Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার হঠাৎ কেন রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিল

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০২১, ১০:২৯ এএম

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তরফ থেকে অনেক চাপ সত্ত্বেও মিয়ানমারের যে রাজনীতিকরা রোহিঙ্গাদের অধিকারের বিন্দুমাত্র স্বীকৃতি দিতে রাজী হয়নি, হঠাৎ করে তাদের অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন বেশ বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।

সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো অং সান সুচির দল এনএলডি-সহ বিরোধী দলগুলোর একটি জাতীয় মোর্চা থেকে গত বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে এই নাটকীয় ঘোষণাটি দেয়া হয়। এতে রোহিঙ্গাদের অধিকারের স্বীকৃতি শুধু নয়, ১৯৮২ সালের যে নাগরিকত্ব আইনের বলে তাদের অধিকার হরণ করা হয়, সেটি বিলোপের অঙ্গীকারও রয়েছে।

গণতন্ত্রের দাবিতে রক্তাক্ত সংগ্রামে লিপ্ত মিয়ানমারের বিরোধী দলগুলো এখন গড়ে তুলেছে একটি সমান্তরাল সরকার, যেটি ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা এনইউজি নামে পরিচিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভের জন্য এই এনইউজি এখন সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ঘোষণাটি দেয়া হয়েছে এই এনইউজির তরফ থেকে। ঘোষণাটিকে বেশ ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার বিভিন্ন সংগঠনও এটিকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে তাদের অবস্থান কতটা আন্তরিক অথবা রোহিঙ্গাদের অধিকারের পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি এই ঘোষণায় আছে কিনা- তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে।

এনইউজি'র ঘোষণায় কী আছে

গত ৩রা জুন এনইউজি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে যে নীতি ঘোষণা করেছে, তাতে বেশ কয়েকটি অঙ্গীকার করেছে তারা।

প্রথমত, এতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে রোহিঙ্গারা যে হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তার স্বীকৃতির পাশাপাশি যারা এর জন্য দায়ী, তাদের বিচারের কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের বিচারের এখতিয়ার দেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর অঙ্গীকার করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত: এতে ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন/বিলোপের অঙ্গীকার করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব হরণের ক্ষেত্রে এই আইনটিকে ব্যবহার করে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষ।

তৃতীয়ত: এই ঘোষণায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে করা চুক্তি মেনে চলার অঙ্গীকার আছে।

২০১৭ সালে সর্বশেষ রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট শুরু হওয়ার পর এতটা খোলাখুলি মিয়ানমারের রাজনীতিকদের এভাবে রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়নি।

এই ঘোষণার গুরুত্ব কতটা?

"এটি আসলে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকারের তরফ হতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে 'রোহিঙ্গা' পরিচয়ের স্বীকৃতি," বলছেন মিয়ানমার বিষয়ক বিশ্লেষক ল্যারি জ্যাগান।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই ঘোষণার মাধ্যমে এনইউজি স্পষ্টতই মিয়ানমারের সামরিক সরকারের চাইতে একটা পরিষ্কার ভিন্ন অবস্থান নিতে চেয়েছে। কারণ সামরিক বাহিনী এখনো পর্যন্ত বলে যাচ্ছে 'রোহিঙ্গা' বলে কিছু নেই।

তিনি বলেন, "মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী দলগুলোর অবস্থানে যে একটা পরিবর্তন ঘটেছে এটা তারই ইঙ্গিত। কারণ আমরা দেখেছি অং সান সুচি এবং তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি এর আগে 'রোহিঙ্গা' কথাটির উল্লেখ পর্যন্ত এড়িয়ে গেছে, তারা এদেরকে 'আরাকানি মুসলিম' বলে বর্ণনা করতো।

ল্যারি জ্যাগানের মতে, এই ঘোষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক দুটি। প্রথমত, ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বিলোপের অঙ্গীকার। কারণ এই আইনটাই অনেক সমস্যার মূলে।

আর দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের স্বীকৃতি এবং তাদের ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার।

এনইউজি'র এই ঘোষণা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে সক্রিয় গ্রুপগুলোর মধ্যেও আশাবাদ তৈরি করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনও একে স্বাগত জানিয়েছে।

তবে রোহিঙ্গা নেতাদের অনেকে মনে করেন, এই ঘোষণায় কিছু অস্পষ্টতা এখনো রয়ে গেছে। বিবিসি বাংলা



 

Show all comments
  • Dr.Md Abdur Rahman ৬ জুন, ২০২১, ১১:১৪ এএম says : 0
    It may be a False hope only !!! Be careful.
    Total Reply(0) Reply
  • Nasir Khan ৬ জুন, ২০২১, ১১:৪৮ এএম says : 0
    যে তরফ থেকেই বলা হোক কেন, এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
    Total Reply(0) Reply
  • S M Kutub Uddin ৬ জুন, ২০২১, ১১:৪৯ এএম says : 0
    গণতন্ত্রের জন্য তারা জীবন দিচ্ছে। আর আধুনিক বিশ্বে যে দেশে জন্ম নিবে সে সেদেশের নাগরিক হবে। তাই নাগরিক অধিকার কি তা জানার জন্য শিক্ষিত হাওয়া জরুরি। রোহিঙ্গারা সবাই মিয়ানমারে জন্ম ,তাই স্বাভাবিক ভাবেই তারা মিয়ানমারের নাগরিক। মিয়ানমারের শিক্ষিত জনগণ এটা ভালো করে জানে। তাই তারা স্বীকৃতি দিচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmed Raj ৬ জুন, ২০২১, ১১:৫০ এএম says : 0
    এসব আন্তর্জাতিক সাপোর্ট পাওয়ার কৌশল।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Atiqur Rahman Mukul ৬ জুন, ২০২১, ১১:৫০ এএম says : 0
    এর ফলে তারা আন্তর্জাতিক সাপোর্ট পেতে পারে এবং সেনাবাহিনীর উপর চাপ বাড়তে পারে। শেষমেশ এই একটা ইস্যুতেই তারা ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে। তবে যাইহোক আমরা চাই যেকোনো ভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হোক এবং তারা তাদের নাগরিকত্ব ফিরে পাক।
    Total Reply(0) Reply
  • Elias Ali ৬ জুন, ২০২১, ১১:৫১ এএম says : 0
    They are trying draw attention of international community, trying to use Rohinga as a tram card.
    Total Reply(0) Reply
  • Md Tarek Ali ৬ জুন, ২০২১, ১১:৫৩ এএম says : 0
    রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে গিয়ে সুস্থ জীবনযাপন করুক তাতে বাংলাদেশের জন্য বেশি মঙ্গল,,,কিন্তু রোহিঙ্গারা আদৌও কি মিয়ানমারে ফিরতে পারবে?
    Total Reply(0) Reply
  • সূর্য ৬ জুন, ২০২১, ১১:৫৩ এএম says : 0
    যতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা নিজের দেশে সম্মানের সাথে যেতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত এই কথা বিশ্বাস করা যাবে না সুতরাং আগে প্রমাণ করতে হবে মিয়ানমার কতৃপক্ষের যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বৈধ নাগরিক।
    Total Reply(0) Reply
  • Yamin Khan ৬ জুন, ২০২১, ১১:৫৫ এএম says : 0
    বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতামুক্ত মানবিক বিশ্ব প্রতিষ্ঠিত হলে রোহিঙ্গাদের প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Adil ৬ জুন, ২০২১, ১১:৫৫ এএম says : 0
    শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Sarwar ৬ জুন, ২০২১, ১১:৫৬ এএম says : 0
    অনেক কারন। ১। চীনের বিনিয়োগ! ২। রোহিঙ্গা আন্তর্জাতিক ইসু। ৩। আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়। ৪। সেনা হঠানো।
    Total Reply(0) Reply
  • Md basit ৬ জুন, ২০২১, ১:৫৪ পিএম says : 0
    কারন সুস্পষ্ট। বিশাল রোহিঙ্গাদের আন্দোলন এ উৎসাহিত করা।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ+দুলাল+মিয়া ৬ জুন, ২০২১, ২:১৯ পিএম says : 0
    বর্তমানে আমাদের দেশে কি সরকার,জাতীয় ঐকমত্যের সরকার,না কি জাতীয় একদলীয় শাসন তন্ত্রের সরকার,এখন বর্তমানে আমাদের দেশের যে পরিস্থিতি তাতে মনে হয় জাতীয় জোর তন্ত্র সরকার,মনে হয় এই জাতীয় জোর তন্ত্র,মায়েনমারের সেনা শাসন থেকে ও অতিরিক্ত,সেনা শাসন ও জনগণ মুক্তি পেতে পারে,কিন্তু এই জাতীয় জোর তন্ত্র শাসন থেকে মনে হয় মুক্তি পাওয়া যাবে না,
    Total Reply(0) Reply
  • bashar ৬ জুন, ২০২১, ২:৪৯ পিএম says : 0
    শুভ বুদ্ধির উদয় হোক............
    Total Reply(0) Reply
  • Mir Ahmed Farid ৬ জুন, ২০২১, ৩:৪৬ পিএম says : 0
    এনইউজি যদি আন্তর্জাতিক ফোরামে বসে রোহিঙ্গাা নেতাদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করতে রাজী হয় তবেই বুঝা যাবে তারা রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তরিক। নয়তো ডিগবাজী দিতে মোটেও দেরী করবেনা ওরা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ