Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকা ও চট্টগ্রামে পানিবদ্ধতা নিরসন হবে কবে?

| প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০২১, ১২:০৩ এএম

গত রোববার বেলা ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিপাতে উঁচু টিলা ছাড়া শহরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। হাঁটু থেকে বুকসমান পর্যন্ত পানিতে বন্দী হয়ে পড়ে গোটা শহর। ক’দিন আগে চট্টগ্রামের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, বর্ষায় গলাসমান পানিতে ডুববে চট্টগ্রাম। বর্ষা আসার আগেই তার এ আশঙ্কা সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে। ওইদিন অবিরাম বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, হাসপাতাল, বাজারহাট, দোকানপাট ইত্যাদি। অশেষ দুর্ভোগ ও ক্ষতির শিকার হয় মানুষ। বর্ষায় ভারি বৃষ্টি ও জোয়ারে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার অবধি নেই কারো। এর আগে ঘণ্টা দুয়েকের মাঝারি বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকাও তলিয়ে যায়। পানি ও যানজটে মানুষের দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার শেষ থাকে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য বড় শহরের বর্ষায় ডুবে যাওয়া এবং অনির্দিষ্ট সময় পানিবন্দী হয়ে থাকা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব শহরে যথাযথ পানি নিকাশ ব্যবস্থা যদি কার্যকর থাকতো তাহলে এ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারতো না। এক সময় ঢাকা ও চট্টগ্রামে যতই বৃষ্টি হোক, কিছু সুনির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া কোথাও পানিবদ্ধতা দেখা দিতো না। এখন হয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো। এ দু’শহরের পরিধি যাচ্ছেতাইভাবে বেড়েছে, কিন্তু ড্রেনেজ ব্যবস্থা সেভাবে গড়ে ওঠেনি বা সম্প্রসারিত হয়নি। পুরানো ড্রেনের কার্যকারিতা কমেছে, ময়লা-আবর্জনা জমে তা পানি নিকাশের সক্ষমতা হারিয়েছে। নতুন ড্রেনের অবস্থাও তথৈবচ। সাধারণতভাবে ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও আবর্জনামুক্ত রাখা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হলেও দায়িত্বে অবহেলার কারণে সেগুলো ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ বা ভরাট হয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট উপচে পানি বাসাবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনার মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা নয়, দিনের পর দিন পর্যন্ত আটকে থাকে। তথ্যাভিজ্ঞ ব্যক্তিদের অজানা নেই, ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রচুর সংখ্যক খাল ও জলাভূমি ছিল। পানি নিকাশের প্রাকৃতিক ব্যবস্থা হিসেবে এগুলো খুবই কার্যকর ছিল। এখন খালগুলোর বেশিরভাগই দখল হয়ে গেছে। জলাভূমি নেই বললেই চলে। খাল-জলাভূমির যতটুকুর অস্তিত্ব এখনো টিকে আছে, তাও ময়লা-আর্বজনায় পূর্ণ। পানি নিকাশ বা সরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে পানিবদ্ধতার অবসান ও পানি নিকাশ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রতি বছর বিপুল অংকের অর্থ বরাদ্দ করা হয়। এ সম্পর্কিত বিভিন্ন রকম প্রকল্পও নেয়া হয়েছে। কিন্তু পানিবদ্ধতা নিরসিত হয়নি, বরং বেড়েছে এবং বাড়ছে। চট্টগ্রামে পানিবদ্ধতা নিরসনে গত ১৪ বছরে ৩২৪ কোটি টাকা খরচ হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরাদ্দকৃত অর্থের অধিকাংশ খরচ হয়েছে ‘চট্টগ্রামের দুঃখ’ বলে অভিহিত চাকতাই খালের পেছনে। খাল সংস্কার ও উন্নয়নে এ অর্থ ব্যায়িত হয়েছে। খালের বেশিরভাগ অংশের তলদেশ পাকা করা হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যেই খাল ময়লা-আবর্জনায় ভরাট ও অকেজো হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চাকতাইসহ ’৬৮ সালে চিহ্নিত ৭১টি খাল পুনরুদ্ধার ও সচল করা সম্ভব হলে চট্টগ্রাম আর পানিবদ্ধতার শিকার হবে না। এক সময় ঢাকায় ছোট-বড় অনেক খাল ছিল। এর অংশ বিশেষের অস্তিত্ব নেই, দখল হয়ে গেছে। অবশিষ্টগুলো হাজা-মজা ও আবর্জনার ভাগাড় হয়ে আছে। এগুলো পুনরুদ্ধার এবং সংস্কার করা হলে ঢাকার পানিজটের অবসান ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, ঢাকার খাল উদ্ধারের তাকিদ অনেকদিন ধরে উচ্চারিত হলেও এক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতো কোনো অগ্রগতি নেই। ইতোমধ্যে খালের কর্তৃত্ব ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি কর্পোরেশনের হাতে গেছে। খাল উদ্ধার ও পানিবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্পে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ব্যয় হলেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। দুই সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন এলাকায় খাল উদ্ধারের যে উদ্যোগ নিয়েছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, বাস্তবে তার কোনো অগ্রগতি নেই। সাধারণ মানুষ একে ‘লোক দেখানো’ বলে মনে করছে। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার আশপাশের নদীগুলো দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। এদের পুনরুজীবিত ও ¯্রােতময় করা, পানি দূষণমুক্ত ও স্বচ্ছ করার কথা অনেক দিন ধরে বলা হচ্ছে। এ নিয়ে নাগরিক সমাজের আন্দোলনও গড়ে উঠেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত লক্ষ্য অর্জনে ন্যূনতম সাফল্যও পরিলক্ষিত হয়নি। মাঝখান থেকে বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় হয়েছে, যা আসলে হয়েছে অপচয়।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আরো আগে থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পানিবদ্ধতায় অবসান, পানি নিকাশ ব্যবস্থার উন্নয়ন, খাল উদ্ধার, নদীগুলোর দখল ও দূষণ মুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, প্রকল্পও নেয়া হচ্ছে, বাস্তবায়নও করা হচ্ছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। এটা খুবই বিস্ময়কর যে, এ দু’শহরে আধুনিক পানি নিকাশ ব্যবস্থা আজ অবধি গড়ে তোলা যায়নি। গত ১০ বছরে চট্টগ্রামে পানিবদ্ধতার কারণে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য ক্ষেত্রেও যে কম ক্ষতি হয়নি, সেটা সহজেই অনুমেয়। ঢাকাতেও হিসাবে নিলে ক্ষতির পরিমাণ কম হওয়ার কথা নয়। প্রশ্ন ওঠতে পারে, আর কতদিন পানিবদ্ধতার সমস্যায় ভুগতে হবে? কতদিন মানুষকে ক্ষতি-খেসারত গুনতে হবে? পানিবদ্ধতা নিরসনের নামে জনগণের ট্যাক্সের টাকার আর কত অপচয় হবে? বর্তমান সরকার অনেক মেগা প্রকল্প হাতে নিয়ে খ্যাত হয়েছে। অথচ, ঢাকা ও চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের সমস্যাটির কোনো সমাধান করতে পারেনি। পানিবদ্ধতার অবসান, খাল-জলাভূমি উদ্ধার, নদী দখল-দূষণ রোধ ইত্যাদি কোনো কঠিন কাজ নয়? দেশে পদ্মাসেতু হতে পারে, সুড়ঙ্গ রেল হতে পারে আর ঢাকা-চট্টগ্রামের পানিবদ্ধতা সমস্যার সুরাহা হতে পারে না? অবশ্যই পারে, যদি সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়। আমরা সরকারের দৃঢ়প্রতিজ্ঞাই প্রত্যাশা করি। আমরা চাই দেশের দুই প্রধান নগর বসবাসের জন্য সর্বোত্তম স্থানে পরিণত হোক, সুন্দর, মনোরম ও আকর্ষণীয় হোক। এক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও কাজে লাগানো যেতে পারে। উদাহরণ হিসাবে, খাল দখলমুক্ত করে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছে লিজ দেয়া যায়। তারা খালের দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে। বিনিময়ে মাছ চাষ, নৌভ্রমণ ইত্যাদি থেকে আয় করতে পারবে। এতে খাল আবর্জনা মুক্ত, দূষণ মুক্ত ও সংরক্ষিত থাকবে এবং এজন্য সরকারের কোনো অর্থব্যয় করতে হবে না।



 

Show all comments
  • Dadhack ৮ জুন, ২০২১, ১:৩৫ পিএম says : 0
    When we start to rule our country by Qur'an>>>>
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন