Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নেহাবন্দের মজুসী আবু লুলুর হামলার শিকার হন খলিফা উমর (রা.)

প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কে.এস. সিদ্দিকী : পারস্য সাম্রাজ্যের অপর নাম সাসানী সাম্রাজ্য। সাসানীরা ২২৬ থেকে ৬৫১ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করে। সাসানী সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন প্রথম উর্দশির। প্রসিদ্ধ বাদশাহগণের মধ্যে প্রথম সাবুর, দ্বিতীয় সাবুর এবং কেসরা-নওশিরওয়ানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হজরত উমর (রা.)-এর খেলাফত আমলে হিজরি ২১ মোতাবেক  ৬৪২ সালে বিখ্যাত সাহাবি হজরত হোজায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রা.)-এর নেতৃত্বে পরিচালিত নেহাবন্দ যুদ্ধে অবিস্মরণীয় বিজয়ের মাধ্যমে সাসানী সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। সাসানী বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল দেড় লাখ এবং মুসলিম বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার। সাসানী সৈন্যদের মধ্যে ৩০ হাজার মারা যায়। আরবরা এ যুদ্ধের নাম দিয়েছে ফাতহুল ফুতুহ অর্থাৎ সেরা বিজয়। এ যুদ্ধে সাসানী বা পারস্য বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সৈন্য মুসলমানদের হাতে গ্রেফতার হয়। তাদের মধ্যে খলিফা হজরত উমর (রা.) এর হত্যাকারী আবু লুলু নামক এক অগ্নিপূজারি নেহাবন্দবাসীও ছিল। আবু লুলু কেন খলিফা হজরত উমর (রা.)-কে হত্যা করতে গেল, তার কারণ খলিফার নিকট তার মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রতিকার না পাওয়ার কথা সকল ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করা হলেও প্রকৃত কারণ যে ভিন্ন ছিল, সে কথা কোনো কোনো ইতিহাসে বলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার দুটি দিকই আমরা নি¤েœ উল্লেখ করতে চাই।
প্রথমত. বলতে হয় যে, আবু লুলু ছিল মজুসী (আগুন পূজারি) নেহাবন্ধ এলাকার অধিবাসী এবং সে নিজেও ছিল মজুসী মোশরেক। মজুসীরা ইসলাম ও মুসলমানদের চরমভাবে মনেপ্রাণে ঘৃণা করত। ইসলামের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা ও বিজয় অভিযানগুলো প্রত্যক্ষ করে মজুসী সা¤্রাজ্যের শাসকরা সাম্রাজ্য হারানোর আশংকায় দারুণভাবে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তাই মুসলমানদের সাথে প্রতিটি যুদ্ধের পূর্বে মুসলিম প্রতিনিধিদলগুলোর সাথে সাক্ষাতের সময় মজুসী শাসকরা নিজেদের রাজকীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রদর্শন ছাড়াও মুসলমানদের নিকৃষ্ট, হেয়প্রতিপন্ন করার অশোভন আচরণ করেছে, অহমিকা-অহংকারের জৌলুস দেখিয়েছে। অবশেষে নেহাবন্দ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর নিকট সাসানীদের বিশাল বাহিনীর চরম পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শত শত বছরের সাসানী সাম্রাজ্যের অবসান দেখে এ সা¤্রাজ্যহারাদের ক্ষোভের আগুন, শির্কের আগুন নির্বাপিত না হয়ে বরং প্রজ্বলিত হতে থাকে। যারা পরিস্থিতির কারণে ইসলাম গ্রহণ করে, তারা অনেকে মনেপ্রাণে ইসলাম গ্রহন করতে পারেনি। তাদের মধ্যে এমন লোকের অভাব ছিল না, যারা সুযোগের অপেক্ষায় অথবা সন্ধানে ছিল, কীভাবে ইসলামের ক্ষতিসাধন করা যায়। নেহাবন্দ যুদ্ধে চরম বিপর্যয়ে তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। হাজারে হাজারে যারা মরেছে, তারা তো মরেছে, আর যারা কোনো প্রকারে প্রাণে বেঁচে যায় কিংবা মুসলমানদের হাতে বন্দি হয়, তারা পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে জীবনযাপন করতে থাকে। তাদের মধ্যে যারা মনেপ্রাণে ইসলাম গ্রহণ করে এবং সত্যিকারের খাঁটি মুসলমান হয়ে যায়, তারা ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে সৌভাগ্যের জীবন লাভ করে ধন্য হয়।
কিন্তুআবুলুলু একজন বিখ্যাত সাহাবি হজরত মুগীরা ইবনে শোবা (রা.)-এর দুর্লভ সান্নিধ্যে থেকেও মুসলমান হওয়ার গৌরব লাভ করতে দারুণভাবে ব্যর্থ হয়। সে মজুসিয়াতের যে তিমিরে বেড়ে উঠেছিল সে তিমিরেই তার গোলামী জীবন অক্ষুন্ন থাকে। ইসলামের সর্বপ্রথম গুপ্তহত্যার সন্ত্রাস চালাতে গিয়ে সে আত্মহননের আরেক সন্ত্রাসের মাধ্যমে জাহান্নামের যাত্রী হয়।
হিজরি ২১/৬৪২ সালের ৯ মার্চ তারিখে নেহাবন্দ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে আবুলুলু গ্রেফতার হয়। হজরত মুগীরা ইবনে শোবা (রা.)-এর গোলামীতে তার অবস্থানকাল দুই-আড়াই বছরের অধিক নয়। এ সময় সে মুসলমানদের সব অবস্থা ও মদিনার পরিস্থিতি উত্তম রূপে অবগত হতে পারে। পেশাজীবী হিসেবেও তার আর্থিক অবস্থা উত্তমই ছিল, কিন্তু সে মুসলমানদের আচার-আচরণ, চাল-চলন এবং তাদের ব্যবহারিক জীবনের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে তার মজুসী চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণা- বিশ্বাসের ওপর অটল থাকে। স্বাভাবিকভাবেই মনে করা সঙ্গত যে, মজুসী আবুলুলু ইসলামবিদ্বেষী মনমানসিকতা পোষণ করতে থাকে এবং ইসলামের ছিদ্র অনুসন্ধান ও সুযোগের অপেক্ষায় ইসলামের ক্ষতিসাধন কীভাবে করা যায়, তা নিয়েই ছিল তার চিন্তাভাবনা। ইতোমধ্যে সে ইসলামবিরোধী একটি চক্রও সৃষ্টি করে থাকলে তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা নিবন্ধের গোড়াতে যে দুটি দিকের উল্লেখ করেছি, এবার তার অপর দিকটি নিয়ে আলোচনা করা যাক, যার সাথে জড়িত রয়েছে আবু লুলুর লীলা খেলা। ঘটনাটি সকল ইতিহাস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে এবং বহুল প্রচলিত। ঘটনাটি নিম্নরূপ :
নেহাবন্দের অধিবাসী ও মুগীরা ইবনে শোবা (রা.)-এর গোলাম আবু লুলু একদিন বাজারে আমিরুল মোমেনীর সাথে সাক্ষাৎ করে। অপর বর্ণনা অনুযায়ী, সে আমিরুল মোমেনীনের দরবারে উপস্থিত হয়। সে অভিযোগের সুরে বলে : আমার মুনিব আমার ক্ষমতার চেয়ে অধিক আমার ওপর মাসুল (কর) আরোপ করেছেন। আপনি তা কমিয়ে দিন। হজরত উমর (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন : তোমার মাসুল কত? সে বলল : দৈনিক দুই দেরহাম। তিনি প্রশ্ন করলেন : তুমি কী কাজ কর? সে বলল : ছুতাবের কাজ, ভাস্কর্য এবং লৌহকর্ম। আমিরুল মোমেনীন বললেন : তোমার হাতে তিনটি পেশা রয়েছে। এ অবস্থায়ও তুমি অভিযোগ করছ। আমার মতে, তোমার পেশাগুলোর মোকাবিলায় অধিক নয়।
কথা প্রসঙ্গে আমিরুল মোমেনীন আবু লুলুকে জিজ্ঞেস করলেন: আমি জানতে পেরেছি তুমি উৎকৃষ্ট চাকী বানাতে পার। জবাবে সে বলল: জী, হ্যাঁ। তিনি বললেন: তাহলে আমাকে একটি চাকী বানিয়ে দাও। আবু লুলু বলল : আমি যদি বেঁচে থাকি, তাহলে এমন চাকী বানিয়ে দেব যার খ্যাতি পূর্ব-পশ্চিম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে। এ কথা বলে সে প্রস্থান করে। হযরত ওমর (রা.) বলেন এ গোলাম আমাকে হুমকি দিয়ে গেল। একটি তুচ্ছ বিষয়কে আবু লুলু যে ধৃষ্টতার সাথে গ্রহণ করে খলিফাকে হুমকি প্রদর্শন করে তাতে বোঝাই যায় যে, তার অভিযোগের আসল উদ্দেশ্যই ছিল ভিন্ন। সে অসৎ ও কুমতলব পোষণ করেই অভিযোগ করেছিল। খলিফার জবাব তার মনঃপূত হয়নি। খলিফা যখন তার কর্মকৌশলতার প্রশংসাসূচক কথা বলে খলিফার জন্য চাকী বানিয়ে দিতে বললেন তখন সে কথার জবাবে আবু লুলু যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তি করে হুমকি প্রদর্শন করে তা তার বিকারগ্রস্ত মস্তিষ্কের উর্বর ফসল তো বটেই, সাথে সাথে তার বদ নিয়ত ও কুমতলবেরও পরিচায়ক। কোনো সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত এতে সক্রিয় ছিল তা পরবর্তীতে তার সন্ত্রাসী ও ধ্বংসাত্মক ভূমিকা হতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মজুসী আবু লুলু মোনাফেকি আচরণ করে নামাজি সেজে মসজিদে প্রবেশ করতে দ্বিধা করেনি। গভীর চক্রান্তের মাধ্যমে সে মহান খলিফার ওপর সন্ত্রাসী কায়দায় গুপ্ত হামলা চালায় এবং মসজিদে নববীর মর্যাদা ক্ষুন্ন করে। তার চক্রান্তের প্রমাণ রয়েছে নি¤েœ বর্ণিত ঘটনায়। আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর (রা.) বর্ণনা করেন যে, ঘটনার পূর্ব রাতে তিনি হরমুজান জাফনিয়া নাসরানী এবং আবু লুলুকে পরস্পর কান কথা বলতে দেখেছেন। ওদের দৃষ্টি যখন তার প্রতি পড়ে তখন তারা বিচলিত হয়ে পড়ে। এ বিচলিত অবস্থায় তিনি ওদের একজনের হাত হতে একখানা খঞ্জর ছুটে মাটিতে পড়তে দেখেন। খঞ্জর দুইধারবিশিষ্ট ছিল যা দেখতে অবিকল সেই খঞ্জর যা দ্বারা আবু লুলু আমিরুল মোমেনীনের ওপর হামলা চালিয়েছিল। আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর (রা.)-এর এ প্রত্যক্ষ ঘটনা প্রমাণ করে যে, হযরত উমর (রা.)-এর সাথে আবু লুলুর কথোপকথনের পরবর্তী ঘটনা এটি। ওই ঘটনার পর আবু লুলু বসে থাকেনি, আরো দুজনকে তার সঙ্গে ভেড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে।
আবু লুলুর গোপন ষড়যন্ত্রের সাথে কতজন জড়িত ছিল, তা জানা না গেলেও অপর দুজনের পরিচয় বলে দেয় যে, হযরত উমর (রা.)-কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। হরমুজান ইসলাম গ্রহণ করার পরও কেন এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো, এ প্রশ্নের জবাবও সহজ। সেই ইরানী সেনাপতি হিসেবে মুসলমানদের হাতে প্রতিটি যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পূর্বে ইরাকের জমিদার ও কৃষকদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত ও উসকে দেওয়ার অনবরত চেষ্টা চালিয়েছিল এবং ততক্ষণ পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করেনি যতক্ষণ না তার নিশ্চিত বিশ্বাস হয়েছে যে, তার মৃত্যু অবধারিত, কেবলমাত্র ইসলামই তার রক্ষাকবচ। তাই বার বার মুসলমানদের সাথে অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও প্রতিবারই চুক্তি ভঙ্গ করতে থাকে। কারণ সে কখনো ভুলতে পারেনি যে, মুসলমানদের হাতে সাসানী সা¤্রাজ্যের পতনের মূলে রয়েছে হজরত উমর (রা.)-এর ভূমিকা। সুতরাং তাকে খতম করতে হবে। জাফিনিয়া নাসরানী নাজরানের অধিবাসী ছিল। হযরত সাদ ইবনে আবি ওক্কাস (রা.) তাকে একটি মহৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছিলেন। আর তা হচ্ছে এই যে, সে লোকদেরকে লেখাপড়া শিখাবে। সে সময়ের কথা, যখন উমর (রা.) ইরানী ও রোমানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত, তখন নাজরানের খৃস্টানদেরকে জাজিরাতুল আরব হতে বহিষ্কার করেন এবং তাদের স্থান পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ দিয়ে সিরিয়া এবং ইরাকে পুনর্বাসিত করেন। তাই তার আশঙ্কা ছিল যে, এমন নাজুক পরিস্থিতিতে এসব লোক অঙ্গীকার ভঙ্গ করতে পারে। অতঃপর মুসলমানগণ রোমের হিরাক্লিয়াসের বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে। হিরাক্লিয়াস ছিলেন খৃস্টান। তাই এটা খুবই সম্ভব যে, জাফনিয়া নাসরানী খৃস্টান ও অন্তরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করত এবং এটাও সম্ভব যে, সে হরমুজানকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে তার সাথে একাত্ম হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। আবু লুলরু কথা আগেই বলা হয়েছে। এ তিন চক্রান্তকারী ছাড়াও ইতিহাসে আরেকজনের নাম পাওয়া যায়, তিনি হচ্ছেন কাবুল আহবার। তার সম্পর্কে যে বিবরণ পাওয়া যায় তার সারাংশ হচ্ছে : আমিরুল মোমেনীনের ওপর আবু লুলু কর্তৃক হামলা চালানোর তিন দিন আগে তিনি তার খেদমতে উপস্থিত হয়ে জানান যে, তিন দিনের মধ্যে আপনার মৃত্যু হবে। হযরত উমর (রা.) জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কীভাবে জানলে? কাবুল আহবার বললেন: আমি কিতাবুল্লাহ (তওরাত) হতে জেনেছি। উমর (রা.) বললেন: উমরের কি সৌভাগ্য যে তওরাতে তার উল্লেখ রয়েছে। কাবুল আহবার বললেন, আসল ব্যাপার হচ্ছে এই যে, আপনার গুণ পরিচয় ও হুলিয়ার উল্লেখ তাতে অবশ্যই রয়েছে। সেদিন তিনি এসব কথা বলে চলে যান। দ্বিতীয় দিন এসে বললেন: আপনার মৃত্যুর আর দুই দিন বাকি আছে। পরের দিন এসে বললেন: আর একদিন এক রাত বাকি আছে। কাল সকালে আপনার মৃত্যু হবে। কাবুল আহবার চলে যাওয়ার তিন দিন পর সত্যি সত্যিই হযরত উমর (রা.) আবু লুলুর কর্তৃক আক্রান্ত হন এবং তিন দিন পর তিনি শাহাদাতবরণ করেন। এদিকে এ ঘটনার ফলে সাধারণ লোকদের মধ্যে পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস জন্মে যে, যেসব ভিত্তিহীন ইসরাইলি কাহিনী কাবুল বলে থাকে সবই সত্য। কাবুল বর্ণিত এসব কাহিনী সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তার বহু মনগড়া ভিত্তিহীন কাহিনী অনেকে ইতিহাস এবং হাদিস ও তাফসির গ্রন্থসমূহে অন্তর্ভুক্ত করেন। কাবুলের খ্যাতিও ছড়িয়ে পড়ে। কাবুল ছিলেন একজন ইহুদি আলেম, তিনি তওরাতকে ইবরানী অর্থাৎ ইহুদিদের প্রাচীন ভাষায় পড়তেন। ইসলাম গ্রহণের পর তার একটা আলাদা মর্যাদা হয়ে যায়। তার মনগড়া অনেক কাহিনী মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত হয়ে যায়। এগুলো ইসরাইলিয়াত নামে খ্যাত। হযরত উমর (রা.)-এর মৃত্যু সম্পর্কে তার কথাগুলোও ছিল কল্পিত মনগড়া। তবে বর্ণিত তিন কুচক্রীর ষড়যন্ত্রের সাথে তার নিবিড় সম্পর্কের কারণে খলিফাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রের কথা জানতেন বলেই তিনি চালাকির সাথে খলিফাকে তার মৃত্যু সংবাদ আগাম জানিয়ে দেন, ষড়যন্ত্রের কথা গোপন রাখে। হিজরি ২৩ সালের ২৬ জিলহজ। হজরত উমর (রা.) প্রতিদিনকার মতো নিয়মিত ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গমন করেন। ইমামতী করার জন্য আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত করার সাথে সাথে মুগীরা ইবনে শোবা (রা.)-এর গোলাম আবু লুলু খঞ্জর হাতে অগ্রসর হয়, সে নামাজিদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আকস্মিক ভাবে সে দোধারী খঞ্জর দ্বারা আমিরুল মোমেনীনের ওপর পর পর ছয়টি আঘাত করে। একটি আঘাত নাভির নিচে লাগে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তিনি আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.)-কে নামাজের ইমামতি করার জন্য বলেন। আহত খলিফা জমিনে ঠেক দিয়ে নামাজ আদায় করেন, অপরদিকে ঘাতককে পলায়নরত অবস্থায় লোকেরা ধরে ফেলে। ঘাতক সন্ত্রাসী নিজের মৃত্যু অবধারিত দেখে আত্মহত্যা করে। মারাত্মক আহত খলিফাকে তার গৃহে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তিন দিন পর ১ মহররম হিজরি নববর্ষের দিন খলিফা উমর (রা.) শাহাদাতবরণ করেন। মুসলমানদের সেবারের নববর্ষ আনন্দের পরিবর্তে গভীর শোকের বর্ষে পরিণত হয়ে যায়।  



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নেহাবন্দের মজুসী আবু লুলুর হামলার শিকার হন খলিফা উমর (রা.)
আরও পড়ুন