Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হত্যার দায়ে গ্রেফতার গৃহকর্তা

সিলেটে ট্রিপল মার্ডার আজ তোলা হবে আদালতে রিমান্ড চাইবে পুলিশ

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতো পারলো না দিনমজুর হিফজুর। সন্দেহের তীর তাকে বিদ্ধ করলো। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের দায় এখন তারই উপর। স্ত্রী ও অবুঝ দুই শিশু সন্তানকে হত্যার অভিযোগে অবশেষে গ্রেফতার হতে হয়েছে পাষণ্ড হিফজুর রহমান। গতকাল শনিবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
গত ১৬ জুন রাতে সিলেটের গোয়াইনঘারে ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণপাড়া গ্রামে ঘটেছিল নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। এক দিনমজুরের ঘরে তিন খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা জনপদে। শুরু থেকে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে সন্দেহের তীর ছিল আহত স্বামী হিফজুরের দিকে। হিফজুরকে গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে, সন্দেহ যে অমূলক ছিল না তার প্রমাণ করেছে পুলিশ। বিষয়টি প্রেসব্রিফিং করে জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ।

তিনি জানান, চিকিৎসাধীন হিফজুর রহমান আগের চাইতে সুস্থ আছেন। আজ চিকিৎসকরা ছাড়পত্র প্রদান করলে আদালতে তোলা হতে পারে তাকে। মামলার তদন্তের স্বার্থে হিফজুরকে রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানাবে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণপাড়া গ্রামে ঘরের ভেতর কুপিয়ে হত্যা করা হয় তিনজনকে।

নিহতরা হলেন- দিনমজুর হিফজুরের স্ত্রী আলিমা বেগম (৩০) ও তাদের দুই সন্তান মিজান (১০) এবং তানিশা (৩)। এছাড়া আহত হন হিফজুর রহমান। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এরপর থেকে হিফজুর পুলিশ প্রহরায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিলেন চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে তার আচরণ প্রথম থেকেই সন্দেহজনক বলে জানিয়েছিলো পুলিশ। ঘটনার পর পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলো সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এবং বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এখন পুলিশের সন্দেহ আহত হিফজুরের দিকেই।

হত্যাকাণ্ডের তদন্তে থাকা পুলিশের এক উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার মতে, হিফজুর রহমান প্রথম থেকেই আচরণ করছেন সন্দেহজনক। তিনি ঘরের ভেতরে অজ্ঞানের ভান করে পড়েছিলেন। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পর বোঝা যায় আঘাত গুরুতর ছিল না তার। হিফজুরকে সন্দেহের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাইরে থেকে কেউ হত্যার জন্য এলে সাথে করে অস্ত্র নিয়ে আসতো। তাদের ঘরের বটি দা দিয়েই খুন করতো না। বিরোধের কারণে খুনের ঘটনা ঘটলে প্রথমেই হিফুজরকে হত্যা করা হতো কিংবা স্ত্রী সন্তানদের প্রথমে হামলা করলেও হিফজুর তা প্রতিরোধের চেষ্টা করতেন। এতে স্বভাবতই সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হতেন তিনি। অথচ হিফজুরের শরীরের আঘাত একেবারেই সামান্য বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

হিফরের শরীরের কিছু জায়গার চামড়া ছিলে গেছে কেবল। এতে আমাদের ধারণা স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে ঘটনা অন্যখাতে প্রবাহিত করতে নিজেই নিজের হাত-পা ছিলে দেন তিনি। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সাধারণত ঘুমানোর আগে সবাই হাত পা ধুয়ে ঘুমাতে যান। হিফজুরের স্ত্রী সন্তানদের লাশের হাত-পা পরিষ্কার ছিলো। অথচ তার পায়ে বালি ও কাদা লাগানো ছিলো। এতে বোঝা যাচ্ছে রাতে ঘুমাননি তিনি। অথচ ঘটনার পর পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলো সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এবং বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশের সন্দেহ বাড়ে আহত হিফজুরের দিকেই।

এ ঘটনার দিন পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পুলিশ দুটি বিষয়কে সামনে রেখে বড় এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। হিফজুরের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে তার মামার। এর জের থেকে ঘটে থাকতে পারে হত্যাকাণ্ড। আবার স্ত্রীর সঙ্গেও হিফজুরের বিরোধ রয়েছে। সেটা শ্যালিকাকে নিয়ে। তাই হিফজুরকেও সন্দেহের বাইরে রাখা যাচ্ছে না। সেই সন্দেহের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত শেষে হিফজুরকেই গ্রেফতার করলো পুলিশ। এরআগে গত বুধবার মধ্যরাতে নিহত আলিমা বেগমের বাবা আয়ুব আলী বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ