Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্কুলছাত্রের চিঠিতে বিরল দৃষ্টান্ত প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৭ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : পটুয়াখালীর চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখেছিল। সেই চিঠির জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চিঠি এখনো হাতে না পেলেও জবাব আসার খবরে উচ্ছ্বসিত সে। চিঠিতে পায়রা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রের নাম শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র সে।
শীর্ষেন্দুর চিঠির জবাবে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন-
স্নেহের শীর্ষেন্দু,
আমার স্নেহাশীষ নিও। তোমার চিঠি পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। তুমি শুধু এ দেশের একজন সাধারণ নাগরিক নও, বরং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়ার অগ্রজ সৈনিক। আমি জানি, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীটি অত্যন্ত খর¯্রােতা। নিজের পিতা-মাতাসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই নদীকেন্দ্রিক তোমার নিরাপত্তা সচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বুঝতে পারি তোমার বীর মুক্তিযোদ্ধা দাদুর প্রভাব রয়েছে তোমার ওপর। মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তোমাকে আশ্বস্ত করছি। তোমার সার্বিক মঙ্গল কামনা করি। আমার দোয়া নিও। তোমার বাবা-মাসহ মুরুব্বিদের সালাম ও ছোটদের দোয়া দিও। অনেক অনেক আদর নিও। Ñশেখ হাসিনা
চিঠিটি এসেছে শীর্ষেন্দুর স্কুলের ঠিকানায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান পৃঃ ৫ কঃ ৬
স্কুলছাত্রের চিঠিতে বিরল দৃষ্টান্ত
বলেন, শীর্ষেন্দুর কাছে লেখা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি আজ (সোমবার) বেলা ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে তুলে দেওয়া হবে। এই চিঠি ২০ সেপ্টেম্বর স্কুলে এসে পৌঁছে। বিষয়টি শীর্ষেন্দু ও তার বাবা-মাকে জানানো হয়েছে।
তিন পৃষ্ঠার সেই চিঠিতে শীর্ষেন্দু লিখেছিলÑ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
সালাম ও শুভেচ্ছা নেবেন। আমি একজন সাধারণ নাগরিক। আমার নাম শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। পিতা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, মা শীলা রাণী। আমি পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র। আমার দাদু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার নাম অবিনাশ সন্নামত। আমার মা সরকারি চাকরি করেন। আমি আপনার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকীতে আপনার পিতার শৈশবকাল নিয়ে রচনা লিখে তৃতীয় স্থান অধিকার করি। আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠিতে। আমাদের মির্জাগঞ্জ পায়রা নদী পার হয়ে যেতে হয়। এটি পটুয়াখালীর একটি উপজেলা। এ নদীতে প্রচ- ঢেউ। মানুষ ভয় পায়। কখনো নৌকা ডুবে যায়। কখনো কখনো ট্রলার ডুবে যায়।
আমার চেয়ে ছোট ভাইবোন তাদের মা-বাবাকে হারায়। তাই আমি চাই না কারও মা-বাবা চলে যান। আমি আমার মা-বাবাকে প্রচ- ভালোবাসি। তাদের হারাতে চাই না। তাই আপনার কাছে একটাই অনুরোধ যে আপনি মির্জাগঞ্জ পায়রা নদীর ওপর ব্রিজের ব্যবস্থা করুন। তা যদি আপনি পারেন, তা হলে একটু আমাদের জন্য কষ্ট করে এই ব্রিজ তৈরি করার ব্যবস্থা করুন। আজ আর নয়। ইতি আপনার দেশের একজন সাধারণ নাগরিক। শীর্ষেন্দু বিশ্বাস।
জানা গেছে, মা-বাবার চাকরির সুবাদে পটুয়াখালী শহরের মুকুল সিনেমা সড়কে ভাড়া বাসায় থাকে শীর্ষেন্দুরা। জেলা শহরে বসবাস করলেও তাদের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের ছয়আনি গ্রামে।
শীর্ষেন্দুর মা শীলা রাণী সমবায় অধিদফতর পটুয়াখালী কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর। বাবা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। মা-বাবার একমাত্র সন্তান শীর্ষেন্দু।
গত ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে চিঠিটি লিখে পাঠিয়েছিল শীর্ষেন্দু। আর প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা চিঠি তার স্কুলে পৌঁছায় ২০ সেপ্টেম্বর, যাতে দেখা যায় চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর করেছেন ৮ সেপ্টেম্বর। শীর্ষেন্দুর মা শীলা রাণী সন্নামত বিবিসিকে জানান, তার ছেলে ডাকযোগে চিঠিটি পাঠিয়েছিল।
তিনি বলেন, পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একজন কর্মকর্তা ফোন করে জানান, চিঠি তারা পেয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী জবাব দিতে আগ্রহী। কোন ঠিকানায় চিঠি পাঠাবেন প্রধানমন্ত্রী, সেটিও তখন তিনি জেনে নেন।
শীলা রাণী জানান, শীর্ষেন্দুর স্কুল থেকে তাদের জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর চিঠি এসে পৌঁছেছে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর স্কুলেই এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক এটি শীর্ষেন্দুর কাছে হস্তান্তর করবেন।
তিনি জানান, শীর্ষেন্দু তার একমাত্র সন্তান। সে এবার ঝালকাঠি থেকে পটুয়াখালীতে আসার সময় নদীতে ঝড় উঠলে প্রচ- ভয় পায়। এর পর নিজে থেকেই চিঠিটি লিখে ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে পাঠিয়ে দেয়।
শীলা রাণী উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অফিসে আমার ছেলের চিঠিটি সত্যিই যাবে আর তিনি জবাব দেবেন, এটা তো স্বপ্নেও ভাবিনি। অনেক ভালো লাগছে আমাদের। এলাকার মানুষও খুব খুশি।
শীর্ষেন্দুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বিবিসিকে বলেন, একটি মাসুম বাচ্চার লেখার জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, এটি বিশাল ঘটনা আমাদের জন্য। এটা আসলেই বিরল।



 

Show all comments
  • মাহমুদ ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:১৬ পিএম says : 0
    আশা করি এবার মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ হবে
    Total Reply(0) Reply
  • MASUD ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৫:০১ পিএম says : 0
    THANKS BOY
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্কুলছাত্রের চিঠিতে বিরল দৃষ্টান্ত প্রধানমন্ত্রীর
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ