Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দের সভা অনুষ্ঠিত

৮ দফা দাবি পেশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল আলহাজ্ব শাব্বীর আহমদ মোমতাজীর সঞ্চালনায় জমিয়াতের আঞ্চলিক দায়িত্বশীলগণের সাড়ে ৩ ঘণ্টাব্যাপী জুম মিটিং গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১.৩০ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী সকলের রূহের মাগফেরাত ও আক্রান্তদের সুস্থ্যতা কামনা করা হয়। এতে জমিয়াতের ইন্তেকালপ্রাপ্ত দায়িত্বশীলগণের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের রূহের মাগফেরাত কামনা করা হয়। ১০টি আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিবগণ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে বেশ কিছু দাবি উত্থাপিত ও অতিদ্রুত তা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসা অধিদপ্তরের প্রতি আহবান জানানো হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-

(১) মাদরাসার স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী মাদরাসাসমূহে প্রাইমারি স্কুলের মত সুযোগ-সুবিধা না দেয়ায় ইবতেদায়ী শাখায় ছাত্রশূন্যতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘ ১১ বছর এ বিষয়ে বারবার দাবি উত্থাপিত হলেও এর কোন সুরাহা হয়নি। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। (২) স্কুল ও কলেজের জনবল কাঠামোর সাথে মাদরাসা জনবল কাঠামোর বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানানো হয়। ৩। মাদরাসার গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে মাদরাসা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য অফিস আদেশ দানের নিমিত্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহবান জানানো হয়। (৪) জমিয়াতের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সকল অনিয়ম, সিদ্ধান্তের দীর্ঘসূত্রিতায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। মহাপরিচালকে আন্তরিকতা থাকা সত্তে¡ও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের দীর্ঘসূত্রিতায় এবং অভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতার জন্য মাদরাসা শিক্ষা আজ হুমকির সম্মুখীন। যতদ্রুত সম্ভব সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে সমাধান করার আহবান জানানো হয়। (৫) জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও ছাত্র সংগঠনসমূহের শতাব্দীর আন্দোলনের ফসল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, শিক্ষাসচিবসহ শিক্ষা পরিবারের আন্তরিকতার এ অনন্য নিদর্শন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক তৎপরতা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। জমিয়াত নেতৃবৃন্দ দুঃখ ও ক্ষোভের সাথে উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ও ২০১৫ সালে কার্যক্রম শুরু হওয়া ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ ৭ বছরে একটি অর্ডিন্যান্স করতে ব্যর্থ হয়েছে, নেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন চাকরীবিধি, নেই অর্থবিধি, অথচ শতশত লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে, কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এসব বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ভাইস চ্যান্সেলরের প্রতি আহবান জানানো হয়। সাথে সাথে করোনা পরিস্থিতির কারণে গভর্নিংবডির মেয়াদ আরেক ধাপ বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়। (৬) নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, এনটিআরসিএ’র নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকায় সারাদেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আরবি প্রভাষক পদে মহিলা নিয়োগ চাপিয়ে দিয়ে মাদরাসার শিক্ষার মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এনটিআরসিএ প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় আরবি বিষয়ের গুরুত্ব না দিয়ে কলেজের বিষয় চাপিয়ে দেয়ায় মাদরাসা পড়–য়া মেধাবী ছাত্রগণ বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারছেন না। মহিলা প্রভাষকগণ আলিম, ফাযিলের মূল কিতাব পড়াতে বেশিরভাগ অক্ষম। যাতে শিক্ষার্থীগণ উন্নত শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এনটিআরসিএ’র প্রাথমিক বাছাই ও চূড়ান্ত পরীক্ষায় কলেজের বিষয়গুলো কমিয়ে আরবি বিষয়সমূহের উপর জোর দিলে মানসম্মত আরবি প্রভাষক পাওয়া যাবে। আর মহিলা মাদরাসায় শতভাগ মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগ দিয়ে পুরুষ মাদরাসায় মহিলা শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি শিথিল করার আহবান জানানো হয়। (৭) জনবল কাঠামোতে কামিল ডিগ্রিধারীদের স্কুলের সিনিয়র মৌলভির সমস্কেল এবং আলিম মাদরাসার জ্যেষ্ঠ প্রভাষকদের উচ্চপদে আসীন হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে জনবল কাঠামো সংশোধনের আহবান জানানো হয়। (৮) ২০২৩ সাল থেকে চালুর প্রস্তাবিত কারিকুলাম ও সিলেবাস মাদরাসার জন্য আলাদা করার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রেখে যোগ্য আলেম তৈরির কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।
(২) জুম বৈঠকে অংশগ্রহণকারী আঞ্চলিক আহবায়ক ও সদস্যসচিবগণ হচ্ছেন, প্রিন্সিপাল ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমান ও প্রিন্সিপাল মাও. হোসাইন আহমদ (কুমিল্লা অঞ্চল), প্রিন্সিপাল আ খ ম আবুবকর ছিদ্দীক ও প্রিন্সিপাল মাও. জাফর ছাদেক (ঢাকা অঞ্চল), প্রিন্সিপাল মাও. আ ন ম হাদিউজ্জামান ও প্রিন্সিপাল মাও. আবদুর রাজ্জাক (রংপুর অঞ্চল), ভাইস প্রিন্সিপাল মাও. নুরুল ইসলাম ও প্রিন্সিপাল মাও. মাহফুজুর রহমান (খুলনা অঞ্চল), প্রিন্সিপাল ড. ইদ্রিস খান ও প্রিন্সিপাল মাও. আবদুল বাতেন (ময়মনসিংহ অঞ্চল), প্রিন্সিপাল আবুল ফরাহ মোহাম্মদ ফরিদউদ্দিন ও প্রিন্সিপাল মাও. ইসমাইল (চট্টগ্রাম অঞ্চল), প্রিন্সিপাল মাও. কমরুদ্দীন ফুলতলীর প্রতিনিধি প্রিন্সিপাল মাও. সরওয়ারে জাহান ও প্রিন্সিপাল মাও. মঈনুল ইসলাম পারভেজ (সিলেট অঞ্চল), প্রিন্সিপাল মাও. আবদুর রব ও ভাইস প্রিন্সিপাল মাও. মোবাশ্বেরুল হক নাইম (বরিশাল অঞ্চল), প্রিন্সিপাল মাও. মোকাদ্দাসুল ইসলাম ও প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল হাই বারী (রাজশাহী অঞ্চল), প্রিন্সিপাল মাও. ইউসুফ মৃধা ও প্রিন্সিপাল মাও. আবু রাফে (ফরিদপুর অঞ্চল)।

বৈঠকে মাস্ক ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারী নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সমগ্র বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি আহবান জানানো হয়। তওবা-ইস্তেগফার, বেশি বেশি দরুদ-সালাম পেশ করে এ মহামারি থেকে মুক্তি কামনায় দোয়া অব্যাহত রাখার আহবান জানানো হয়। সভাশেষে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি, ইন্তেকালপ্রাপ্ত জমিয়াত নেতৃবৃন্দের রূহের মাগফেরাত ও গাইবান্ধা জেলার সভাপতি প্রিন্সিপাল এবাদুর রহমানের রোগমুক্তি কামনা করে মুনাজাত পরিচালনা করেন ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জমিয়াতুল মোদার্রেছীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ