Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভিন্ন নদীর পানির সুষম বণ্টন চান প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৯ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : অভিন্ন নদীর পানির সমবণ্টনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে পানিকে উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনায় নিতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
গতকাল বুধবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে পানিবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের এক প্যানেল সভায় (এইচএলপিডব্লিউ) প্রধানমন্ত্রী এ বক্তব্য দেন বলে তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানিবিষয়ক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভিন্ন নদীর পানির সমবণ্টনের পাশাপাশি নদী ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত পদক্ষেপ এবং পানিনির্ভর প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
নিরাপদ খাবার পানি ও পয়োব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে এখন মোট জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশই নিরাপদ পানি পান করছে এবং ৬৫ ভাগ মানুষ নিরাপদ স্যানিটেশনের সুবিধা পাচ্ছে।
টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে পানির আন্তঃসম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে ‘কিছু বাধা’ রয়েছে বলে জানান। এসব বাধা দূর করতে এখনই আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি। বর্তমানে মোট ব্যবহারযোগ্য পানির ৭০ শতাংশ কৃষিতে ব্যয় হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা কম পানিতে উৎপাদনযোগ্য শস্যের চাষ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন। পানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে এ সম্পর্কিত অবকাঠামো গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সমন্বিতভাবে একটি আন্তর্জাতিক তহবিল গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা জানান, পানির অধিকার নিশ্চিত করতে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং নয়টি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন বৈঠকের প্যানেল সদস্যরা।
তারা বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং নেতাদের বলেছেন, পানিকে যেন তাদের চিন্তাভাবনা, পরিকল্পনা ও কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়।
প্যানেল সদস্যরা সবার জন্য পানির অধিকার এবং নিরাপদ খাবার পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বলেও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি মনে করিয়ে দেন, পানির সহজ প্রাপ্তি এবং কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে নতুন নতুন অবকাঠামোয় প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আগুন সন্ত্রাসের হুকুমের আসামি খালেদা জিয়ারও বিচার হবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আগুন সন্ত্রাসীদের বিচারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকারী এবং তাদের হুকুমের আসামিদেরও বিচারের সম্মুখীন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার রাতে স্থানীয় গ্র্যান্ড হায়াৎ হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ প্রদত্ত নাগরিক সম্বর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের হত্যার বিচার চলছে, কাজেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সকল হত্যাকা-ের বিচার আমরা করব। আগুন সন্ত্রাসীদেরও বিচার বাংলার মাটিতে হবে।’
হুকুমের আসামি হিসেবে খালেদা জিয়াকেও একদিন বাংলার মাটিতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো রাজনীতিবিদ ভুল করলে তার ভুলের খেসারত কে দেবে? ট্রেন যদি চলে যায় তাহলে পরের ট্রেনের জন্য তো অপেক্ষা করতেই হবে।
তিনি বলেন, এখন তারা (বিএনপি) আবার রাজনীতিতে স্পেস চায়। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে টানা ৯২ দিনের আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, মানুষের জানমালের ক্ষতির জন্য যদি দেশীয় আইনে কারো বিরুদ্ধে মামলা হয়, তো হতেই পারে। তাকে রাজনৈতিক মামলা বলা যায় কিÑপ্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে স্পেস নয়, কৃত অপরাধের জন্য তাদের জেলে যাওয়া উচিত। তখন অ্যারেস্ট করা হয়নি সেটাই তার ভাগ্য (খালেদা জিয়ার)। তবে একদিন এই অপরাধে খালেদা জিয়ার বিচারও বাংলার মাটিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রবাসীদেরকে দেশের বিরুদ্ধে বিরোধী মহলের অপপ্রচার সম্পর্কে সোচ্চার হবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যে যেই স্থানেই থাকেন সেখানকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বাস্তব চিত্রটা তুলে ধরবেন। এটা করার জন্য আমি আপনাদের সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তাহলে আর কেউ আমাদের দেশ সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে আর দেশের ভাবমূর্তিকে সংকটে ফেলতে পারবে না।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকেই প্রবাসজীবন কাটাতে বাধ্য হওয়া শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর দেশে ফেরার স্মৃতিচারণ করে বলেন, যখন বাংলার মাটিতে ফিরেছিলাম তখন এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই এসেছিলাম যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বাংলার মাটিতে করব। আর মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনাকে ফিরিয়ে আনব। যে চেতনাতে একদিন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই চেতনাতেই আবার আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আজকে যে সম্মানজনক অবস্থানে বাংলাদেশ এসেছে সেখানে পৌঁছাতে বারবার আঘাত এসেছে। কিন্তু সেখান থেকে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেন দেশকে গড়ে তোলার পথে আমরা আবারো দেশকে নিয়ে যাচ্ছি।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে ভিন্ন পথে ক্ষমতার পালা বদলের শুরু হয়। যুদ্ধাপরাধীরা পুনর্বাসিত হয় এবং দেশকে একাত্তরে উল্টোরথে চড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির যে ষড়যন্ত্র হয় সেজন্য নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তিনি জিয়াউর রহমানকে অভিযুক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথকে রুদ্ধ করে এবং দালাল আইন বাতিল করে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে চলমান ২২ হাজার মামলার প্রত্যাহার করে কারাগারে আটক সাড়ে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে মুক্ত করে দেন।
বঙ্গবন্ধুকে ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর খন্দকার মোস্তাক ক্ষমতায় বসলেও দিনকতক বাদেই তাকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে আসল ষড়যন্ত্রকারী জিয়া ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান সেনা আইন ভঙ্গ করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতায় আসেন। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে এই খুনিদেরকে পুরস্কৃত করেন। যে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ ছিল, মার্শাল ল’ অর্ডিন্যান্স দিয়ে সংবিধান সংশোধন করে এই জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধী, তাদের ভোটের অধিকার ছিল না। মার্শাল ল’ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের কিছু অংশ সংশোধন করে জিয়া তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে রাজনীতি ও দল করার সুযোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ে জিয়া-এরশাদের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির মহান সংগ্রামের খ-চিত্র তুলে ধরে বলেন, পাকিস্তান আমলে কেন্দ্রীয় সরকারে বাঙালিদের সঙ্গে বৈষম্য করা হতো, উচ্চপদে বাঙালি কর্মকর্তা ছিলেন অনেক কম। অথচ উৎপাদন ও রফতানি আয়ের সিংহভাগ পূর্ব পাকিস্তানে হতো।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রশাসন এবং শিক্ষাদীক্ষার সকল ক্ষেত্রে বাঙালিদের বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরে বলেন, এ বৈষম্য দূর করে অধিকার আদায়ে জাতির পিতা ২৩টি বছর সংগ্রাম করেন, আন্দোলন করেন। দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই আজ সরকারের প্রশাসনে এবং সামরিক ক্ষেত্রে বাঙালিরা উচ্চপদে আসীন হতে পেরেছেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের দেশে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বিদেশিদের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীদেরও বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বিদেশীদের পাশাপাশি আমি প্রবাসী বাংলাদেশীদেরও আহ্বান জানাবো এসব প্রতিষ্ঠিতব্য অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে। এতে করে ব্যবসার পাশাপাশি যে কোনো সময় চাইলেই তারা মূলধন ফেরত নিয়ে ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নেয়াসহ বিদেশীদের জন্য প্রযোজ্য সকল সুবিধা লাভ করবেন বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার রজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের শহীদদের, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সকল গণআন্দোলনে শহীদ এবং যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর পরেই স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে সকলে একযোগে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে বক্তৃতা শেষে প্রধানমন্ত্রী এই নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন। এই সংবর্ধনায় যোগ দিতে নিউ ইয়র্কের বাইরে ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে হাজারো আওয়ামী লীগ সমর্থক ও নেতাকর্মীরা সংবর্ধনাস্থল গ্রান্ড হায়াতে ভিড় করেন। শেখ হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য সংবর্ধনা স্থলের বাইরেও অন্তত আড়াই থেকে ৩ হাজার নেতা-কর্মী সমর্থক গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষমাণ ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন ও এজেন্ট অব চেইঞ্জ পুরস্কার গ্রহণ
নারীর ক্ষমতায়নে ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ এবং ‘এজেন্ট অব চেইঞ্জ’ পুরস্কার পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘নারীর ক্ষমতায়নের অবদানের জন্য’ ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ এবং ‘এজেন্ট অব চেইঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়ার পর তা বাংলাদেশের মানুষকে উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এ পুরস্কার আমাদের নারীদের জন্য এক স্বীকৃতি, যারা আমাদের পুরুষদের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে চলেছে। এই পুরস্কার আমি বাংলাদেশের মানুষকে উৎসর্গ করছি, যারা আমার পরিবর্তনের দর্শনকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব নজরুল ইসলাম জানান, জাতিসংঘ সদর দফতরের ইউএন প্লাজায় বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় শেখ হাসিনার হাতে দুই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পুরস্কারটি দেওয়া হয় ইউএন উইমেনের পক্ষ থেকে। আর ‘এজেন্ট অব চেইঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ দেয় গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম। রিপাবলিক অব মাল্টার প্রেসিডেন্ট মারি লুইস কোলেরো প্রেকা এবং জাতিসংঘের মহাসচিবের স্ত্রী বান সুন-টিকও এ বছর শেখ হাসিনার সঙ্গে এ পুরস্কার পেয়েছেন। ইউএন উইমেনের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর লক্ষ্মী পুরি অনুষ্ঠানে তার স্বাগত বক্তব্যের পর পুরস্কারজয়ী তিন নারীর জন্য মানপত্র পড়ে শোনান। ইউএন উইমেনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ফুমজিলা লামবো নুকা এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরামের প্রেসিডেন্ট অমির দোসাল সমাপনী বক্তব্য দেন।
পুরস্কার নেওয়ার পর শেখ হাসিনা বলেন, এই পুরস্কারে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। ইউএন উইমেন ও গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরামকে আমি ধন্যবাদ জানাই।
বাংলাদেশে নারীরাই যে ‘পরিবর্তনের দূত’, এই পুরস্কার তারই স্বীকৃতি বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এই পৃথিবীর জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা নারী-পুরুষ সকলের দায়িত্ব। মানব ইতিহাসের এমন এক সময়ে আমরা পৌঁছেছি যখন নারী-পুরুষের সমান অধিকার কেবল আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের পথ সব সময় সহজ ছিল না। কিন্তু সাহস আর ঐকান্তিক চেষ্টার মধ্য দিয়েই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমি সেই পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি, যেখানে নারীর অধিকার সবার সম্মান পাবে। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য ও সহিংসতা যেখানে হবে ইতিহাস।
এসডিজি বাস্তবায়নে জেন্ডার সংবেদনশীলতাকে কাজে লাগান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাউকেই পেছনে ফেলে রাখা যাবে নাÑএই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জেন্ডার সংবেদনশীলতাকে গুরুত্বের সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, প্রত্যেক নারী এবং মেয়েকে গণনা করার ধারণা নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা বিষয়ে আমার নিজস্ব চিন্তাধারাকে প্রতিফলিত করে। কাউকে পিছনে ফেলে না রাখায় অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার কারণে এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের অবশ্যই জেন্ডার সংবেদনশীল পদ্ধতিকে লালন করতে হবে।
অস্ট্রেলীয় সরকার, ইউএন উইমেন, বিল অ্যান্ড মেরিন্ড গেটস্ ফাউন্ডেশন ও জাতিসংঘ ফেডারেশন/ডাটা ২ এক্স-এর উদ্যোগে জাতিসংঘ সদর দফতরে ‘মেকিং এভরি উইমেন অ্যান্ড গার্ল কাউন্ট’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বক্তব্য প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপুল সংখ্যক নারী দারিদ্র্যসীমার নিচে বা সম্পদহীনতার জন্য তাদের জীবনমান দ্রুত পড়তে থাকায় বাংলাদেশে তার সরকারের জেন্ডারসংক্রান্ত এমডিজি কার্যক্রম ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।
তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি ক্ষেত্রে লিঙ্গ-সমতা বজায় রাখতে পেরেছি। মাতৃমৃত্যু হার যথেষ্ট হ্রাস পেয়ে প্রতি হাজারে ১.৭ জনে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বৃদ্ধ, বিধবা, অক্ষম, স্তন্যদায়ী মা ও দুস্থ নারীদের ব্যাপকভাবে সহায়তা দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার প্রতি বছর সংসদে জাতীয় বাজেটসহ একটি জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট উপস্থাপন করছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৪০টি মন্ত্রণালয় নারী উন্নয়নে তাদের বরাদ্দের কথা জানিয়েছে, যা এই অর্থবছরের বাজেটের ২৭ শতাংশেরও বেশি এবং মোট জাতীয় আয়ের জিডিপি তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, আমরা স্বীকার করি যে, এই কাজের জন্য মানসম্মত ও হালনাগাদ জেন্ডারসংক্রান্ত ডাটা জোগাড় করা কষ্টকর হবে। একটি সুষ্ঠু ডাটাবেস আমাদের নারী ও মেয়েশিশুদের ব্যাপারে গৃহীত উদ্যোগের সাফল্য-ব্যর্থতা বোঝতে সাহায্য করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, এখানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আজ যা চালু করা হলো তা আশাপ্রদ বলে মনে হচ্ছে। এই ব্যবহারিক, বাস্তবভিত্তিক কাজ সম্ভবত জাতিসংঘের নারী ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে আমাদের চমৎকার সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরেকটি পালক যোগ করতে পারে।
ব্যবসায়িক রীতির অঙ্গীকার রক্ষা করতে বিশ্বের স্টেকহোল্ডারদের আহ্বান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণ, ন্যায্যমূল্য ও উন্নয়ন অর্থায়নের সুযোগদানের ক্ষেত্রে দেয়া অঙ্গীকার রক্ষায় বিশ্বের স্টেকহোল্ডারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গত বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে জাতিসংঘ সদর দফতরে ডিসেন্ট ওয়ার্ক অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ বিষয়ক সোশ্যাল ডায়ালগ সংক্রান্ত গ্লোবাল ডিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশে ও দেশের বাইরে সকল ক্ষেত্রে অভিন্ন দায়িত্বশীলতা হিসাবে ব্যবসাকে যদি গণ্য করা হয়, তাহলে আমরা আরো লাভবান হব। সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন লো ফেভেন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
উন্নয়নকে ‘যৌথ উদ্যোগ’ হিসাবে বর্ণনা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে পারস্পরিক সমৃদ্ধ সংলাপের সুযোগ দিতে একটি বলিষ্ঠ প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে উৎপাদনশীল সম্পর্ক উন্নয়নের পূর্বশর্ত, এটি একটি যৌথ উদ্যোগ এবং এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক, শর্তানুগ ও যতœবান হতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, একটি সমন্বিত ও সক্ষমতার সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য গ্লোবাল ডিল ইনিশিয়েটিভ অংশীদারদের মধ্যে সংলাপের উৎসাহ জোগাবে। এজন্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে পারস্পরিক সংলাপ জোরদারে বলিষ্ঠ উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার পথ অনুসরণ করছে, যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জনগণের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আমাদের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে সকল উন্নয়ন প্রচেষ্টায় জনগণকে কেন্দ্রে স্থান দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক কারখানা এবং অন্যান্য শিল্প কর্মসংস্থান ক্ষমতায়ন এবং অর্থনৈতিক মুক্তির ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। তিনি বলেন, একটি উন্নত শিল্প সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৩ করা হয়েছে এবং এটি আরো শ্রমিকবান্ধব করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি পূর্বের চেয়ে ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। সরকার শিল্প সংগঠন ট্রেড ইউনিয়ন, কারখানা ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিকদের সচেতনতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। আমাদের শিল্প, নিয়োগকর্তা এবং শ্রমিকদের আরো উন্নত ভবিষ্যতের জন্য সকল উন্নয়ন সহযোগী ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বব্যাপী একটি সাপ্লাই চেইন পরিচালনা করছি। উৎপাদক, খুচরা বিক্রেতা, ভোক্তা সকলকেই ব্যবসায়িক অগ্রগতি এবং শ্রম অধিকার রক্ষার ব্যাপারে দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশী শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে সুইজারল্যান্ডের সহায়তা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে সুইজারল্যান্ডের সহায়তা কামনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী গত বুধবার জাতিসংঘের সদর দফতরে জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট জোহান ¯েœইডার আম্মানের সাথে দ্বিপাক্ষিক এক বৈঠকে এই আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, দুই নেতা বৈঠকে পারস্পরিক দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তিনি জানান, দুই নেতার বৈঠকে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয় আলোচনায় এসেছে। পরে জাতিসংঘের সদর দফতরে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। প্রেস সচিব জানান, এই বৈঠকে তারা অভিবাসী ও ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকগুলোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • মিলন ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:৩২ পিএম says : 0
    প্রয়োজনে আমাদেরকে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভিন্ন নদীর পানির সুষম বণ্টন চান প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ