Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

করোনা শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রায় পঙ্গু করে ফেলেছে

এম এইচ খান মঞ্জু | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার অপরিণামদর্শী মনোভাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে জাতিসংঘের দুই সংস্থা ইউনিসেফ ও ইউনেস্কো। সবাইকে টিকা দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় না থেকে স্কুল খুলে দিয়ে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরুর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থা দুটি। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর ও ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে অ্যাজুল যৌথ বিবৃতিতে নীতিনির্ধারক এবং সরকারগুলোর প্রতি একটি প্রজন্মকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষায় নিরাপদে স্কুল খুলে দেওয়ার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বে কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব শুরুর পর ১৮ মাস পেরিয়ে গেছে; লাখ লাখ শিশুর পড়ালেখা এখনো ব্যাহত হচ্ছে। এখনো ১৯টি দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ থাকায় ১৫ কোটি ৬০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইউনিসেফ ও ইউনেস্কোর আহ্বান দেড় বছর ধরে আমাদের দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত বদলাতে উদ্বুদ্ধ করবে, আমরা এমনটিই আশা করতে চাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থেই চালু হোক সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।

প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শহরাঞ্চলের কিছু শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ পেলেও গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সেই সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। এতে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ছে। গত বছরের শেষ দিকে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা খোলা হয়নি। বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু টিকাদান কর্মসূচির যে গতি দেখা যাচ্ছে, তাতে আগামী এক বছরেও সব শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া যাবে কি না, তা অনিশ্চিত। তার অর্থ আরো এক বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, আরো অন্তত এক বছর তা হতেই থাকবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই দীর্ঘ ছুটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। বহু শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। করোনাকালে অভিভাবকদের আয়-উপার্জন কমে যাওয়ায় অনেককে কাজে লেগে যেতে হয়েছে। অনেক কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য এখন পর্যন্ত সেভাবে টিকাও নেই। তাহলে তাদের স্কুল খুলে দেওয়ার কী হবে?
দেশে করোনা সংক্রমণ হয় গত বছরের মার্চ মাসে। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, অফিস-আদালত সব কিছুই বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিছুদিন পর শর্ত সাপেক্ষে কলকারখানা, অফিস, মার্কেটসহ প্রায় সব কিছুই খুলে দেওয়া হয়। খোলা হয়নি কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা কি ঘরে বসে থাকছে? হাট-বাজার, খেলার মাঠসহ সর্বত্রই শিক্ষার্থীদের চলাচল রয়েছে। বরং স্কুল বন্ধ থাকায় আড্ডা, ঘোরাঘুরি বেশি হচ্ছে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি থাকছে। শিক্ষাঙ্গনে যেতে না পারায় তাদের যে কী অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, সেটিই বিবেচনায় নিতে বলেছে জাতিসংঘের অধীন এই দুটি সংস্থা। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসছে দেশে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন কীভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কতভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু ঝরে পড়া নয়, অনেক শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। বিষয়গুলো যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

দেশে প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগে উন্নীত হয়েছিল। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ছেলে ও মেয়েদের অংশগ্রহণ প্রায় সমান হয়েছিল। ঝরে পড়ার হারও অনেক কমেছিল। এখন সব হিসাবই উল্টে যেতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, ঝরে পড়া রোধে দ্রুত কিছু করা প্রয়োজন। আমাদের মনে রাখতে হবে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে তা শুধু ব্যক্তির জন্য নয়, জাতির জন্যও এক অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে।
লেখক: সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রাক্তন প্রিন্সিপাল এম এইচ খান ডিগ্রী কলেজ, গোপালগঞ্জ।



 

Show all comments
  • Dadhack ২৭ জুলাই, ২০২১, ৫:৫৫ পিএম says : 0
    Our Government is systematically destroying our Education System. .............
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন