Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হুল ফুটাচ্ছে এডিস মশা

ঢামেকে ১৫ দিনে এক হাজার ডেঙ্গু রোগী মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসি’র অভিযান চলছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই রাজধানী ঢাকায় বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গতকালও দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৯৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ঢাকাতেই ভর্তি হয় ১৯৪ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ৭৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। মশা তাড়াতে সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে। এর মধ্যেই প্রতিদিন হুল ফুটাচ্ছে এসিড মশা আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। বয়স্কদের পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও। গত ১৫ দিনে এক হাজার ডেঙ্গু রোগী শুধু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়াও মিটফোর্ড ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নারে টিকিৎসা নিচ্ছেন অসংখ্য ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী। তবে এডিস মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেছে। গতকাল ১৩টি নির্মাণাধীন ভবন ও বাসা-বাড়িকে ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বহির্বিভাগের মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ শাইখ আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ছিল এরকম আনুমানিক হাজার খানের রোগী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের কারও কারও অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের মিটফোর্ড ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নারে পাঠানো হয়েছে। যাদের শারীরিক অবস্থা তুলনামূলক ভালো তাদের কেউ কেউ ঢাকা মেডিক্যালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের ডেঙ্গু বিষয়ক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৯৬ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ৭৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৭৪৭ জন এবং অন্যান্য বিভাগে বর্তমানে সর্বমোট ৩০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুলাই বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ২ হাজার ৬৫৮ জন। একই সময়ে তাদের মধ্য থেকে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ হাজার ৮৭৭ জন রোগী।

গতকাল ঢাকা মেডিক্যালের কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা মেডিক্যালে ৯ জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে শিশু ৬ জন, নারী ২ জন ও পুরুষ ১ জন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ১০ বছরের বুশরা আক্তার চিকিৎসা নিচ্ছেন। বুশরাদের বাড়ি যাত্রাবাড়ী বিবিরবাগিচা এলাকায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মেয়ের সঙ্গে হাসপাতালে আসা বুশরার মা সোনিয়া আক্তার জানায়, গত ২৫ জুলাই জ্বর আসে বুশরার। গত ২৭ জুলাই ঢাকা মেডিক্যালে ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করানো হয়। ২৮ জুলাই ডেঙ্গু পজিটিভ রেজাল্ট আছে। সেদিন থেকেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। ৭ মাস বয়সি আলিফকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন মা তাসলিমা আক্তার। তাসলিমা জানায়, তাদের বাসা বংশাল নাজিমুদ্দিন রোডে। শিশুটির বাবা আমিনুল রিকশা চালায়। গত ২৯ জুলাই হঠাৎ করে জ্বর আসে আলিফের। গতকাল ৩০ জুলাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আলিফকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়।

ঢামেক হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, ১১ বছর বয়সি সাকিব আলম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা করছে। সাকিবের বাবা ঢামেক হাসপাতালের স্টাফ মো. শাহ আলম জানান, তাদের বাসা এলিফ্যান্ট রোডের মেডিক্যাল স্টাফ কোয়ার্টারে। গত ২৭ জুলাই জ্বর আসে সাকিবের। বাসাতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু থেমে থেকে জ্বর আসায় তারা ডেঙ্গু হয়েছে বলে ধারণা করছেন। তিনি বলেন, সাকিবকে হাসপাতালে নিয়ে এসে পরীক্ষা করানো হলে তার ডেঙ্গু পজিটিভ রেজাল্ট আসে।

শিশুদের ডেঙ্গু নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যালের বহির্বিভাগের শিশু বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রাজেশ মজুমদার বলেন, বর্তমানে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ৬ শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে আসা শুরু করেছে। এরই মধ্যে সবই ঢাকা থেকে এসেছে। গত সপ্তাহে ৮ থেকে ১০ জন শিশু পজিটিভ পেয়েছি। এদের মধ্যে যাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ, র‌্যাশ আছ, রক্তের প্লাটিলেট অনেক কম, ভবিষ্যতে খারাপ হতে পারে। সেই সব শিশুকে ভর্তি দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ অনেকেরই জানা। যেমন প্রস্রাব লাল, শরীরে লাল র‌্যাশ ওঠে, দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত বের হওয়া, পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত দিয়ে হওয়া। মশা কামড়ানোর ৩ থেকে ৭ দিন পরেও পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু পজিটিভ আসতে পারে।

পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, দু’জন ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্তান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। যাত্রাবাড়ী ধনিয়া থেকে আসা রোগী রুহুল আমিন (৬২)। তিনি জানান, কুমিল্লা হোমনা উপজেলায় ফ্যামিলি প্ল্যানিং অফিসার। ঢাকার বাসায় থাকাকালীন গত ২৫ জুলাই জ্বর আসে। ২৭ জুলাই মুগদা হাসপাতালে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সেদিনই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়। ঢাকায় এসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় ৫০ বছর বয়সি প্রকাশ হালদার। তার বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলায়। গত ৬ জুলাই গ্রামের বাড়িতে পরে গিয়ে মাথায় আঘাত পায়। সেদিনই তাকে ঢাকায় তার বোন জামাই অশোক সরকারের ফার্মগেট গ্রীন রোডের বাসায় আসে। পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়। অশোক সরকার জানান, গত ২১ জুলাই হঠাৎ তার জ্বর আসে। পরে ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যান। সেখানে তার ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। ২৯ জুলাই ঢামেকে ভর্তি হন।

ঢাকা মেডিক্যালের বহির্বিভাগের মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ শাইখ আব্দুল্লাহ বলেন, জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গু রোগী পাচ্ছি। হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডগুলো করোনা ইউনিট বানানো হয়েছে। তবে যেসব রোগীর অবস্থা খারাপ থাকে তাদের ভর্তি দেওয়া হচ্ছে। বেশ কয়েকজন রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক সুস্থ হয়ে চলে গেছেন। প্রতিদিন বহির্বিভাগের জ্বর নিয়ে রোগীরা বহির্বিভাগে আসেন। এর মধ্যে যাদের সমস্যা বেশি তাদেরকেই ভর্তি দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে এডিস মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সাতটি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেছে। গতকাল অভিযানে মশার লার্ভা পাওয়ায় ১৩টি নির্মাণাধীন ভবন ও বাসা-বাড়িকে ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মধ্যে অঞ্চল-১-এর নিউ ইস্কাটনে মাহফুজুল আলম মাসুম, অঞ্চল-২-এর খিলগাঁওয়ে মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, অঞ্চল-৩-এর চানখাঁরপুলে তৌহিদুজ্জামান পাভেল, অঞ্চল-৫-এর জুরাইনের বিক্রমপুর প্লাজা ও আশপাশে মুহাম্মদ হাসনাত মোর্শেদ ভ‚ঁইয়া, অঞ্চল-৬-এর গৌড়নগর ও নাসিরাবাদে শাহীন রেজা, অঞ্চল-৮-এর মালা মার্কেট ও রাজাখালীতে কাজী হাফিজুল আমিন এবং অঞ্চল-৯-এর মাতুয়াইলের মুসলিম নগর এলাকায় বিকাশ বিশ্বাস এসব ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলো এ সময় ২১৪টি নির্মাণাধীন ভবন, বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেন এবং মোট ১৩টি নির্মাণাধীন ভবন ও বাসাবাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়ায় ১৩টি মামলার মাধ্যমে সর্বমোট ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। এছাড়াও এ সময় এডিস মশার লার্ভা প্রজনন উপযোগী পরিবেশ বিরাজ করায় মোট ১১টি বাসা ও নির্মাণাধীন ভবনকে সতর্ক করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু রোগী

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৫ জানুয়ারি, ২০২২
৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১
৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ