Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নৌ ও রেলপথের উন্নয়ন দ্রুতায়িত করতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

যোগাযোগ ও পরিবহন খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর সাথে দেশের উন্নতি ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট। দেশে প্রয়োজন অনুসারে যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। সড়ক, নৌ, আকাশ, রেল সব ক্ষেত্রেই একই অবস্থা। সকল খাতের যানবাহনেরও ঘাটতি রয়েছে ব্যাপক। যা আছে, তারও অধিকাংশই নড়বড়ে! ঐতিহ্যবাহী, সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও স্বল্প দুর্ঘটনার যোগাযোগ খাত হচ্ছে নদী ও রেল। তাই এসব নিয়ে আগে আলোকপাত করা দরকার। বাংলাদেশ একদা নদী মাতৃক দেশ ছিল। তাই শিল্প-সাহিত্য এবং জীবন ও জীবিকায় প্রাধান্য ছিল নদীর। গত ষাট দশকে নৌ-রুট ছিল ২৪ হাজার কি.মি.। কালপরিক্রমায় সেই নদী কমতে কমতে এখন সামান্য অবশিষ্ট রয়েছে। ফলে দেশ মরুপ্রায় হয়ে মানুষ ও জীববৈচিত্র্যেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে নৌ-রুট দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ হাজার কি.মিটারে। ভারতের পানি আগ্রাসন ও অভ্যন্তরীণ ব্যাপক দখলের কারণে এই পরিণতি হয়েছে। নদী যা আছে, তারও গভীরতা ও প্রশস্ততা কমেছে অনেক। তাই বর্ষা মওসুমে অল্প বৃষ্টিতেই নদীর দু’কূল ভেসে যায়। আবার শুষ্ক মওসুমে পানি থাকে না ঠিকমত। এতেও বিভিন্ন সংকট দেখা দেয়। বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা সম্প্রতি বলেছেন, ‘দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুপেয় পানির অনেক সংকট তৈরি হচ্ছে। এশিয়া প্যাসিফিকের মধ্যে বাংলাদেশের নদীর পানি সবচেয়ে বেশি দূষিত।’ দেশে নদী ভাঙ্গনও ব্যাপক। সিইজিআইএস’র তথ্য মতে, ১৯৭৩-২০১৮ সাল পর্যন্ত নদী ভাঙ্গনে দেশের ১,৭০০ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এলাকা বিলীন হয়েছে। তাতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১৭.১৫ লাখ মানুষ। আর এই সময়ে জেগে উঠেছে মাত্র ৫৮১ বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি। সর্বোপরি নদীগুলোর বিরাট অংশ দখল হয়েছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এ পর্যন্ত ৬৩ হাজার নদী দখলদারকে চিহ্নিত করেছে। সে অনুযায়ী কিছু উচ্ছেদও হয়েছে। আবার পুনঃদখলও হয়েছে অনেক স্থানে। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী গত ২৭ মার্চ বলেছেন, ‘শিল্পায়নের কারণে প্রকৃতির ভারসাম্যের অনেক সমস্যা হয়েছে। তাই সরকার ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ হাতে নিয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে নদী ভাঙন ও দূষণ থাকবে না। দেশের অভ্যন্তরে ১৬ হাজার ৭০০ কি.মি.ও উপক‚লীয় অঞ্চলে প্রায় সাত হাজার কি.মি. বাঁধ রয়েছে। উপরন্তু ডুবো বাঁধ রয়েছে আড়াই হাজার কি.মি.।’ কিন্তু এই বাঁধগুলো মজবুত নয়। তাই অহরহই ভেঙ্গে যায়। সম্প্রতি সংঘটিত ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও প্রবল জ্বলোচ্ছাসে বাঁধ ভেঙ্গে দেশের উপকূল এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই সংসদে ‘ত্রাণ চাই না বাঁধ চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে নিজ এলাকায় বাঁধ নির্মাণের দাবি করেছেন পটুয়াখালীর এক এমপি। সাতক্ষীরায়ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে পানিতে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় নারী ও পুরুষরা। এসব দাবি শুধু তাদেরই নয়, এ দাবি সমগ্র দেশবাসীরও। তাই উপকূলীয় বাঁধসহ সারাদেশের সব নদীর বাঁধ সময়োপযোগী ও টেকসই করে নির্মাণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ড. রিপনের উদ্ভাবিত পদ্ধতি ব্যবহার করলে বেশি সুফল পাওয়া যাবে। নরম মাটিতে ভূমিকম্প প্রতিরোধী এবং স্বল্প ভূমিতে ও ব্যয়ের মোড়ানো বাঁধ উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশি প্রকৌশলী ড. রিপন হোড়।

দেশের উচ্চ আদালত নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা বলে রায় দিয়েছেন। তাই নদীগুলোকে বাঁচানোর লক্ষ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত একটি মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছে। এর আওতায় ১৭৮টি নদী খনন ও পুনরুদ্ধার করে ১০ হাজার কি.মি. নৌপথ চলাচলের উপযোগী করার কাজ শুরু হয়েছে গত বছর, যা ২০২৫ সালে শেষ হবে। কিন্তু বাপা বলেছে, ‘একটা নদীও পরিকল্পনা অনুযায়ী খনন করা হচ্ছে না। দুর্নীতি ও প্রতারণা হচ্ছে।’ অভিযোগটি সঠিক হয়ে থাকলে সেটা দুঃখজনক। তাই পরিকল্পনা মাফিক ও দুর্নীতিমুক্তভাবে নদী সংস্কার করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী গত ২৬ জুন বলেছেন, কর্ণফুলী রক্ষায় নিয়মিত ড্রেজিং করতে হবে। হ্যাঁ, এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু শুধুমাত্র একটি নদীই নিয়মিত ড্রেজিং করলে হবে না, সেই সাথে দেশের সব নদীই নিয়মিত ড্রেজিং করতে হবে। নতুবা পুনরায় মজে যাবে। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেছেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নদীর সীমানা পিলার চিহ্নিত করে মধ্যবর্তী সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। নদী ঢাকার প্রাণ, ঢাকা বাঁচাতে হলে নদী বাঁচাতে হবে। তার এই সুপারিশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি বুড়িগঙ্গা ও কর্ণফুলী নদীর আবর্জনা অপসারণ করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে গ্র্যাব ড্রেজার সংগ্রহ করে কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশটিও দ্রুত কার্যকর হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে বাকী সব নদীও আবর্জনা মুক্ত করা দরকার। দেশে অসংখ্য জলাশয়, খাল-বিল, হাওর-বাঁওর রয়েছে। এগুলোরও গুরুত্ব অপরিসীম। এগুলোও ব্যাপক ভরাট, দখল ও দূষণের শিকার হয়েছে। তাই এ গুলোকেও দখল ও দূষণমুক্ত এবং নিয়মিত সংস্কার করা প্রয়োজন। নদী ও খাল-বিল দূষণের প্রধান কারণ হচ্ছে-কলকারখানার বর্জ্য, পলিথিন ও নন রিসাইক্লিং প্লাস্টিক। এসবকে রেখে নদী ও খাল-বিল দূষণমুক্ত হবে না। এসব ড্রেজিংয়েরও চরম অন্তরায়। তাই এগুলোকে নিষিদ্ধ করে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে হবে। নারায়ণগঞ্জ, মংলা, আশুগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি নৌবন্দর রয়েছে। পায়রা বন্দর নির্মাণ হচ্ছে। এসব বন্দরকে সার্বক্ষণিক সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশে বর্তমানে ২২৭টি নৌপথ রয়েছে। তাতে ১৩,৪৮৬টি নিবন্ধিত ও অসংখ্য অনিবন্ধিত নৌযান চলাচল করছে, যার বেশিরভাগই মেয়াদ উত্তীর্ণ। চালকেরও অধিকাংশই অদক্ষ। নৌ আইনও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। তাই নৌ দুর্ঘটনার হার অনেক। শুধুমাত্র গত বছরই ৭০টি নৌ দুর্ঘটনায় ২১২ জন নিহত ও ১শ’ জন নিখোঁজ হয়েছে। ফলে অতি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়া সত্তে¡ও নৌপথের ব্যবহার কমছে, যা দেশের জন্য চরম ক্ষতিকর। তাই নৌযানগুলো আধুনিক, সব চালককে দক্ষ, নৌ আইনগুলো পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে নৌ পথের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। ব্যয়বহুল সড়ক পথের উপর চাপ কমবে।

চিলমারী নৌ বন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়েছে গত ৮ জুন। এর বাস্তবায়নকাল হচ্ছে, গত জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। এটি চালু হলে আসাম, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে দেশের নৌ-চলাচল পুনরায় শুরু হবে। দেশের অভ্যন্তরেও পণ্য ও মানুষ পরিবহনে ব্যাপক সুবিধা হবে। চীন প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তিস্তা নদী ও তার দুই পাড়ের মানুষের ভাগ্যের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। এটা বাস্তবায়িত হলে নদীর ওপারে উন্নতির দ্বার উন্মোচিত হবে। যমুনায় সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ ফেরি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটা চালু হলে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ হয়ে সড়ক পথে ঢাকার দূরত্ব ৮০ কি.মি. কমবে। ঢাকার চারদিকের নদীগুলোতে সার্বক্ষণিক ওয়াটার বাস চালু করতে পারলে শহরের অভ্যন্তরে যানজট, পরিবহন ব্যয় ও দূষণ কমবে।

বর্তমানে দেশের সমুদ্র সীমানা ১.১৮ লাখ বর্গকিলোমিটারের বেশি। এতে রয়েছে অফুরন্ত খনিজ ও মৎস্য সম্পদ। এ সম্পদ আহরণ করতে পারলে বছরে আড়াই লাখ কোটি ডলার আয় হবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। কিন্তু সমুদ্র বিজয়ের পর ভারত ও মিয়ানমার সমুদ্র সম্পদ আহরণে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে সফল হলেও আমাদের উদ্যোগ সামান্য! উপরন্তু দেশে সমুদ্র বিজ্ঞানী, ভালো শিক্ষক ও বিনিয়োগ নেই তেমন। এমনকি মাছ ধরার আধুনিক বড় যানও নেই। তাই বর্তমানে বছরে মাত্র ৯৬০ কোটি ডলারের সম্পদ আহরণ হচ্ছে। অবশ্য, দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০% হয় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে। এছাড়া, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে পতেঙ্গা অয়েল ডিপো পর্যন্ত সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ২২৮ কি.মি. ডাবল পাইপ লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। আগামী বছর এটা সম্পন্ন হবে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে মাদার ভেসেল থেকে সরাসরি তেল খালাসের জন্য ভাসমান টার্মিনাল, মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনাল ও গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। মিরসরাই-টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা তৈরির কাজ করছে এসএনইটি ইন্টা.। এই সড়ক নির্মাণের লক্ষ্য এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। এসব কাজ সম্পন্ন হলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান সংযোজিত হবে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থার সদস্য। জাতিসংঘের এসডিজির ১৪ নং অনুচ্ছেদ হচ্ছে, ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য মহাসাগর, সাগর এবং সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার।’ তাই দেশের সমুদ্র সম্পদের পূর্ণ সদ্ব্যবহারে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া অতীব জরুরি।

দেশে রেলপথ সৃষ্টির পর থেকে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ হওয়ায় যোগাযোগের দ্বিতীয় প্রধান মাধ্যম ছিল। কিন্তু স্বাধীনতাত্তোরকাল থেকে রেলপথ কমতে থাকে। বর্তমানে যেটুকু আছে, তাও সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন। তাই অনেক লাইন, ব্রিজ, বগি, ইঞ্জিন ও স্টেশন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া, মোট রেলক্রসিং আছে ২,৮৫৬টি। তন্মধ্যে অনুমোদন নেই ১,৩৬১টির। ১, ৪৯৫টি বৈধ ক্রসিংয়ের মধ্যে ৬৩২টির গেট কিপার নেই। এসব কারণে শুধুমাত্র গত বছরই রেলে ১০৮টি দুর্ঘটনায় ১২৯ জনের মৃত্যু ও ৩১ জন আহত হয়েছে। জনবলেরও ঘাটতি বিপুল। গত বিএনপি সরকারের সময়ে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে কয়েক হাজার দক্ষ জনবলকে বিদায় করার পর জনবলের ব্যাপক ঘাটতি সৃষ্টি হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে লোকসানও চলছে অব্যাহতভাবে। গত এক দশকে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার অধিক ব্যয় ও ভাড়া দ্বিগুণ করার পরও লোকসান বন্ধ হয়নি। দেশের অনুপযোগী ডেমু ট্রেন ব্যবহারের জন্য লোকসান বেড়েছে। অথচ একই পথে ভাড়াভিত্তিক ট্রেনের লোকসান নেই। দেশের বেশিরভাগ ট্রেন সময় মতো চলে না। গতিও অত্যন্ত কম। পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তারও অভাব রয়েছে। সারাদেশে রেলের প্রায় ৪২১৭ একর জমি বেদখলে রয়েছে। রেলমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, রেলের জমি ভূমিদস্যুদের হাতে, এমনটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা কঠোর হচ্ছি, কাউকেই রক্ষা করা হবে না। এরূপ হাঁক-ডাক বহু শোনা গেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সৈয়দপুর ও পার্বতীপুরের ওয়ার্কসপ দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এখানে ইঞ্জিন ও বগি মেরামত হতো। খবরে প্রকাশ, গত প্রায় ১ যুগে বর্তমান সরকার রেলে বরাদ্দ বাড়িয়েছে ১৬,৩৭৫%। কিন্তু প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের বেশিরভাগই অব্যবহৃত থেকেছে। উপরন্তু বহু প্রকল্পের সংশোধন এবং মেয়াদ ও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। রেলওয়ের সাবেক এক মহাপরিচালক বলেছেন, রেলে অধিকাংশ প্রকল্পই রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়। যাত্রীবৃদ্ধি, আয়বর্ধক ও লাভজনক বিবেচনায় নাম মাত্র প্রকল্প নেওয়া হয়। এই অবস্থায় ২০১৬-৪৫ সাল মেয়াদে ৫ লক্ষ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকার মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হকের অভিমত হচ্ছে, বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে কার স্বার্থে। বরাদ্দ বাড়িয়ে যদি গতি বাড়ানো না যায় ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ-ব্রিজ সংস্কার না হয় তাহলে নতুন প্রকল্প দিয়ে কি হবে। প্রকল্প ঘিরে যে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে সেগুলো চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

দেশে রেলের পৃথক মন্ত্রণালয় ও অনেক লাইনে মিশ্র গেজ করা হয়েছে। নতুন বগি ও ইঞ্জিনও আমদানি করা হচ্ছে। ভারতের সাথে বন্ধ থাকা লাইনগুলো পুনরায় চালু করা হচ্ছে ভারতের চাহিদা মাফিক। চট্টগ্রাম- কক্সবাজার-ঘুমধুম পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। লক্ষ্য ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে যুক্ত হওয়া। পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে ঢাকা-ফরিদপুর-খুলনা রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে। যমুনা ব্রিজে ডাবল লাইনের রেলসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে গত নভেম্বর। শেষ হবে ২০২৪ সালের আগস্টে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণের বিষয়টি ২০১৮ সালের অক্টোবরে একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-উত্তরবঙ্গের যাতায়াত দেড়শ’ কি.মি. কমবে। ঢাকায় মেট্টরেল স্থাপন করা হচ্ছে। উপরন্তু পাতাল রেলও নির্মাণের কাজ শুরু হবে আগামী মার্চে, যা কুড়িল-রামপুরা-রাজারবাগ মহাসড়কের ১০ মিটার নিচে হবে। চালু হবে ২০২৬ সালে। এসব কাজ বাস্তবায়িত হলে ঢাকার যাতায়াতে খুবই সাশ্রয়ী ও সহজতর হবে। যানজটও কমবে অনেক। ঢাকা-চট্টগ্রাম ইলেকট্রিক রেলপথ স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আইএম পাওয়ার। চীনও ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইস্পিড ট্রেন চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে। রেলমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, কম খরচ ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পদ্মাসেতুর রেললিঙ্কের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করা হবে। এখন থেকে আর পুরনো পদ্ধতির কোনো রেললাইন নির্মাণ করা হবে না। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ইলেকট্রিক ট্রেন চালু করার মহাপরিকল্পনা নেয়া হবে শীঘ্রই। তার এই বক্তব্য বাস্তবায়িত হলের দেশের রেলের ব্যাপক উন্নতি হবে। কিন্তু রেল খাতের উন্নতি করলেই চলবে না, লোকসান বন্ধ করে লাভজনক ও যাত্রী-পরিবহন বান্ধব করতে হবে।সে জন্য সব লাইন ও ব্রিজ সংস্কার, প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ, দুর্নীতি-অপচয় বন্ধ এবং সব প্রকল্প আয়বর্ধক ও নির্দিষ্ট সময়ে, অর্থে ও মানসম্পন্নভাবে সম্পন্ন করতে হবে। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে বহু দেশে রেল খাতের চিত্র ভিন্ন। ৩-৪শ’ মাইল গতিবেগের ট্রেন চালু করা হয়েছে। চলছে ইলেকট্রিক, হাইড্রোজেন, সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে। লাভজনকও।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নৌ ও রেলপথ
আরও পড়ুন