Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সুন্দরবনের খালে ভেসে আসছে মৃত ডলফিন

সান্তানুর রহমান খোকন, শরণখোলা (বাগেরহাট) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

সুন্দরবনে মারা যাচ্ছে ডলফিন। মৃত ডলফিনগুলো জোয়ারের টানে ভেসে আসছে বনসংলগ্ন নদ-নদীতে। গতকাল দুপুরে পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের সামনে শরণখোলা-বগী ভারাণী খালের উত্তর পারে ভেসে আসে এমনই একটি শুশুক প্রজাতির মৃত ডলফিন। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে শুশুকটি উদ্ধার করেন শরণখোলা স্টেশনের বনরক্ষীরা। পরে সেটি রেঞ্জ অফিস চত্বরে মাটিচাপা দেয়া হয়।
এর আগে গত ৫ মে মোরেলগঞ্জের পানগুছি নদী থেকে একটি এবং ৩ মার্চ শরণখোলার ভোলা নদীর চর থেকে আরো একটি মৃত শুশুক উদ্ধার করে বনবিভাগ। এ নিয়ে চলতি বছরে তিনটি শুশুক প্রজাতির মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কি কারণে ডলফিন মারা পড়ছে তা বলতে পারছে না বনবিভাগ। বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগও এর সঠিক কারণ জানাতে পারেনি।
এদিকে, পর পর তিনটি ডলফিনের মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট একাধিক সংগঠন। পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে রেঞ্জ অফিসের অপর পাড়ে (উত্তর পাড়) প্রাইমারি স্কুলের সামনে শরণখোলা-বগী ভারাণী খালে একটি মৃত ডলফিন ভেসে আসার খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে সেটি উদ্ধার করে রেঞ্জ অফিসে আনা হয়।
এসিএফ জয়নাল আবেদীন জানান, ডলফিনটি শুশুক প্রজাতির। এর শরীরে কোনো ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়নি। স্ত্রী ডলফিনটির বয়স প্রায় আড়াই বছর। দৈর্ঘ্য চার ফুট তিন ইঞ্চি, প্রস্থ দুই ফুট ৮ ইঞ্চি, ওজন ১৮ কেজি এবং মুখে ৭২টি দাঁত রয়েছে। কমপক্ষে তিন দিন আগে মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহ করে রেঞ্জ অফিস চত্বরে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে ডলফিনটি।
সুন্দরবন সহব্যবস্থাপনা কমিটির শরণখোলা শাখার সহসভাপতি এম ওয়াদুদ আকন ও সুন্দরবন সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক সাংবাদিক নজরুল ইসলাম পাঁচ মাসের ব্যবধানে তিনটি ডলফিন মারা যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবছেন না।
তারা বলেন, প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে সুন্দরবন। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয়টি হচ্ছে চোরা মৎস্য শিকারিদের বিষ দিয়ে মাছ ধরা। এদের বিষে বনের নদী-খালের পানি বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। তাছাড়া পেশাজীবী ও পর্যকটদের নিক্ষিপ্ত বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পানি। এর ফলে শুধু ডলফিন নয়, গোটা বন হুমকির মুখে পড়ছে। এ ব্যাপারে বনবিভাগের আরো কঠোর হতে হবে।
সুন্দরবনের বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (ডিএফও) নির্মল কুমার পাল বলেন, মৃত ডলফিনটি শুশুক প্রজাতির। যেহেতু এর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই, সে কারণে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলা যায়। তাছাড়া একটি ডলফিন ১৫ থেকে ২০ বছর বাঁচে। উদ্ধার হওয়া ডলফিনটির বয়সও কম। তাই নমুনা পরীক্ষা করলেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
ডিএফও নির্মল কুমার আরো জানান, সুন্দরবনে ছয়টি ডলফিন অভয়াশ্রম রয়েছে। এর মধ্যে শরণখোলা রেঞ্জের দুধমুখীতে একটি। এই অভয়াশ্রমে ইরাবতী ও শুশুক এই দুই প্রজাতির ডলফিনের বাস। ডলফিনের স্বাভাবিক চলাচল ও নিরাপদ প্রজননের জন্য এসব অভয়াশ্রমে মৎস্য আহরণ ও অহরহ নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ। ডলফিন সংরক্ষণে বনবিভাগের পাশাপাশি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক একাধিক সংস্থা কাজ করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত ডলফিন

২৪ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ