Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মাদক থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০৭ এএম

তরুণ প্রজন্ম দেশের সম্পদ। তাদের ওপরই দেশের ভবিষ্যত নির্ভর করছে। দেশের নেতৃত্ব তারাই দেবে। কথাগুলো এখন কথার কথায় পরিণত হয়েছে। দেশের নীতিনির্ধারকরাও বক্তব্য-বিবৃতিতে এসব কথা অহরহ বলেন। বাস্তবে আমরা দেখছি, তাদের এ কথা যুবসমাজের উপর খুব কমই প্রতিফলিত হচ্ছে। তরুণ যুবসমাজ এখন কি অবস্থায় আছে, কি সমস্যা মোকাবিলা করছে, কিভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে, এ নিয়ে যদি তাদের চিন্তা ও বিচলন থাকত, তবে তাদের নিঃশেষ করে দেয়ার মতো মাদকের যে ভয়াবহ গ্রাস চলছে, এ নিয়ে সোচ্চার হতে দেখা যেত। যুবশক্তিকে দেশের অমূল্য সম্পদ বিবেচনা করে এ শক্তির সংরক্ষণ ও পরিচর্যার পদক্ষেপ নেয়া হতো। দুর্ভাগ্য এই যে, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হয়ে গেছে ক্ষমতায় টিকে থাকা ও যাওয়া। এ নিয়ে তারা পারস্পরিক দ্ব›দ্ব ও বিষোদগারে লিপ্ত। তাদের এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানের আড়ালে যে যুবসমাজের একাংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে, সেটা তারা খুব একট খেয়াল করছে বলে মনে হচ্ছে না। তারা কি বুঝতে পারছে না, নাকি বুঝতে চাচ্ছে না, তাদের রাজনীতির মুখ্যশক্তি যুবসমাজ মাদকের নীল ছোবলে যে ধীরে ধীরে নিষ্প্রাণ ও অথর্ব হয়ে যাচ্ছে? সংসার, সমাজ এবং দেশের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে? বোঝা স্বরূপ এই মাদকাসক্ত তরুণ সমাজ নিয়েই কি তারা রাজনীতি করবে? যদি তা না হয়, তবে তরুণদের মাদকাসক্তি এবং যেসব মাদক চোরাকারবারিরা তাদেরকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন কোন কথা বলছে না? মাদক চোরাচালান ও চোরাকারবারি চক্র নির্মূলে কেন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না? দেশে মাদকাসক্তির একটি পরিসংখ্যান দিলে বোঝা যাবে, তরুণ যুবসমাজ আজ কোন পথে এবং কিভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাদসাক্তদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ কিশোর ও তরুণ। মাদকসেবীদের শতকরা ৬০ ভাগই এসএসসি পাস করা। ২০ থেকে ৪০ বছরের মাদকসেবীর সংখ্যা শতকরা ৮০ ভাগের বেশি। বিশ্লেষকরা বলেছেন, ‘মাদকের কারণে তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে। আপনার, আমার, সবার সন্তানই অনিরাপদ।’

দুই.
দেশের যারা নীতিনির্ধারক, দেশ চালান এবং চালাবেন, দুঃখের বিষয় তাদেরই একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রায় প্রতিদিনই লেখালেখি হচ্ছে। কক্সবাজারের একজন সাবেক এমপি এবং তার পরিবার সংশ্লিষ্ট লোকজন ভয়াবহ মাদক ইয়াবার চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার কথা দেশবাসীর অজানা নয়। দেশে মরণনেশা ইয়াবার ভয়ঙ্কর বিস্তার তার এলাকার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত দেশের সর্বত্র মহামারী রূপে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে এই মাদক। এর ছোবলে লাখো পরিবারের সন্তানদের জীবন এখন বিপন্ন। এমন সন্তানদের অভিভাবকদের কান্না এখন ঘরে ঘরে। অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগা দিয়ে প্রসার ঘটছে ইয়াবা ব্যবসা। অভিযোগ রয়েছে, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি, এমপি, রাজনৈতিক নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী সিন্ডিকেট ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এমনকি টেকনাফে দিন মজুর, মাছ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বাস কন্ডাক্টরেরও ইয়াবার ব্যবসা করে কোটিপতি বনে যাওয়ার খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খান কামাল গত সপ্তাহে এক আলোচনা সভায় বলেছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ২০৩০ ও ২০৪১ সালের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যাবে না। অর্থাৎ সোনার বাংলা বাস্তবায়নে সরকারের যে লক্ষ্য, সে ক্ষেত্রে মাদক মূল অন্তরায় হয়ে রয়েছে। এ এক ভয়াবহ ব্যাপার। অথচ মাদক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথাও বলেছেন, এখন প্রতি জেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস করা হয়েছে। লোকবলও বাড়ানো হয়েছে। মন্ত্রীর কথা অনুযায়ী, এটা ভাল উদ্যোগ। তবে এতে সুফল কতটা পাওয়া যাচ্ছে, এ প্রশ্নও উঠেছে। কারণ, মাদকের বিস্তার দিন দিন বেড়ে চলেছে। নতুন নতুন মাদক দেশে প্রবেশ করছে। মাদকের কারখানাও আবিষ্কৃত হচ্ছে। তাহলে লোকবল বৃদ্ধি করে কি ফল পাওয়া যাচ্ছে? মাদক চোরাকারবারিদের কি ধরা যাচ্ছে? ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া যাচ্ছে? আমরা এমন খবর আজ পর্যন্ত পাইনি। বরং দেখেছি, টেকনাফে অভিযান চলাকালে মাদক সম্রাটরা আত্মসমর্পন করে জেলে গিয়ে নিরাপদ অবস্থান নিয়েছে। কিছুদিন পর জামিনে বের হয়ে এসেছে। এই যদি হয় পরিস্থিতি, তাহলে কিভাবে মাদক নির্মূল হবে? সরকার সম্প্রতি সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্টের বিধান চালু করেছে। কোনো চাকরি প্রার্থী ডোপ টেস্টে পজেটিভ হলে সে চাকরি পাবে না। এটি একটি ভালো উদ্যোগ হলেও তা কি মাদক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে কোনো ভূমিকা রাখবে? মাদক চোরাকারবারি গড ফাদারদের যদি নির্মূল করে মাদকাসক্ত শনাক্ত করলে কি মাদক নির্মূল হবে? হবে না। আবার সর্ষের মধ্যে যদি ভূত লুকিয়ে থাকে, তাহলেও মাদক নির্মূল হবে না। কয়েক মাস আগে পুলিশে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে প্রায় সত্তর-আশি জন পজেটিভ হয়েছে। এদের বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেয়া হয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, যে পুলিশ মাদক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল করবে তাদের মধ্যেই অনেকে মাদকাসক্ত। শুধু তাই নয়, অনেকের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় মাদক নির্মূলের বিষয়টি যে কঠিন, তা ব্যাখ্যা করে বলার কিছু নেই। মাদক নির্মূল করতে হলে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। যেমনটি করেছিল মেক্সিকো। ২০০৬ সালে মেক্সিকোতে মাদক চোরাকারবারি সিন্ডিকেট দমন করতে দেশটির সরকার ‘ওয়ার অন ড্রাগস’ ঘোষণা দিয়ে সেনাবাহিনী নমিয়েছিল। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হলে মেক্সিকো সরকার এমন পদক্ষেপ নেয় তা বুঝতে কষ্ট হয় না। আমাদের দেশে মাদক যেভাবে বিস্তার লাভ করেছে তাতে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার বিকল্প নেই। কারণ, দেশে বানের পানির মতো হু হু করে মাদক প্রবেশ করছে। টেকনাফ এলাকাটি এখন ইয়াবা ও মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। টেকনাফের ১১টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ঢুকছে। বাংলাদেশে ইয়াবা চোরাচালানের জন্য মিয়ানমার ৩৭টি কারখানা খুলেছে বলে জানা যায়। শুধু মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমেই নয়, দেশেও ইয়াবা তৈরির কারখানা গড়ে ওঠার সংবাদও প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ চিত্র উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, সর্বনাশা মাদক কিভাবে যুবসমাজকে গ্রাস করে চলেছে এবং ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যদি এখন থেকেই মাদক ও মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা এবং নির্মূলের উদ্যোগ না নেয়া হয়, তবে একটা সময় যদি মেক্সিকোর মতো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশে যেভাবে মাদকের বিস্তার লাভ করছে, এ অবস্থা চলতে থাকলে পারিবারিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না। ইতোমধ্যে এর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। মাদকাসক্তদের কারণে অনেক পরিবারে অশান্তি লেগে আছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। এমনকি খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। মাদকাসক্ত সন্তানের কারণে পিতা-মাতার আহাজারি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে মাদকাসক্তরা খুন, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি রাহাজানির পথ বেছে নিচ্ছে। আবার মাদক চোরাকারবারিদের মধ্যে মাদকের বাজার দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে খুন এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনা অনেকটা নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে রাজধানীজুড়ে ৪৯টি স্পটে মাদকের হাট বসার খবর ইতোমধ্যে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

তিন.
এ কথা সবারই জানা, সব ধরনের অপকর্মের অন্যতম উৎস মাদক। মাদকের নেশা মানুষকে ন্যায়-নীতির পথ থেকে বিচ্যুত করে। পরিবার ও সমাজে যে অশান্তির বীজ বপিত হয়, তার মূলে গেলে দেখা যাবে, সেখানে মাদক ও মাদকাসক্তের ভূমিকা রয়েছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে পারিবারিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে যাওয়া, যুবসমাজের বিপথগামী হওয়ার পেছনে মূল কারণ হয়ে রয়েছে মাদক। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যে পারিবারিক প্রথা আশঙ্কাজনক হারে ভেঙ্গে যাওয়া এবং অধিক হারে যুবসমাজের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে মাদককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। মাদক থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করার জন্য মুসলমানসহ বিভিন্ন ধর্মবিশেষজ্ঞদের এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়েছিল। পার্শ্ববর্তী ভারতও বহুসংকটে নিমজ্জিত হয়ে নৈতিকভাবে একটি দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে, অপরাধ বাড়ছে। এসব সংকটের মধ্যে মাদক ও মাাদকাসক্তি অন্যতম কারণ হয়ে রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কয়েক বছর আগে দেশের যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষার জন্য মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি রেডিও এবং টেলিভিশনে ‘মন কি বাত’ বা মনের কথা নামে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের ছাত্র-ছাত্রী ও তরুণদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা শুরু করেন। তিনি মাদকের বিরুদ্ধে তরুণ সমাজকে সচেতন হওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছিলেন। তরুণদের সামনে মাদককে তিনি ‘থ্রি ডি’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। এই থ্রি ডি হচ্ছে, ডার্কনেস বা অন্ধকার, ডেসট্রাকশন বা ধ্বংস এবং ডিভাস্টেশন বা বিপর্যয়। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, যাদের জীবনে কোনো লক্ষ্য থাকে না, তাদেরই মাদক আকর্ষণ করে। যুব সম্প্রদায়কে লক্ষ্যস্থির করে এগোতে হবে, ঠিক যেভাবে খেলোয়াড়রা এগোয়। তার সাথে কথা বলায় অংশগ্রহণকারী তরুণ-তরুণীরা শপথ করে তারা কখনো মাদক স্পর্শ করবে না এবং মাদকাসক্তকে মাদকমুক্ত করতে ও মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে। সরকার প্রধান যখন তরুণদের সাথে আন্তরিকতা নিয়ে কথা বলেন, তখন তা কতটা দ্রুত কাজ করে, মোদির এ উদ্যোগ থেকে বোঝা যায়। মূল কথা হচ্ছে, মাদক ও এর বিস্তার রোধে রাষ্ট্রের মূল অভিভাবককেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হয়। মাদকাসক্ত ও তরুণ সমাজকে উদ্দীপ্ত করে তুলতে এবং লক্ষ্য স্থিরে রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা পালন করতে হয়। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে শুরুতে কিছু অভিযান চললেও তা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যায়। মাঝে মাঝে কিছু মাদক চোরাকারবারি ধরা পড়লেও তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে বলে মনে হয় না। বরং মাদকের চোরাচালান ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

চার.
মাদকের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ক্রসফায়ার করে এর বিনাশ সম্ভব নয়। এটা কোনো অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ নয়। এ যুদ্ধের কৌশল ভিন্ন। মাদকের উৎস, আগমন, কারা এর সাথে জড়িত-এসবের মূলে যেতে হবে। তাদের ধরতে হবে। তা নাহলে, ভাসমান মাদক ব্যবসায়ী বা বহনকারীদের ক্রসফায়ার করে কোনো লাভ হবে না। এক্ষেত্রে মূল হোতাদের ধরতে হবে। তারা যত প্রভাবশালী হোক বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। সরকার জঙ্গিবাদ ও জঙ্গি দমনে যেভাবে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে দমন করছে, ঠিক একইভাবে মাদক ও মাদক চোরাকারবারি দমন করতে হবে। দেশের ভবিষ্যত যাদের উপর নির্ভর করছে, সেই যুবসমাজকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে এ ধরনের পদক্ষেপের বিকল্প নেই। প্রয়োজনে মাদক চোরাকারবারি নির্মূলে বিশেষ বাহিনী গঠন করতে হবে। দেশের কোটি কোটি তরুণসমাজকে ভয়াবহ বিপর্যয়, ধ্বংস ও অন্ধকারের দিকে ধাবিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে এর বিকল্প নেই। মাদকের বিস্তার যে ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে, তাতে মাদককে এখন প্রধান সমস্যা হিসেবে গণ্য করতে হবে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে মাদক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক সংগঠন এবং সমাজের অভিভাবক শ্রেণীকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকের হাত থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে মা-বাবার দায়িত্ব অনেক বেশি। ছোটবেলা থেকেই তাদের আদরযত্মের পাশাপাশি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তোলার দায়িত্ব তাদেরই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্যারেন্টিং গাইডেন্সের মাধ্যমে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানকে আদরে-ভালোবাসায় রাখতে হয়। ১০ বছর বয়স থেকে শৃঙ্খলাপরায়ণতার ওপর জোর দিতে হয়। আর ১৬ বছর হয়ে গেলে তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশতে হয়। এই বয়ঃসন্ধির সময়েই তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা প্রয়োজন। তারা কোথায় যায়, কাদের সাথে মিশছে, এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা অত্যাবশ্যক। সন্তানের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি না করে তাদের ভালো লাগা ও সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে। তাদেরকে লক্ষ্য স্থির রাখতে উৎসাহ ও অনুপ্রাণিত করতে হবে। সন্তানদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, অনুশাসন ও চিন্তা-চেতনার বিকাশে ভূমিকা রাখতে হবে। সন্তানের প্রতি এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে তাদেরকে যেমন হতাশা গ্রাস করবে না, তেমনি হাতাশা বা ফ্যান্টাসির কারণে মাদকও স্পর্শ করবে না। যুবসমাজকেও বুঝতে হবে মাদক জীবনরক্ষা করে না, জীবন ক্ষয় করে, ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। এটা এক ধরনের আত্মহত্যার শামিল।
darpan.journalist @gmail.com



 

Show all comments
  • Dadhack ৯ জুলাই, ২০২১, ৬:২৫ পিএম says : 0
    মানুষ গাড়ি তৈরি করে. গাড়ি মানুষের গোলাম. গাড়িতে যদি স্টার্ট দিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয় ড্রাইভার ছাড়া তাহলে কি এক্সিডেন্ট হবে না ???????? আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছে এবং তার বিধান দিয়েছেন সে বিধান এর নাম হচ্ছে কোরআন.... কোরআন দিয়ে দেশ শাসন করা হলে দেশে কোন ধরনের দুর্নীতি পাপাচার খুন-গুম ধর্ষণ যিনা-ব্যভিচার চাঁদাবাজি ইভটিজিং অর্থ-সম্পদ পাচার করা সব বন্ধ হয়ে যেত.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদক

২২ অক্টোবর, ২০২২
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন