প্রকৃতিতে ফেলছে সুদূরপ্রসারি বহুমাত্রিক বিরূপ প্রভাব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স’র প্রফেসর ড. বদরুল ইমাম বলেন, এত সাংঘাতিক ব্যাপার! স্থানীয় প্রশাসন এসব দেখে না? এতে তো কৃষি জমিগুলোতো পুকুর হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে মারাত্মক হুমকি ডেকে আনছে। যেমন প্রাকৃতিকভাবে ক্ষতিকর তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিকর। সামাজিক ক্ষতিকর প্রভাব তো আছে। কিভাবে এমনটি ঘটছে? এটিকে তো ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ হিসেবে দেখা উচিত।



 

Show all comments
  • Tokai Jackson ৩১ মে, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
    যার জায়গা সে পুকুর কাটছে
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Saiful ৩১ মে, ২০২১, ১:২৪ এএম says : 0
    পুলিশ প্রশাসন এখন আর এসব দেখবেনা, কারণ পুলিশ জানে— নাম বললে চাকরি থাকবেনা॥ তাই আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে বসে আছে ॥
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon Sorkar ৩১ মে, ২০২১, ১:২৪ এএম says : 0
    প্রশাসন ও সরকার কি আঙুল চিবাচ্ছে! এগুলো তাদের নজরে পরে না ?
    Total Reply(0) Reply
  • Tahrima Islam ৩১ মে, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
    জল, স্থল বাদ যায়না কোনো কিছুই
    Total Reply(0) Reply
  • Shariful Islam ৩১ মে, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
    শুধু মাটি নয়,জানিনা কবে পুরো দেশটায় চুরি হয়|
    Total Reply(0) Reply
  • ফাতেমা জাহান লুবনা ৩১ মে, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
    যে অন্যের জমি অন্যায় ভাবে ভোগ করবে কিয়ামতের দিন সে জমির সাত স্তবক পরিমাণ মাটি তার বুকের উপর নিয়ে সে উঠবে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Monir Munna ৩১ মে, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
    Bad so sad.
    Total Reply(0) Reply
  • Nusrat Lipy Akter ৩১ মে, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
    কবে বন্ধ হবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • দেলোয়ার ৩১ মে, ২০২১, ৪:২৬ এএম says : 0
    এ ব্যবসার সাথে স্হানীয় প্রভাবসালিরা জরিত থাকে বিধায় সাধারণ মানুষের মাথায় হাত দিয়ে নির্বাক বসে থাকা ছারা উপায় নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • শেখ রাসেল ৩১ মে, ২০২১, ৭:২১ এএম says : 0
    কুমিল্লার মেঘনা, হোমনা, তিতাস, দেবীদ্বার এলাকায়ও চলছে একই পদ্ধতিতে মাটি লুণ্ঠন। এখানে স্থানে স্থানে রয়েছে ভূগর্ভস্থ মাটি লুণ্ঠনের গভীর ক্ষত।
    Total Reply(0) Reply
  • মনিরুজ্জামান ৩১ মে, ২০২১, ৭:২২ এএম says : 0
    স্থানীয় প্রশাসন এসব দেখে না? এতে তো কৃষি জমিগুলোতো পুকুর হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে মারাত্মক হুমকি ডেকে আনছে।
    Total Reply(0) Reply
  • তফসির আলম ৩১ মে, ২০২১, ৭:২৩ এএম says : 0
    ‘নিজের জমি নিজে কাটা’র যুক্তি দেখিয়ে অনেকে বিষয়টিকে ‘অপরাধ’ নয়-মর্মে যুক্তি দেন স্থানীয় রাজনীতিকের প্রশ্রয়ে থাকা শক্তিশালী সিন্ডিকেট। কিন্তু আড়ালে প্রাকৃতিক রাষ্ট্রীয় এ সম্পদ বিক্রি করে ব্যক্তিগতভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
    Total Reply(0) Reply
  • ব্যারিস্টার সুমিত্রা চৌধুরী ৩১ মে, ২০২১, ৭:২৪ এএম says : 0
    নিউজটি করার জন্য দৈনিক ইনকিলাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • Dadhack ৩১ মে, ২০২১, ১২:৪৬ পিএম says : 0
    If our country rule by Quran then no body dare to commit any crime, but ............................
    Total Reply(0) Reply
  • Monir ৩১ মে, ২০২১, ৪:২৬ পিএম says : 0
    চাটার দল, চেটেই যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভূগর্ভস্থ মাটি লুট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ