Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রসঙ্গ : রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আহলে বাইত-১

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০২১, ১২:২৬ এএম

‘আহলে বাইত’ শব্দদ্বয়-এর মাঝে বহুমুখী অর্থ ও মর্ম লুক্কায়িত আছে। সমষ্টিগতভাবে আহলে বাইত বলতে স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততিকে বুঝায়। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সহধর্মিণীগণ, তাঁর তিন পুত্র, চার কণ্যা ও কণ্যার বংশধরগণ এবং তাঁর রক্ত সম্পর্কিত আপনজনকে আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত বলা যায়। এই নিরিখে তাঁর সকল সহধর্মিণীগণ আহলে বাইতের সদস্যভুক্ত। কিন্তু তাঁর পুত্র, কণ্যা ও কণ্যার বংশধরগণ এবং রক্ত সম্পর্কিত আপনজন আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হলেও তাঁদের আলাদা একটি পরিচিতি আছে। তাহলো তাঁরা ‘আলে মোহাম্মাদের’ অন্তর্ভুক্ত। দরূদে ইব্রাহিমে ‘আলে মোহাম্মাদ’ শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। (তাফসীরে হাশিয়ায়ে শায়খ যাদাহ-৬/৬৩৫)
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র সহধর্মিণীগণের সংখ্যা এগারজন। যাদের মধ্যে দু’জন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশাতেই ইন্তিকাল করেছেন। এদের একজন হলেন হযরত খাদিজা বিনতে খুয়াইলেদ (রা.)-এবং দ্বিতীয়জন হলেন হযরত যয়নাব বিনতে খুজাইমাহ (রা.)। বাকি নয়জন স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তিকালের সময় জীবিত ছিলেন। নি¤েœ ক্রমধারা অনুসারে তাঁদের নাম উল্লেখ করা হলো। যথা : ১. হযরত খাদিজা (রা.), ২. হযরত সাওদাহ (রা.); ৩. হযরত আয়েশা (রা.); ৪. হযরত হাফসাহ (রা.); ৫. হযরত যয়নাব বিনতে খুযাইমাহ (রা.); ৬. হযরত উম্মে সালমাহ (রা.); ৭. হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ (রা.); ৮. হযরত জুয়াইরিয়্যাহ (রা.); ৯. হযরত উম্মে হাবীবাহ (রা.); ১০. হযরত সাফিয়্যাহ (রা.); ১১. হযরত মাইমুনাহ (রা.)। এছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খাদেমাহ বা সেবাদাসী ছিলেন তিনজন। যথা : (ক) হযরত মারিয়ায়ে কিততিয়্যা (রা.); (খ) হযরত রাইহানা (রা.); (গ) হযরত নাফিসাহ (রা.)।

বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) স্বীয় সহধর্মিনীগণকে বিশ্বের সকল নারী হতে উত্তম বলেছেন এবং বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সর্ব প্রকার অপবিত্রতা হতে পবিত্র-পরিচ্ছন্ন বলে নির্ধারণ করেছেন। মহান আল্লাহপাক নবী পতœীগণকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছেন : হে নবী পত্মীগণ! তোমরা অন্যান্য মহিলাদের মতো সাধারণ মহিলা নও! হে নবীগৃহের সদস্যগণ! আল্লাহপাক তোমাদের থেকে অপবিত্রতা ও নোংরামি বিদূরিত করে রেখেছেন। (সূরা আল আহযাব : আয়াত ৩২-৩৩)।

মহান রাব্বুল আলামীন স্বয়ং নবীপতœীগণকে পবিত্র রমনী বলে সাব্যস্ত করেছেন। তাদের ওপর অভিযোগ-আপত্তি উত্থাপনকারীগণকে দুনিয়া ও আখেরাতে লানত ও কঠিন শাস্তির যোগ্যবলে নির্ধারণ করেছেন। মহান আল্লাহপাক আল কোরআনে ঘোষণা করেছেন : নিশ্চয়ই যে সকল লোকেরা পুতপবিত্রা, সরলা মুমিনা নারীগণের ওপর ভিত্তিহীন অপবাদ রটনা করে তারা দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর অভিশম্পাতের পাত্রে পরিণত হয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। সে দিন তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত, তাদের পাসমূহ, তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে। সে দিন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা তাদের সঠিক ও উচিত বিনিময় দিবেন এবং তারা অবগত হতে পারবে যে, আল্লাহতায়ালাই সত্য ও সুস্পষ্টভাবে ব্যক্তকারী। চরিত্রহীনা রমনীগণ চরিত্রহীন পুরুষের জন্য, চরিত্রহীন পুরুষগণ চরিত্রহীনা নারীদের জন্য যোগ্য। পবিত্রা রমনীগণ পবিত্র পুরুষদের আর পবিত্র পুরুষগণ পবিত্রা নারীদের জন্য যোগ্য। তারা ওদের (মুনাফিকদের) কথা বার্তা হতে সম্পূর্ণ পবিত্র ও মুক্ত। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা আন্ নূর : আয়াত-২৩-২৬)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) আহলে বাইতকে হযরত নূহ (আ.)-এর কিস্তির সাথে উদাহরণ দিয়েছেন। যে ব্যক্তি নূহের কিস্তিতে স্থান লাভ করেছে, সে মুক্তি পেয়েছে, আর যে তাতে আরোহণ করতে পারেনি সে ধ্বংস হয়েছে। এতদ প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ বিন্ আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা আল্লাহর সাথে মহব্বত রাখ। যেহেতু তিনি স্বীয় নিয়ামত রাশি দিয়ে তোমাদের জীবন পরিচালনা ও খাদ্য সরবরাহ করে থাকেন। আল্লাহর মহব্বতের খাতিরে আমাকে মহব্বত কর। আর আমার মহব্বতের কারণেই আমার আহলে বাইতকে মহব্বত কর। (জামেয়ে তিরমিযী: ২/৬৯৯)।

অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন যে, যে ব্যক্তি আহলে বাইতকে ভালোবাসতে পেরেছে সে মুক্তি পেয়েছে, আর যে আহলে বাইতের প্রতি শত্রুতা পোষণ করেছে, সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। এতদপ্রসঙ্গে হযরত আবু যর (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি : আমার আহলে বাইত নূহ (আ.)-এর কিস্তি সমতুল্য। যে তাতে আরোহণ করেছে সে মুক্তি পেয়েছে। আর যে পিছনে পড়েছে সে ডুবে মরেছে। (মুস্তাদরাকে হাকেম : ২/৩৩৪; ৪/১২৪৩)।



 

Show all comments
  • Azad Azad ৩০ জুলাই, ২০২১, ১:৩৫ এএম says : 0
    কোরআনিক অর্থে নবীজি (সা.)–এর আহলে বাইতের সদস্য ছিলেন চারজন—ফাতেমা (রা.), আলী (রা.), হাসান (রা.) ও হোসাইন (রা.)। মর্যাদার দিক থেকে তাঁরাই সবার ঊর্ধ্বে। নবীপত্নীরাও আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir Hossain ৩০ জুলাই, ২০২১, ১:৩৬ এএম says : 0
    রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর পরিবারের সদস্য, সব নিকটাত্মীয় ও আওলাদে রাসুলেরা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।
    Total Reply(0) Reply
  • Imam Hossain ৩০ জুলাই, ২০২১, ১:৩৬ এএম says : 0
    কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার উম্মতদের বলে দিন, আমি আমার দাওয়াতের বিনিময়ে আমার আহলে বাইতদের প্রতি ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই চাই না (২:২৩)।’
    Total Reply(0) Reply
  • Obaidur Rahman Milton ৩০ জুলাই, ২০২১, ১:৩৮ এএম says : 0
    নবী করিম (সা.)-এর আহলে বাইতকে ভালবাসার ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই । তবে আহলে বাইত কারা– এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতানৈক্য বিদ্যমান ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন