Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খুন রুখতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

আরো একটি লোমহর্ষক ও মর্মবিদারী খুনের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর কদমতলী থানার মুরাদনগর হাইস্কুল রোডের একটি বাসায়। পুলিশ ওই বাসা থেকে বাবা, মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে। এক শিশু ও অন্য একজনকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মেহজাবিন আক্তার মুন নামে আরেক মেয়েকে আটক করা হয়েছে। বেঁচে যাওয়া শিশু ও ওই ব্যক্তি মুনের কন্যা ও স্বামী। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হাত-পা বেধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে মুন তার বাবা, মা ও বোনকে খুন করেন। এরপর ৯৯৯ এ কল করে পুলিশকে জানান। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে এবং অন্য দু’জনকে হাসপাতালে পাঠায়। কেন ওই খুন, সে সম্পর্কে মুন পুলিশকে যা বলেছেন তা কতদূর সত্য তা তদন্তকারীরাই বলতে পারবেন। বাবা, মা ও বোনের প্রতি প্রচন্ড ক্ষোভ ও অসন্তোষই খুনের প্রধান কারণ বলে অনুমান করা হচ্ছে। বাবার জমি-জমার লোভও খুনের কারণ হতে পারে। খবরে জানা গেছে, মুনের আগের স্বামী খুন হন। খুনের দায়ে মুন ও তার বাবা-মা-বোনের জেল হয়। খুনের এ ঘটনার আগে সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার বিন্নকান্দি গ্রামে ঘটে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান হত্যার রক্তহীমকরা ঘটনা। পুলিশ তাদের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পরিবারের কর্তা হিফজুর রহমানকে। এ খুনের কারণ সম্পর্কে শালিকার বিয়ে নিয়ে পারিবারিক বিরোধ এবং জমি নিয়ে মামাদের সঙ্গে হিফজুরের দ্বন্দে¦র বিষয় সামনে রেখে পুলিশ তদন্তে শুরু করে হিফজুরকেই খুনী বলে সন্দেহ করছে। ইতোমধ্যেই তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পুলিশ মনে করছে, জিজ্ঞাসাবাদে পুরো বিষয়টি খোলাসা হয়ে যাবে। পুলিশের সন্দেহ যদি সত্য হয় তবে স্ত্রী-সন্তান হত্যার আরো একটি ঘটনা বাড়বে। সন্তানের হাতে বাবা-মা খুন, স্বামীর হাতে স্ত্রী কিংবা পিতার হাতে সন্তান খুনের ঘটনা শুধু অস্বাভাবিক নয়, পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের চরম অবনতির পরিচায়কও।

আপনজনের দ্বারা আপনজনের খুন হওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বাবা-মা সন্তানকে, সন্তান বাবা-মাকে, ভাই ভাইকে, স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী স্ত্রীকে অবলীলায় খুন করছে। এসব খুনের ঘটনা পারস্পারিক সম্পর্ক ও পারিবারিক বন্ধনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। মানুষ নিরালম্বভাবে বাস করতে পারে না। অবশ্যই তার নিকটজনের সান্নিধ্য ও সহৃদয়তা প্রয়োজন। প্রয়োজন পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস থাকা তাদের সর্বক্ষণিক সহযোগিতাও প্রয়োজন। একটা নিশ্চিত নিরাপত্তাবোধের মধ্যেই মানুষ ভালোভাবে বেড়ে উঠতে বা চলতে পারে। অবিশ্বাস, সন্দেহ, সংশয় চরম অশান্তির কারণ। লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ, চরিত্রহীনতা, অপরিনামদশিতা ও অজ্ঞানতা আমাদের ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক জীবনকে দিনকে দিন বিষিয়ে তুলছে। কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়াতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রী, সৎ ছেলে ও এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেছেন। খুন কত সহজ হয়ে গেছে, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা কতটা অনিরাপদ হয়ে পড়েছে, এ ঘটনা তার প্রমাণ বহন করে। পুলিশ যখন খুন করে, তখন অন্যরাও তার দ্বারা প্ররোচিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পারিবারিক দ্ব›দ্ব, দাম্পত্যকলহ, পরকীয়া, মাদক, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, সামাজিক বৈষম্য, লোভ-লালসা, মানসিক বৈকল্য, সর্বোপরি নীতিনৈতিকতার অবক্ষয় খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী। নানা কারণে মানুষের মধ্যে ক্ষোভে-অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। এটা অস্বভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তাই বলে ক্ষোভ-অসন্তোষের বশবর্তী হয়ে কাউকে কিংবা আপনজনদের খুন করতে হবে এবং তাতে অতিনৃশংসতা প্রদর্শন করতে হবে, কোনোভাবেই তা মেনে নেয়া যায় না। এটা দেশ ও সামাজের জন্য এক মারাত্মক অশনিসংকেত।

খুন ও অপরাধ বৃদ্ধিতে অবশ্যই দেশ ও সমাজহিতৈষী বিবেকবান মানুষেরা উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। সম্প্রতিককালে কিশোর গ্যাং নামের এক দুর্বৃত্ত শ্রেণীর দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা তারা করছে না। তাদের অত্যাচার-জুলুম ও অপকর্ম- কুকর্মে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সাধারণ মানুষ অতিষ্ট। তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সীমা-পরিসীমা নেই। পুলিশ পর্যন্ত তাদের দমন করতে পারছে না। এক খবরে জানা গেছে, খোদ রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা অন্তত ৭৮টি। এদের বায়োডাটা নাকি পুলিশের হাতে। বায়োডাটা অনুযায়ী এদের ধরলেই কি গ্যাং কালচার বন্ধ হবে? গ্যাং সদস্যদের ধরে জেলে নিলে এক সময় তারা অনেকে পাকা অপরাধী হিসাবে বেরিয়ে আসবে। এটা সমাধান নয়। পুলিশী ব্যবস্থায় সময়িকভাবে এদের তৎপরতা কমে যেতে পারে; কিন্তু সম্পূর্ণ নিরস্তÍ করা সম্ভব নয়। খুন, ধর্ষণ, আত্মহত্যা, কিংবা গ্যাং কালচার নিরোধে সমস্যার মূলে যেতে হবে। সমাধান গোড়া থেকে করতে হবে। বস্তুতপক্ষে আমাদের সমাজে একটা বড় ধরনের ডিজওর্ডার নেমে এসেছে। এজন্য নীতিনৈতিকতাহীনতা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব দায়ী। দায়ী সুশাসনের ঘাটতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি। কাজেই, ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে সুরক্ষাচাদরে আবৃত করতে হলে সর্বস্তরে নীতিনৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সবাইকে ধর্মমুখী হতে হবে। নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। দেশ ও সমাজ যারা পরিচালনা করেন, তাদের এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায়বিচার দ্রুত সম্পন্ন হলে সকল অপরাধই কমবে।

 

 



 

Show all comments
  • Dadhack ২১ জুন, ২০২১, ১২:৫০ পিএম says : 0
    আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ চলে এই শব হারাম কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাবে.............
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মর্মবিদারী খুন
আরও পড়ুন