Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভিউ পাওয়ার আশায় নিম্নমানের নাটক নির্মাণ কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না

বিনোদন রিপোর্ট: | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

এক শ্রেণীর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও নির্মাতা ইউটিউবে ভিউ পাওয়ার জন্য হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সস্তা ও চটুল গল্পের নাটক নির্মাণ করে চলেছে। এক সময়ের চটকদার বিজ্ঞাপনের মতোই মানুষের নজর কাড়ার জন্য তারা নাটকের নামে যা ইচ্ছা তা নির্মাণ করছেন। এসব নাটকে না আছে আমাদের সামাজিক, পারিবারিক ও দেশীয় মূল্যবোধ, না আছে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ। এসব নাটকের কারণে দেশের টেলিভিশন নাট্যশিল্প এখন অনেকটা ‘খেলো’ হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র ‘ভিউ’-এর পেছনে দৌড়াতে গিয়ে নাটকের মানের বাছ-বিচার করছেন না। এবারের ঈদেও ইউটিউবে চালানোর জন্য অনেক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নাটক নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কটাক্ষ করায় ‘ঘটনা সত্য’ নামে একটি নাটক নিয়ে বেশ সমালোচিত হচ্ছে। নাটকটির একটি সংলাপে বলা হয়, ‘প্রতিবন্ধী শিশুরা বাবা-মায়ের পাপের ফল।’ সিএমভি প্রযোজিত নাটকটি নির্মাণ করেছেন রুবেল হাসান। এতে অভিনয় করেছেন মেহজাবীন চৌধুরী ও আফরান নিশো। নাটকে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত সংলাপ ও ম্যাসেজ দেয়া নিয়ে নাট্যাঙ্গণে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নাট্যাঙ্গণের অনেকে মনে করছেন, ইউটিউবে যেমন যে কেউ যা খুশি তা পরিবেশন করতে পারছেন, তেমনি আমাদের কিছু কিছু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নাটক নির্মাণের নামে যা খুশি তা পরিবেশন করছেন। এতে তাদের দায়-দায়িত্ব বলতে কিছু থাকছে না। তারা ভিউ-এর পেছনে ছুটতে গিয়ে কান্ডজ্ঞানহীন হয়ে পড়ছেন। ইউটিউবে সেন্সরশিপ না থাকায় তারা আমাদের নাটক নিয়ে খেলাধুলা করছেন। এতে বিশ্বে আমাদের নাটক সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে। অথচ আমাদের নাটকের ইতিহাস ও ঐতিহ্য দীর্ঘকালের। দেশ-বিদেশে প্রশংসিত। এর মূল কারণ, আমাদের নাটকের মূলভিত্তিই পরিবার, সমাজ ও মূল্যবোধ। বিনোদনের মাধ্যমে আমরা আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সবসময় তুলে ধরেছি। এখন প্রযুক্তির এ যুগে এসে যেন আমরা তা ভুলে যাচ্ছি। একশ্রেণীর প্রযোজক ও নির্মাতা ভিউ পাওয়ার জন্য নাটককে যেমন খুশি তেমনভাবে উপস্থাপন করছে। অথচ আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও দেশীয় সংস্কৃতির মূল্যবোধকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ এখন অবারিত। এ সুযোগকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ না করে কেউ কেউ সস্তা ভিউ পাওয়ার জন্য মেধা ও রুচিহীন নাটক উপস্থাপন করে চলেছে। দেশীয় সংস্কৃতির বিকৃতি ঘটাচ্ছে। ইউটিউবে হুমায়ূন আহমেদের নাটকসহ এক সময়ে জনপ্রিয় নাটকগুলো এখন দেখা যাচ্ছে। এসব নাটকে আমাদের পরিবার, সমাজ ও মূল্যবোধের বিষয়গুলো অত্যন্ত সুচারুরূপে তুলে ধরা হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের নাটকে যেভাবে আমাদের চিরায়ত মানবিক আচার-আচরণ, ধর্মীয় মূল্যবোধ তুলে ধরা হয়েছে, তা অতুলনীয়। তিনি আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কথা থেকে শুরু করে শহুরে মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর নাটক থেকে মানুষ যেমন বিনোদন পাচ্ছে, তেমনি আমাদের মানুষের পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতার বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হতে পারছে। এছাড়া অন্যান্য প্রখ্যাত নির্মাতাদের নাটকও ইউটিউবে দেখা যাচ্ছে। এসব অসাধারণ নাটকের সাথে এ সময়ের কিছু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও নির্মাতা ইউটিউবে বোধবুদ্ধি ও মূল্যবোধহীন সস্তা নাটক নির্মাণ করে প্রচার করছে। এতে আমাদের নাটকের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অবনমনের বিষয়টিই ফুটে উঠছে। যেহেতু ইউটিউবে যা খুশি তা প্রচার করা যায়, তাই এক্ষেত্রে আমাদের নাটক প্রচারের ক্ষেত্রে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও নির্মাতাদের সচেতন হওয়ার তাকিদ দিয়েছেন নাট্যবোদ্ধারা। তারা বলছেন, নাটক আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম। একে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের অধিকার কারো নেই। প্রত্যেক প্রযোজক ও নির্মাতাকে এ ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। শুধু ভিউ পাওয়ার জন্য নাটক নির্মাণের প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের পরিবার, সমাজ, সংস্কৃতি, মূল্যবোধকে ধারণ করে নাটক নির্মাণ করতে হবে। ভালো গল্পের নাটক নির্মাণ করে তা এই বিশ্বমাধ্যমে প্রচার করলে ভিউ-এর পেছনে দৌড়াতে হবে না। এমনিতেই দর্শক তা দেখবেন। হাল্কা-চটুল গল্পের নাটক নির্মাণ করে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় আমাদের সমৃদ্ধ নাটকের ক্ষতি করা কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। অভিনেত্রী-নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন যথার্থই বলেছেন, ভিউ-এর পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা মনে হয় মানুষ হতে পারলাম না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিম্নমানের নাটক নির্মাণ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ