Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কেসিসি’র হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা

প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) তালিকাভুক্ত দেড়শ’ প্রতিষ্ঠানে হালনাগাদ বকেয়া রয়েছে অন্তত ৪৭ কোটি টাকার হোল্ডিং ট্যাক্স। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপসহ ৮টি প্রধান কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের বকেয়া কর আদায় হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। কেসিসি’র তালিকার মধ্যে খোঁদ সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১১৫টি। এগুলোর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউটর কোম্পানি (ওজোপাডিকো), জুট মিল, ক্ষমতাসীন দলের দখলে থাকা ক্লাব, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা উল্লেখযোগ্য।
কেসিসির দাবি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনীহা আর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপসহ প্রধানত ৮টি কারণেই এ এই পরিমাণ ট্যাক্স অনাদায়ী রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই যেগুলোর হোল্ডিং ট্যাক্স অপরিশোধিত। এছাড়া মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব, দেউলিয়া ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া ট্যাক্স আদায় না হওয়ার অন্যতম কারণ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চলতি মাস পর্যন্ত এ টাকা আদায় করতে পারেনি কেসিসি। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা চেম্বার অব কমার্স, এলজিইডি, রেলওয়ের বকেয়া ট্যাক্স আদায় হচ্ছে না দীর্ঘদিন।
কেসিসির সূত্র জানায়, রেলওয়ে খুলনা অঞ্চলের কাছে হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ বকেয়া ১৪ কোটি ৫০ লাখ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ১৮ কোটি, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলে ২ কোটি ৫৬ লাখ, বিএনএস তিতুমীরে (নৌবাহিনী) ১ কোটি ২৬ লাখ, বেসরকারি সোনালী জুট মিলে ৮৫ লাখ, অ্যাযাক্স জুট মিলে ৪৫ লাখ, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে ৩৬ লাখ, হেলাল জুট প্রেসে ৫৪ লাখ, দৌলতপুর জুট মিলে ৩০ লাখ, গণপূর্ত-১ এবং গণপূর্ত-২-এর নিকট ৫৭ লাখ, নগরীর ১২২টি প্রাইমারি স্কুলে ১৬ লাখ, সরকারি বয়রা মহিলা কলেজে ১২ লাখ, সরকারি বিএল কলেজে ২২ লাখ, সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজে ৮ লাখ, আইনজীবী সমিতির ৪ লাখ ৫০ হাজার, বাংলাদেশ সি ফুডে ৬ লাখ, খুলনা চেম্বার অব কমার্সে ৮ লাখ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে (এলজিইডি) ২ লাখ টাকা, মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স ৮ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে বিপুল অংকের টাকা বকেয়া রয়েছে। উদয়ন, আবাহনী, মোহামেডান, টাউন ক্লাব, ইয়ং বয়েজ ক্লাবসহ সব ক্লাবে বড় অংকের ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে। এ সব ক্লাবের ট্যাক্স আদায় নিয়ে কোন মেয়রই উদ্যোগ নেননি। যার কারণে নগরীর মধ্যে থেকে কেসিসির আইন অমান্য করে হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া থেকে যাচ্ছে। তবে এবার এ সব ক্লাবে ট্যাক্স আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে ভারপ্রাপ্ত কালেকটর অব ট্যাক্সেস তপন কুমার নন্দী জানান। তিনি বলেন, প্লাটিনাম জুট মিলে ১৯৭৬ সালের ট্যাক্স এখনও বকেয়া।
ওই কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, বিএনএস-তিতুমীর কেসিসিকে জানিয়েছে তারা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত, তাই ট্যাক্স দেবে না। সরকারি এ সংস্থাটির ট্যাক্স কেসিসি কখনও পায়নি। নগরীর দৌলতপুরস্থ হেলাল জুট প্রেসে মালিকানা নিয়ে কোন্দল থাকায় ট্যাক্স আদায় হচ্ছে না অথচ তারা নিয়মিত বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশনকে ভাড়া দিয়ে আসছে। বাংলাদেশ সি ফুড দেউলিয়া ও কয়েকটি মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বকেয়া বাড়ছে।
কেসিসির কর আদায় শাখার ভারপ্রাপ্ত কালেকটর অব ট্যাক্সেস তপন কুমার নন্দী বলেন, ৮টি কারণে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হচ্ছে না। রাজনৈতিক প্রভাব, সরকারি প্রতিষ্ঠানে বাজেট বরাদ্দ কম, মিল কলকারখানা বন্ধ, কেডিএ’র সমন্বয়হীনতা, রেলওয়ের বাজেট না থাকা, মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব, দেউলিয়া হয়ে যাওয়া ও ক্লাবগুলোকে করের আওতায় না আনা। এসব কারণ মাথায় রেখে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে তার টিম তৎপর রয়েছে। তিনি বলেন, নিয়মিত যোগাযোগ ও সঠিক তদারকির মাধ্যমে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্স বিগত অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে চার কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। এ অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হয়েছে ২৩ কোটি ৫৮ হাজার টাকা। কিন্তু ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হয় ১৯ কোটি ৬ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে আরও বেশি বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কেসিসির প্রধান রাজস্ব অফিসার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা আরিফ নাজমূল হাসান জানান, তিতুমীর দীর্ঘদিন ধরে কেসিসিকে কোন ট্যাক্স দিচ্ছে না। একাধিকবার বলা সত্ত্বেও তারা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অধিনে আছে বলে জানায়। এ অজুহাতে তারা কেসিসিকে সকল টোল-ট্যাক্স দেয়া থেকে বিরত রয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের সাথে কথা হয়েছে। তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান।
তিনি বলেন, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)’র কেসিসিকে ট্যাক্স দেয়ার কোন বিধান নেই। এমনই কারণ দেখিয়ে তারা দীর্ঘদিনেও কোন ট্যাক্স না দিয়ে আসছেন। বিষয়টি সমাধানে স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হবে। তারপরও বিষয়টি সুরাহা না হলে কমিটির সুপারিশমালাসহ সিদ্ধান্ত স্থানীয় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে মালামাল ক্রোক এবং প্রতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রয়োজনে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হবে। সার্টিফিকেট মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিষয়টি সাধারণ সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে কার্যকর করা হবে বলে তিনি জানান। নিজস্ব ফান্ডের অভাবে উন্নয়ন কাজে ধীরগতি। সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া টাকা আদায় হলে উন্নয়নের গতি বাড়বে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় সময়মতো ট্যাক্স দিতে পারে না বলে তারা জানান। এছাড়া নগরীর ক্লাবগুলোর আয়ের উৎস নেই। তাই তারা ট্যাক্স দেয় না বলে জানান তিনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কেসিসি’র হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ