Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কোরআনের আয়াতের মর্যাদা যেভাবে ভুলুন্ঠিত

মুন্সি আব্দুল কাদির | প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

আল কোরআন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য একটি অনুগ্রহ। সূরা দুখান আয়াত- ৬।

আর আমি এই কিতাবকে সৌভাগ্যের চাবিকাঠি রূপে অবতীর্ণ করেছি। সূরা আনয়াম আয়াত- ১৫৫।
আল কোরআন মানব জাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েত, সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। সূরা বাকারা।

আল কোরআন বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালা দেওয়া চিঠি, ফরমান, বান্দার সাথে আল্লাহ তায়ালার কথোপকথন। দুনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ, দামী কিতাবের নাম আল কোরআন। কোরআন নিষ্পেশিত মানুষদের সম্মানিত মানুষে পরিণত করে। অবহেলিত মানুষকে পৃথিবীর শাষক বানিয়ে দেয়। কোরআনের ধারকগন কোরআনকে ছুড়ে ফেললে আল্লাহ তায়লা তাদেরকে চরম জিল্লতিতে ফেলে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর হেরা গুনায় সর্ব প্রথম কোরআনের সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোপনে পরে প্রকাশ্যে দিনের দাওয়াত দিতে থাকেন। জুলুম নির্যাতন চলতে থাকে, দাওয়াত চলতে থাকে, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে কোরআন নাযিল হতে থাকে। ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক কল্যাণের দরজার মুখ খুলে দেয়। এই দরজায় চলতে চলতে পুরো পৃথিবী মুসলমানদের পায়ের তলায় লুটিয়ে পড়ে। মুসলমানরা তাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে জান্নাতের পথে অবিরাম চলতে থাকে। জান্নাতের অনাবিল শান্তি তাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে ডাকতে থাকে। যারা কোরআনের আহবানে সারা দিয়েছে তারা সামনে অগ্রসর হতে থাকে। অপরদিকে দুনিয়া তাদেররে বিভিন্ন মোহে আটকানোর চেষ্টা করতে থাকে। যারা দুনিয়ার মোহ ছেড়ে সামনে অগ্রসর হয়েছে, তারাই সফল হয়েছে। আর যারা দুনিয়ার মায়ায় আটকে গেছে। দুনিয়া তাদেরকে পেয়ে বসেছে। তারা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। যারা দুনিয়া চেয়েছে, তারা হয়তো দুনিয়া পেয়েছে, হয়তো পায় নি। আর যারা দুনিয়া চায়নি, তারা দুনিয়াও পেয়েছে, আখেরাত ও পেয়েছে।

আখেরাত মুখী যাদের জীবন তাদের, দিনে চলার পথ কোরআন, রাতে চোখের নিবিড়তা কোরআন, তাদের সবচেয়ে প্রিয় কোরআন, তাদের মাওলার রহমের পরশ কোরআন, তাদের জীবনের পাথেয় কোরআন, পরকালের শাফায়াতের তরণী কোরআন। তাদের কাছে কোরআনের চেয়ে আর সম্মানিত অন্য কোন কিছু ছিল না, নেই, থাকবে না। আমারা দেখি ওমর রাঃ এর দিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তেকালের পর মানুষ যখন বলাবলি করছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন, তখন ওমর রাঃ তরবারী নিয়ে বের হয়ে গেলেন, আর বলতে লাগলেন, কেউ যদি বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন, তাহলে তাকে আমি হত্যা করব। এরূপ অবস্থায় আবু বকর রাঃ সূরা আলে ইমরানের ১৪৪ নং আয়াত পাঠ করে ভাষন দেন, যে মোহাম্মদ রাসুল ছাড়া আর অন্য কিছু নন, তার আগেও বহু রাসুল গত হয়েছেন...। এই আয়াত পড়ার সাথে সাথে ওমর রাঃ শীতল হয়ে যান, স্বাভাবিক হয়ে যান। এই ছিল তাদের উপর কোরআনের আছর।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি কোরআনকে যদি কোন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তাহলে তুমি দেখতে পেতে আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে পাহাড় বসে যাচ্ছে এবং চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। সূরা হাশর আয়াত ২১।
আমি কোরআনকে আকাশ, জমিন ও পাহাড়ের কাছে ন্যস্ত করতে চেয়েছিলাম। তারা তা বহন করতে অস্বীকার করে এবং ভয় করেছিল, অপর দিকে মানুষ তা গ্রহন করে। নিশ্চয়ই সে অত্যাচারী ও অজ্ঞ। সূরা আহযাব আয়াত ৭২। এতো ভারী আর এতো দামী কোরআন মানুষ গ্রহন করে নিজের উপর জুলুম করেছে ঠিকই। কিন্তু মাওলার সবচেয়ে প্রিয় হওয়ার রাস্তা পেয়েছে। যে গোলাম যত বেশী পরিশ্রমী এবং মালিকের বাধ্য তাকেই মালিক বেশি পছন্দ করে। তার উপর আস্থা রাখে। আর গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো তার উপরই অর্পণ করে। কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে মালিক তাকেই তার প্রতিনিধি নিযুক্ত করে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী যুগে যুগে মাওলার প্রিয়গন এই কোরআনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সকলেই চেষ্টা গেছেন, করে যাচ্ছেন। যারাই কোরআনকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকবে তারাই সত্যিকার অর্থে আল্লাহর প্রিয়।

কোরআন এমন এক কিতাব যাকে পড়লে, প্রতি অক্ষরে ১০ টি করে সওয়াব হয়। যেমন বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। পড়তে খুব সহজেই পড়া যায়। কিন্তু পড়ার সাথে সাথে আমল নামায় ১৯০ টি সওয়াব যোগ হয়ে যায়। যার কোন ব্যত্যয় ঘটে না।

কোরআন এমন এক কিতাব যাকে পবিত্রতা ছাড়া স্পর্শ করা যায় না। সূরা ওয়াকেয়াহ আয়াত ৭৯। যার মর্যাদা সকল কিছুর উর্ধ্বে। যাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইমানদারদের চেষ্ট্ ামেহনত, ফিকির।

কোরআন এমন এক কিতাব যা শিক্ষাগ্রহন কারী ও শিক্ষাদানকারী উভয় ইমানদার সমাজে শ্রেষ্ঠ। এক বর্নণায় আছে, যে ফেরাউনের সিংহাসনের প্রধান দরজার কাঠে কোরআনুল একটি আয়াত বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম খোদাই করা ছিল। তাই আল্লাহ তায়ালা তাকে সিংহাসনের ভিতর গজব দিয়ে শেষ করে দেননি। তাকে রাজ প্রাসাধ থেকে বের করে নিয়ে নীল নদে পানিতে ডুবিয়ে শেষ করে দেন। এই কোরআন নিয়ে চিন্তা করে হাজারো লক্ষ ইমানদার আল্লাহর সান্নিধ্য পেয়েছে। কোরআনের প্রতিটি আয়াত মহান মাওলার কথা, বান্দার প্রতি মহান মাওলার চিঠি, ফরমান। কোরআন মানুষকে হেদায়েত দান করে। আবার সীমা লংঘন কারীদের পথভ্রষ্ট করে দেয়। কোরআনেেক প্রতিটি ইমানদার বুকে আর দেমাগে ধারন করে। যত দিন এই কোরআন মুসলমানদের বুকে আর দেমাগে ছিল, তত দিন মুসলমানগন পুরো পৃথিবীর বুকে সৌর্যবির্য আর আল্লাহর প্রেমে ডুবে গিয়েছিল। তামাম পৃথিবী মুসলমানদের পায়ের তলায় লুটোপুটি খেয়েছে। আর যখন ই কোরআন বুক আর দেমাগ থেকে মাচায় অথবা কোথাও কোথাও পায়ে চলে গেছে। অর্থাৎ কোরআনের জিল্লতি দেওয়া শুরু করেছি। তখন থেকে মুসলমানদের অবস্থাও চরম অবস্থায় পৌছেছে। আস্তে আস্তে পৃথিবীর সব তােেদর হাতছাড়াা হয়ে গিয়েছে। আাজ পৃথিবীর যত খনিজ সম্পদ রয়েছে, তার বেশীর ভাগই মুুসলমানদের পায়ের তলায়, কিন্তু মুসলমানগন কয়েকটি ডলার ছাড়া এই স¤পদ আর অন্য কোন কাজে ব্যবহার করতে পারছে না। অমুুসলিম বিশ্ব্ই এখাান থেকে সব ফায়দা নিচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে অনেক ইসলামী দল, ইসলামী প্রতিষ্ঠান আছে। (চলবে)
লেখক : গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ।



 

Show all comments
  • আবদুর রাফি ১২ জুন, ২০২১, ৯:০৭ এএম says : 0
    আরব বিশ্বকে ডলারে তেল বিক্রি বন্ধ করে স্বর্ণের বিনিময়ে তেল বিক্রি করতে হবে। আরবে মুসলমানদের টাকা চলতে পারে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরআন

২৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ