Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হজ মুসলিম উম্মাহর সামর্থ্যবান ব্যাক্তিবর্গের ফরজ ইবাদত

মুফতি মাওলানা হাফেজ আহসান জামিল | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০৬ এএম

হজ্জ আরবি শব্দ। এর অর্থ : আল কছদু ওয়াল ইরাদাতু, ইচ্ছা বা সংকল্প করা। আল কাছদু ইলা শাইউন আযিমুন, তথা মহান কোন কিছুর ইচ্ছা করা। আযযিয়ারাতু-সাক্ষাৎ করা। To Make Dicisson | To Meet ইত্যাদি। শরয়ী ভাষায় মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট কার্যাবলির মাধ্যমে বায়তুল্লাহ যিয়ারত করার সংকল্প করার নামই হজ্জ।

অন্যভাবে বলা যায় যে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে হজ্জের নির্দিষ্ট দিনগুলিতে শরীয়ত নির্ধারীত পন্থায় কাবা ও অনান্য নির্দিষ্ট স্থানগুলো যিয়ারত করার নামই হচ্ছে হজ্জ। হজ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় হজ্জের গুরুত্ব অনেক। Hajj is importent to be intimate with Allah. মহান আল্লাহর প্রিয় আস্থাভাজন হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল হজ্জ। মিল্লাতের পিতা হযরত ইব্রাহিম আ. সর্বপ্রথম কাবাকে কেন্দ্র করে আল্লাহর নির্দেশিত নিয়মানুযায়ী হজ্জ আদায় করেন। এরপর মহান আল্লাহ ইব্রাহিম আ. কে এর প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেন এই বলে “আর লোকদের মধ্যে হজ্জের ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার নিকট দূরবর্তী স্থান হতে পায়ে হেটে ও উটের উপর সওয়ার হয়ে আসবে। যাতে তারা তাদের কল্যাণ এবং নির্দিষ্ট দিনগুলিতে আল্লাহর নাম স্বরণ করে, তার দেয়া জীবিকা হিসেবে চতুষ্পদ জন্তু জবেহ করার সময়।
অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার করো এবং অভাব গ্রস্থকে আহার করাও’ মহান আল্লাহ যখন হযরত ইব্রাহিম আ. কে হজ্জের ঘোষণা দেবার জন্য বলেছেন ইব্রাহিম আ. বল্লেন! হে প্রভূ! আমার আওয়াজ কিভাবে পৌছাবে? আল্লাহ তায়ালা বললেন তুমি ঘোষণা দাও পৌছানোর দায়িত্ব আমার কূদরতের। ইব্রাহিম আ.তখন আবু কুবাইস পাহাড়ে ওঠে কানে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে চারদিকে ফিরে হজ্জের ঘোষণা দিলেন। তিনি বললেন “হে মানব সকল! আল্লাহর নির্দেশ এই ঘরের হজ্জ তোমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা তোমাদের প্রভূর ডাকে সারা দাও”। সে সময় সকলে তার ডাকে সারা দিয়ে লাব্বাইক বলল। এমনকি মায়ের পেটে এবং পিতার মেরুদন্ডে যারা ছিল তারাও সারা দিল। কিয়ামত পযর্ন্ত যারাই হজ্জ করবে তারা সকলেই ইব্রাহিম আ. এর সেই আহবানে সারা দিয়েছিল।
আর হজ্জ হচ্ছে সবচেয়ে বড় ঐক্য সম্মেলন। হজ্জের মধ্যে যে সকল কার্যক্রম রয়েছে পোষাক, জীবন যাত্রা, অনুভূতির মিল প্রত্যেকটি মুসলিম উম্মাহর বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধে সাহায্য করে। মাওলানা মোহাম্মদ আলী বলেন, “হজ্জের মাধ্যমে মানুষের বর্ণ বৈষম্য দূরীভূত হয়”। আর রাসূল সা. উম্মতকে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন কেননা ইসলামের এই মহান বিধানটি নবম হিজরীতে উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর ফরজ হয়। এইজন্য শরীয়তের বিধান হচ্ছে সামর্থ্যবান নারী পুরুষ সকলের উপর জীবনে একবার হলেও হজ্জ ফরজ।
হজ্জের এত বেশি গুরুত্ব যে আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন নবীকরীম সা. কে জিজ্ঞেস করা হল কোন আমল অধিক উত্তম? তিনি বলেন আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ইমান। জিজ্ঞেস করা হল অতঃপর কি? তিনি বললেন আল্লাহর প্রতি জিহাদ। জিজ্ঞেস করা হল তারপর কোনটি সর্বোত্তম বললেন কবুল হওয়া হজ্জ (বুখারী মুসলিম)।
হজ্জ যাদের উপর ফরজ তাদেরকে তারাতারি হজ্জ করার জন্য তাগিদ এসেছে বিশ্বনবীর পক্ষ হতে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাঃ বলেছেন হজ্জের ইচ্ছা পোষণ কারি যেন তারাতাড়ি তা সম্পন্ন করে ফেলে। কেননা সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তার উট হারিয়ে যেতে পারে বা তার ইচ্ছা বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়তে পারে।
এ গুরুত্বপূর্ণ আমলটি সকলের উপর ফরজ নয়। এটি ফরজ হতে কিছু শর্ত প্রয়োজন। মুসলমান হওয়া। স্বাধীন হওয়া। প্রাপ্ত বয়স্ক ও স্থীর মস্তিষ্ক হওয়া। সুস্থ হওয়া। দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন হওয়া।পথ খরচ থাকা। হজ্জে আসা যাওয়ার পথ নিরাপদ হওয়া। মহিলার সাথে স্বামী বা কোন মুহাররাম পুরুষ থাকা। যান বাহনের সুবিধা থাকা। জ্ঞান বান হওয়া।
উপরোক্ত শর্তাবলী যার মধ্যে বিদ্যমান সে যদি হজ্জ না করে পরকালে এর জন্য মহান রবের কাছে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। বিশ্ব মুসলিমের অন্যতম মিলন কেন্দ্র হল হজ্জ। এতে বিশ্ব মুসলিম পরস্পরের ভ্রতৃত্ববোধ ও মিলন কেন্দ্র পরিণত হয়। তা ছাড়াও মুসলমানদের প্রাণের স্থানগুলো পবিত্র বায়তুল্লাহ, মসজিদে নববী ও প্রিয় নবীজি সা. এর পবিত্র রওজা মোবারক সৌদিতে থাকায় ধর্ম প্রাণ মুসলিম মাত্রয় জীবনে একবার হলেও পবিত্র বায়তুল্লাহ ও নবীজির রওজায় যেতে চায়। নবীজি সা. এর রওজার পাশে দাড়িয়ে সালাম দিতে চায়। কিন্তু গত দুটি বৎসর যাবত করোনা মহামারির কারণে মুসলমানরা তাদের প্রাণের কেন্দ্রে যেতে পারছেনা। যেহেতু পৃথিবীতে কোন কিছুই মহান আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া হয়না এক্ষেত্রে আমাদেরকে বুঝতে হবে যে মহামারি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে এক্ষেত্রে আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিৎ। চিকিৎসকগণ যে পরামর্শ দেন তা মেনে চলা উচিৎ ও আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তওবা করা এবং ফরজ হজ্জ যা আমার আপনার উপর আদায় যোগ্য হয়ে আছে তা পালনের জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়া উচিৎ। মহান আল্লাহ সামর্থ্যবান সকলকে এবং যাদের উপর হজ্জ ফরজ কিন্তু করোনা মহামারির জন্য করতে পারছেননা তাদের প্রত্যেককে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্জ সম্পাদন করার তাওফিক দিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজ

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ