Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অবশেষে বিক্ষোভের মুখে শুল্ক প্রত্যাহার করল কিউবা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২১, ৯:১৪ পিএম

কিউবার কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের পর থেকে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় চাপের মুখে খাদ্য ও ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, সোমবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। বছরের শেষ পর্যন্ত তা বহাল থাকবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ওপর আমদানি শুল্ক সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এই দাবি ছিল অনেকের। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার ছিল। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের পর সরকার বিষয়টি নতুন করে পর্যালোচনা করবে।’

এখন ১০ কেজির বেশি ওষুধ নিয়ে কিউবায় যেতে কর দিতে হয়। নির্ধারিত পরিমাণ খাদ্য এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী নেওয়ার অনুমোদন থাকলেও দিতে হয় রাজস্ব শুল্ক। এখন থেকে এক্ষেত্রে আর কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

কিউবার অর্থনীতির চালক হচ্ছে পর্যটন। কিন্তু করোনার কারণে পর্যটন একেবারে বন্ধ। এর বিরাট প্রভাব পড়েছে কিউবার অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতির ওপর। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুৎ ঘাটতি এবং খাদ্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকট।

এ বছরের শুরুতে সরকার একগুচ্ছ নতুন অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর পাশাপাশি বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু এরপর জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করেছে।

কলম্বিয়ার পন্টিফিকিয়া জাভেরিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক পাভেল ভিডালের অনুমান, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কিউবায় জিনিসপত্রের দাম ৫০০ শতাংশ হতে ৯০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। যা নিয়ে দেশটিরে মানুষ ক্ষুব্ধ।

গত বছর হতে কিউবার সরকার এমন কিছু দোকান খুলেছে যেখানে কিউবার মানুষ বৈদেশিক মুদ্রায় খাবার এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারে। কিন্তু স্থানীয় লোকজন এসব দোকান নিয়ে ক্ষুব্ধ, কারণ তারা বেতন পান তাদের জাতীয় মুদ্রা পেসোতে।

কিউবার মানুষ তেল, সাবান বা মুরগি কেনার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে, এই মহামারির সময় এটি প্রতিদিনের দৃশ্য। একেবারে সাধারণ ওষুধ পাওয়া যাচ্ছিল না ফার্মেসি বা হাসপাতালগুলোতে। অনেক প্রদেশে ময়দা ফুরিয়ে যাওয়ায় কুমড়ার রুটি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছিল।

কিউবায় কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর এর আগে সবচেয়ে সবচেয়ে বড় সরকার বিরোধী বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল ১৯৯৪ সালে হাভানায়। তবে তখন আসলে সেখানে ঠিক কী ঘটেছিল, বেশিরভাগ মানুষ তা জানতেই পারেনি। কিন্তু প্রায় তিন দশক পর এবার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গত ১১ জুলাই কিউবার এক ছোট্ট শহর সান আন্তনিও ডে লস বানোসোর একটি বিক্ষোভ ভাইরাল হয়েছিল। এই শহরটি রাজধানী হাভানা থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটার দক্ষিণে। এর জেরে শুরু হয় দেশজুড়ে বিক্ষোভ। এখনো সরকারবিরোধী সেই বিক্ষোভ চলছে।

কিউবাজুড়ে নজিরবিহীন এ সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ইতোমধ্যে কয়েক ডজন মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন। সোমবার রাজধানী হাভানার শহরতলীতে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবরও নিশ্চিত করেছে দ্বীপ রাষ্ট্রটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম। রোববার থেকে কিউবা সরকার মোবাইল ইন্টারনেটের গতি কমায়।

২০১৮ সালে দেশটিতে মোবাইল ইন্টারনেট চালু করা হলেও তা নিয়ন্ত্রণে রাখে সরকার। আড়াই বছর আগে মোবাইল ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর থেকে সোশাল মিডিয়া সেখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিক্ষোভ দমনে কমিউনিস্ট সরকার ইন্টারনেটকে হাতিয়ার বানাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কিউবা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ