Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বর্ষার আগেই ভাঙন তান্ডব

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

কয়েকদিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বৃদ্ধি পেয়েছে নদ-নদীর পানি। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদীগুলো রাক্ষসী রুপ নিয়েছে। ফলে বর্ষা আসার আগেই বিভিন্ন জেলার নদী তীরবর্তী এলাকা গুলোতে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। যমুনা, তিস্তা, বিষখালী নদীর ভাঙনে নিজেদের শেষ সম্বল টুকু হারাচ্ছেন নদী তীরের অসহায় মানুষজন। সরানোর সময় নেই, চোখের সামনেই ভেসে যাচ্ছে বাড়িঘর, তছনছ হচ্ছে সাজানো সংসার। চোখের জলে ভাসছে সম্বল হারা মানুষের বুক। পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা স্থানীয় প্রশাসন শুধু অযুহাত আর আশ্বাসেই তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদন :

ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান : ঝালকাঠির বিষখালী নদীর বেড়ে যাওয়া পানির তোড়ে সদর উপজেলার ভাটারাকান্দা এলাকায় কবি জীবনানন্দ দাশ সড়কের তিনশ’ মিটার, পাঁচটি বসতঘর ও শতাধিক গাছপালাসহ এক একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। গত ২৭ মে রাত থেকে এ ভাঙন শুরু হয়ে এখনো চলছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন।
জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে চার-পাঁচ ফুট পানি বাড়ায় মানুষ যখন আতঙ্কিত, তখন হঠাৎ করেই ঝালকাঠি সদর উপজেলার ভাটারাকান্দা এলাকায় দেখা দেয় আকস্মিক নদীভাঙন। ২৭ মে রাতে কবি জীবনানন্দ দাশ সড়কের তিনশ’ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে চলে যায়। এরপর থেকে নদীতীরের মো. হারুন খান, হেলাল হাওলাদার, আলি আকবর, হায়দার হাওলাদরে বাড়ির গাছপালাসহ ৫টি বসতঘর মালামালসহ বিষখালীতে বিলীন হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন ইয়াসের পূর্বাভাসে অন্যত্র নিরাপদে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। এদিকে কবি জীবনানন্দ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয় চরকাঠি, চরভাটারাকান্দা, ভাটারাকান্দা, সাচিলাপুর হাইলাকাঠিসহ পাঁচটি গ্রামের তিন হাজার মানুষের মূলসড়কে বের হওয়ায় পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচলও। ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও নদী তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বিষখালী নদী তীরের চরভাটারাকান্দা গ্রামের মো. হারুন খান বলেন, নদীর তীরে আমার ঘর ছিল, যা ভেঙে গেছে। এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে আমার থাকার মতো কোন স্থান নেই। নদীর মধ্যে শুধু সুপাড়ি গাছটিই চেনা যায়, এখানে যে আমার ঘর ছিল তার কোন চিহ্নই নেই। পুরোটাই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গাবখান-ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাকির হোসেন বলেন, নদী তীরে কবি জীবনানন্দ দাশের স্মরণে সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে। এটি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙা অংশে বাঁধ দিয়ে সড়কটি সংস্কার করার দাবি জানাচ্ছি। ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, নদীভাঙন রোধে ৬৯৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে শিগগিরই ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে। বিশেষ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চরভাটারাকান্দা এলাকার কাজটি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। ইউনিয়ন গুলো হল জালালপুর, খুকনি, কৈজুরি, সোনাতনী ও গালা ইউনিয়ন। এ সব ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের শত শত বাড়িঘর ও ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যেই ১৫টি বাড়িঘর, ৩০ বিঘা ফসলি জমি ও অর্ধশত গাছপালা যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া অসংখ্য বাড়িঘর ও ফসলি জমি বিলীন হওয়ার পথে।
এ বিষয়ে সোনাতনী ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান, খুকনি ইউপি চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁদ, জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ ও গালা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার বলা হলেও তারা সময় মত ব্যবস্থা না নেয়ায় এ বছরও বর্ষা মৌসুম শুরু না হতেই ভাঙন শুরু হয়েছে। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো: শামসুজ্জোহা বলেন, অচিরেই ভাঙন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধে স্থানীয় বাঁধ ও তীরসংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এ সমস্যা আর থাকবে না। একনেকে প্রকল্পটি পাশ হলেই কাজ শুরু করা হবে।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান : পরিকল্পনার অভাব আর সময় মতো কাজ না করায় ভাঙনের তীব্রতা, সব মিলিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী। জানা গেছে, পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে কুড়িগ্রামের চিলমারীর সীমান্তবর্তী সুন্দরগঞ্জ কাশিম বাজার এলাকায় তিস্তার থাবায় বাড়িঘর জমি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে মানুষ। কুড়িগ্রামের চিলমারী, উলিপুর ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জকে রেখেছে বন্যা ও ভাঙনের হুমকির মুখে। ভাঙনের তীব্রতায় গত কয়েকদিনে শতশত বাড়িঘর ও শতশত একর জমি ইতি মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে তিস্তার পেটে। ভাঙনের তীব্রতায় মানুষজন বাড়িঘরও সরিয়ে নিতে সময় পাচ্ছে না। ভাঙনের তীব্রতা বাড়লেও যেন ঘুমিয়ে আছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ দায়িত্বরতরা। ভাঙন প্রতিরোধে নেই কোন উদ্যোগ, অসহায় ভাঙনের শিকার পরিবার গুলোর ভাগ্যে মেলেনি কোন সহায়তা। ভাঙনের শিকার আমিনুল, নারগিছ, জেলেখাসহ অনেকে বলেন, নদী ভাঙনে আমরা সব হারিয়েছি এখন থাকার বা যাওয়াও জায়গা নেই বড় বিপদে আছি তবুও কেউ খবর নেয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাঙন তান্ডব
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ