Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রামসফেল্ড নামটি ইরাকি জাতির ধ্বংস ডেকে আনে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

ডোনাল্ড রামসফেল্ড মারা যাওয়ার সংবাদ শুনে আলী রিজা আল-তামিমি এবং তার স্ত্রী তাদের চার সন্তানের সাথে বসে তাদের বলেছিলেন: ‘এ ব্যক্তিই আমাদের দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে’। ‘তিনি বহু পরিবারকে ধ্বংস করেছেন এবং এটা করা হয়েছিল মুক্তির আড়ালে’। তামিমি পরে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ‘তিনি আমাদের যে ব্যথা দিয়েছেন তাতে আমি তাকে কখনও ক্ষমা করব না’।
উত্তপ্ত আবেগ ইরাকের অনেকেই শেয়ার করেছেন, যেখানে রমসফেল্ড নামটি ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের সমার্থক, যাতে সাদ্দাম হুসেনকে ক্ষমতাচ‚্যত এবং তারপরে গ্রেফতার, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।
প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিøউ বুশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রামসফেল্ড হলেন এ হামলার অন্যতম স্থপতি যিনি সাদ্দামের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র গোপন করে রাখার অভিযোগ এনেছিলেন এবং যা ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়। আমেরিকানরা এবং তাদের মিত্ররা এরপরে যা ঘটেছিল সে সম্পর্কে অনেক পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং তাদের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ইরাকি সুরক্ষা বাহিনীকে ভেঙে দেয় - বহু বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন সা¤প্রদায়িক রক্তপাত, চরমপন্থী হামলা এবং অবিরাম গাড়ি বোমা হামলার জন্য ইরাকিরা রামসফেল্ড এবং অন্যান্য আমেরিকান নেতাদের দায়ী করে থাকে।
রামসফেল্ড বাগদাদের পশ্চিমে কুখ্যাত আবু ঘরাইব কারাগারে মার্কিন বন্দীদের লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের সাথেও যুক্ত। পরবর্তীতে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে তার সবচেয়ে অন্ধকারতম সময় হিসাবে উল্লেখ করা হয়। জেলটি সাদ্দামের শাসনকালে তার বিরোধীদের কারারুদ্ধ করা এবং মৃত্যুদÐ দেওয়ার অন্যতম প্রধান স্থাপনা হিসাবে পরিচিত ছিল।
গত বুধবার ৮৮ বছর বয়সে আমেরিকায় রামসফেল্ডের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেক ইরাকি দীর্ঘকালীন ক্ষোভ ও তিক্ততা প্রকাশ করতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। তারা ইরাকে বুশ এবং রামসফেল্ডের অন্ধকার যুগের স্মৃতিচারণ করেন। কেউ কেউ টুইট করেছেন: ‘রট ইন হেল’। অন্যরা রমসফেল্ডকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে বর্ণনা করেন।
আল-তামিমি বলেন যে, আমেরিকা বিরোধিতাসহ ইরাকে মার্কিন উপস্থিতির বিরুদ্ধে উসকানির সন্দেহে ২০০৬ সালে তার নিজের আটকের জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে রামসফেল্ডকে দায়ী করেন। বৃহস্পতিবার এপি’র সাথে ফোনালাপে তিনি বিস্তারিত বলবেন না বলে জানান। বিনা দোষে দু’বছর ধরে তিনি দক্ষিণ ইরাকের ক্যাম্প বুকা কারাগারে বন্দী ছিলেন। যখন তাকে আটক করা হয় তখন তার ছেলের বয়স এক মাসের বেশি ছিল। রামসফেল্ড সম্পর্কে আল-তামিমি বলেন, ‘আমি বেঁচে থাকতেই সে আমাকে হত্যা করেছিল’।
তিনি বলেন, আল-তামিমির ছেলে এ দু’বছর ধরে বেড়ে ওঠার সময় জানত না যে, তার বাবা আছে বা তিনি কোথায় ছিলেন’। আল-তামিমিকে পরে ইরাকি আদালত নির্দোষ বলে প্রমাণিত করে এবং ২০০৮ সালে তাকে মুক্তি দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ইরাকিরা আমেরিকানদের কথিত মুক্তিযুদ্ধকে তাদের দেশের পক্ষে মারাত্মক ভুল বলে অভিহিত করে বিভিন্ন গল্প শেয়ার করে।
২০০৮ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ প্রকাশের জন্য একটি সংবাদ সম্মেলনে বুশকে জুতা ছুড়ে মারার জন্য পরিচিত মুনতাদার আল-জায়েদী টুইট করেন: ‘তিনি চলে গেছেন এবং বাগদাদ রয়ে গেছে’।
ওয়াশিংটনে, রামসফেল্ডের প্রাক্তন সহকর্মীরা তাঁকে একই সাথে স্মার্ট এবং যোদ্ধা, দেশপ্রেমিক এবং রাজনৈতিকভাবে ধূর্ত হিসাবে স্মরণ করেন। বুশ বুধবার রামসফেল্ডের ‘যুদ্ধকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে অবিচলিত পরিষেবার প্রশংসা করেন’। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের কর্মের দ্বারা যাদের জীবন ও জাতি পরিবর্তিত হয়েছিল তাদের স্মৃতি আরো আলাদা হতে পারে না।
রাজনৈতিক বিষয়ক ইরাকি গবেষক ইহসান আলশামারী বলেছেন, ‘রামসফেল্ড ছিল ইরাকের ইতিহাসের একটি কালো চিহ্ন। তিনি দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের এনেছিলেন যা এখন ইরাককে নিয়ন্ত্রণ করে’। তিনি বলেন যে, রামসফেল্ড কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক দখলের জন্য নয়, এমন সিদ্ধান্তের জন্যও দায়ী যারা ইরাকের ভবিষ্যতের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
বাগদাদে বসবাসরত ৪৫ বছর বয়সী জাওয়াদ আল-তাই বলেন, ‘একজন ইরাকি হিসাবে আমি স্বস্তি পেয়েছি যে, হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের একজন এখন মারা গেছেন। তিনি তার সৃষ্টিকর্তার মুখোমুখি হবেন এবং এ জীবনে তার পাপগুলোর জবাব দিতে হবে’।
‘তিনি আমাদের মুক্তি দেননি। এটি একটি পৌরাণিক কাহিনী। তিনি আমাদের হত্যা করেছেন এবং আমাদেরকে তার জন্য ধন্যবাদ জানাতে বলেছেন’ -বলেন আল-তাই।
আক্রমণের পরে, কিছু ইরাকি সাদ্দামকে অপসারণের জন্য আমেরিকানদের ওপর কৃতজ্ঞ ছিল এবং তাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য প্রাথমিকভাবে আশাবাদী ছিল। তবে এটি বদলে গেল যেহেতু স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ইরাকি সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীকে গুটিয়ে ফেলার পরে কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে বা সুন্নি উগ্রপন্থী দল, জঙ্গি এবং প্রতিবেশী ইরান সমর্থিত সহিংস শিয়া মিলিশিয়াদের কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে তা আমেরিকানরা নিশ্চিত ছিল না। ফলস্বরূপ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শূন্যতা সৃষ্টি হয়।
২০১৮ সালে সরকারী দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণ-বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৩৮ বছর বয়সি ইরাকি কর্মী সাজাদ আল-রিকাবি বলেন, আজকের ভগ্ন ইরাকের জন্য এবং যুদ্ধোত্তর রাজনৈতিক শ্রেণি যারা এখন আইন প্রয়োগ করে তার জন্য তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেন।
রামসফেল্ড সম্পর্কে আল-রিকাবি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি এসে তার তৈরিকৃত সিস্টেমটি ভেঙে ফেলে তাহলে তার জন্য আমি কেবলমাত্র বলব ‘শান্তিতে ঘুমাও’। ‘আমরা এখন যে প্রতিবাদ করছি তার সবই তার নীতিমালার কারণে উদ্ভব হয়েছে। সূত্র : এপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরাক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ