Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পণ্য পরিবহন রফতানিতে অচলাবস্থা কন্টেইনার ছাড়া ফিরছে বিদেশী জাহাজ

লাগাতার প্রাইম মুভার ধর্মঘট

প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : কন্টেইনার পরিবহনকারী গাড়ির মালিক ও শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে কন্টেইনারবাহী আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন অচল হয়ে পড়েছে। টানা তিনদিনের প্রাইম মুভার ধর্মঘটে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ২২ শতাংশ আমদানি পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে।
সময়মতো বন্দরে পৌঁছাতে না পারায় রফতানি পণ্যবোঝাই কন্টেইনার ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জাহাজ। এতে করে রফতানিকারকেরা পড়েছেন মহাবিপাকে। সময়মতো পণ্য শিপমেন্ট করতে না পারায় অর্ডার বাতিলসহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে রফতানিকারকেরা। অন্যদিকে আমদানিকৃত পণ্যও পড়ে আছে কন্টেইনারে। এতে করে আমদানিকারকেরাও লোকসানের মুখে পড়েছেন। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পণ্যমূল্যের উপর।
ধর্মঘটের কারণে প্রায় ১ হাজার কন্টেইনার ছাড়াই বন্দর ছেড়ে যেতে হয়েছে কয়েকটি জাহাজকে। বন্দর আর আইসিডিগুলোতে জমছে কন্টেইনারের স্তূপ। ফলে ক্রমেই অচলাবস্থার দিকে যাচ্ছে বন্দর পরিস্থিতি। তাই দ্রুত সংকটের সমাধান চেয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। সড়কে অন্য সব ধরনের যানবাহন থাকলেও গত তিনদিন নেই কেবল কন্টেইনারবাহী ট্রেইলর বা প্রাইম মুভার। কারণ, বন্দর ও এর আশপাশে অলস বসে আছে ট্রেইলরগুলো। কন্টেইনার আর পণ্যসহ গাড়ির ওজন সর্বোচ্চ ৩৩ টন হতে হবে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এমন এক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার থেকে চলছে প্রাইম মুভারের ধর্মঘট।
আন্দোলনকারীদের দাবী, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে আলোচনা ছাড়াই ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাই এ নিয়ম মানা কঠিন। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানির প্রায় ২২ শতাংশ পণ্য ট্রেইলরযোগে বেসরকারি আইসিডিতে নেয়া হয়। আর প্রতিদিন বন্দর থেকে যে প্রায় ৫ হাজার কন্টেইনার মালামাল খালাস হয়, তার অর্ধেকের কাছাকাছি পরিবহন হয় ট্রেইলরে। অপরদিকে, বন্দরে প্রতিদিন প্রবেশ করে প্রায় ২ হাজার রফতানি পণ্যবাহী কন্টেইনার।
এখন সবক্ষেত্রেই নেমে এসেছে চরম স্থবিরতা। এই অচলাবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্দশায় দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরী পোশাক খাত। লাগাতার ধর্মঘটের কারণে পণ্য রফতানি কার্যত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার জোয়ারের সময় এমভি আরসুলা নামের একটি জাহাজ মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বন্দরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ত্যাগ করে। রপ্তানি পণ্য ভর্তি ১৭৭ একক কনটেইনার না পেয়ে জাহাজটি বন্দরের জেটি ত্যাগ করেছে। একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনাধীন এমভি এক্সপ্রেস লোটসি জাহাজও রপ্তানি পণ্যের ৬৭০ একক কন্টেইনার জাহাজে বোঝাই করতে পারেনি। একইভাবে ওইএল কলম্বো নামের আরেকটি জাহাজও রপ্তানি পণ্যভর্তি অন্তত ৫০ একক কন্টেইনার পায়নি।
ধর্মঘটের কারণে এসব সংগঠনের আওতাধীন আট হাজার গাড়িতে আমদানি-রফতানি পণ্যবোঝাই কন্টেইনার আনা-নেয়া বন্ধ রয়েছে। এসব গাড়ি ছাড়া কন্টেইনার পরিবহন করা যায় না। রফতানি পণ্য বিদেশি ক্রেতার হাতে তুলে দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত ফরোয়ার্ডারদের সংগঠন ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম জানান, বন্দর থেকে রফতানি পণ্যবোঝাই জাহাজগুলো নেয়া হবে সিঙ্গাপুর, পোর্ট কেলাং, তানজুং পেলেপাস ও কলম্বো বন্দরে। সেখানে অপেক্ষমাণ ইউরোপ-আমেরিকাগামী বড় জাহাজে তুলে দেয়া হবে। বন্দর থেকে নির্ধারিত জাহাজে তুলে দেয়া না গেলে ওই চারটি বন্দরে অপেক্ষমাণ বড় জাহাজেও পণ্য পরিবহনের সময়সূচি রক্ষা করা যাবে না। এতে পুরো রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশ কন্টেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার একক রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার ডিপো থেকে কন্টেইনার পরিবহনকারী গাড়িতে বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেয়া হয়। এখন ডিপোতে রপ্তানি কন্টেইনারের স্তূপ বাড়ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে গাড়িভেদে পণ্য পরিবহনের পরিসীমা বেঁধে দেয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়ি মালামালসহ ৩৩ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করতে পারবে। এর বেশি হলে স্তরভেদে ২ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা মেট্রো চেম্বারের
অচলাবস্থা নিরসনে বাণিজ্য মন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার। চেম্বারের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত কয়েক দিন ধরে প্রাইম মুভার-ট্রেইলার ধর্মঘটের কারণে বর্তমানে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সহায়ক প্রায় ১৬টি অফ-ডকও চরম বিপাকে পড়ে কার্যক্রম চালাতে পারছে না। ইতিমধ্যে অফ-ডক থেকে বন্দরে রফতানি পণ্যের কন্টেইনার না আসার ফলে বিদেশী জাহাজ প্রায় ৯শ’টি পণ্যবাহী কন্টেইনার না নিয়ে বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং বহু রফতানি চালান বিভিন্ন অফডকে অচল হয়ে পড়ে আছে। বিরাজমান এ পরিস্থিতিতে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং এর ফলে রফতানি আদেশ বাতিল হয়ে রফতানিকারক তথা ব্যবসায়ী মহল বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সেই সাথে দেশের রফতানি লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় বহির্বিশ্বে আমাদের রফতানি বাণিজ্যের অব্যাহত ধারা ব্যাহত হবে। বিষয়টি সুরাহা করতে জরুরীভাবে বাণিজ্য মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে মেট্রোপলিটন চেম্বার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পণ্য পরিবহন রফতানিতে অচলাবস্থা কন্টেইনার ছাড়া ফিরছে বিদেশী জাহাজ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ