প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
কে এই পিয়াসা? কীভাবে তার উত্থান? তার বেপরোয়া জীবনের রহস্যই বা কি? চট্টগ্রামের একটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা একটা মেয়ে ঢাকা শহরে কেমন করে এমন লাক্সারিয়াস জীবনযাপন করে আসছিলেন? তার বারিধারার ফ্ল্যাটে কার কার যাতায়াত ছিল? এমন নানা প্রশ্ন এখন মুখে মুখে। অপরাধ সাম্রাজ্যের সর্বত্র যার বিচরণ।
চট্টগ্রামের মেয়ে বিতর্কিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। মডেলিংয়ের আড়ালে অপরাধ সাম্রাজ্যে বিচরণ তার। আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশনে অস্ত্র কারবার থেকে শুরু করে মাদকের জমজমাট বাণিজ্যের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ধনাঢ্য পরিবারের সদস্যদের নিজের মাদকের আসরে ডেকে গোপন ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করত সে। তার আসরে যাতায়াত করতেন দেশের বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। এমন তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
অভিযোগ আছে, দিনে ঘুমান আর রাতে রাণী হন নানা বিত্তবানের। রাত হলে বিলাশবহুল বিএমডব্লিউটি মার্সিডিজ ব্রান্ডের গাড়ি হাঁকিয়ে ছুটে চলতেন রাজধানীর বার ও নাইট ক্লাবের উদ্দেশে। অনেকটা খোলামেলা পোষাকে ঢুকে পড়তেন সেখানে। প্রভাবশালী আর ধনীর দুলালদের সঙ্গে চলতো ডিসকো ড্যান্স। গ্রুপ বেধে সেবন করতো মাদক। পরে চলে যেতো রাজকীয় ফ্ল্যাটে।
আলোচিত রেইন ট্রি হোটেলের ঘটনায় নাম আসে এই পিয়াসার। সেই যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যান। পরে মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনাতেও মামলার এজহারে নাম আসে তার। এবার ডিবির অভিযানে গ্রেফতারের পরও ফের আলোচনায় আসেন পিয়াসা।
পিয়াসার সঙ্গে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি এখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। আর মরিয়ম আক্তার মৌ ছিল তার সাম্রাজ্যের অন্যতম সহযোগী। অপরাধ সাম্রাজ্যের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে মডেল পিয়াসা ও মৌকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পৃথক মাদক মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, পিয়াসার মাদক বাণিজ্যের বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে। ওই নেটওয়ার্কে কারা জড়িত সে সম্পর্কে জানতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া পিয়াসার মাধ্যমে যারা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন তারা অভিযোগ নিয়ে এলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পিয়াসার আসরে নামিদামি লোকজনের যাতায়াত থাকার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে কিনে বিএমডব্লিউ গাড়িটি পিয়াসাকে উপহার দিয়েছেন। জানা গেছে, ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকা ও অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগে ২০১৯ সালের শেষের দিকে ওই নেতার ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া এক সুপরিচিত শিল্পগ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিয়াসাকে বডিগার্ডসহ রাজধানীর বারিধারা আবাসিক এলাকায় একটি ফ্লাট ভাড়া করে দেন। ৯ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলার আলিশান ওই ফ্ল্যাটটির মাসিক ভাড়া প্রায় দুই লাখ টাকা বলে জানা গেছে। সেখানে প্রায়ই ওই শিল্পপতির যাতায়াত ছিল।
ভবনের সুপারভাইজার ও ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসেবে দায়িত্বে পালনকারী বিলাস গোমেজ একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে বলেন, মাসিক ২ লাখ টাকা ভাড়ায় পিয়াসার থাকার ফ্ল্যাটটি ভাড়া করে দিয়েছেন এক শিল্পপতি।
ফ্ল্যাটে কী হতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ফ্ল্যাটটিতে রাত ঘনিয়ে এলেই পার্টি বসতো। পার্টিতে অন্তত ১২ থেকে ১৫ জন্য উঠতি বয়সী তরুণী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অংশ নিত। ফ্ল্যাটটিতে ছিল মিনি-বার।
বিলাস আরও জানান, ফ্ল্যাটটি গেল দুই মাস আগে ওই শিল্পগ্রুপের একজন পরিচালক থাকবেন বলে প্রতিষ্ঠানটির প্যাডে চুক্তিনামা স্বাক্ষর হয়। সেই অনুযায়ী পিয়াসাকে গ্রুপের এমডি হিসেবে পরিচয় দিয়ে এখানে রাখা হয়।
বনানীতে থাকা ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানটির এমডি গণমাধ্যমে কথা বলতে অস্বীকার করেন। তবে অফিস সুপারভাইজার মাসুম দাবি করেন, পিয়াসাকে ঈদের কিছুদিন পরই প্রতিষ্ঠানটি থেকে রিলিজ করা হয়েছে। উনি এখন আর আমাদের এখানে নেই।
তাহলে কোম্পানির দেওয়া ফ্ল্যাট, বডিগার্ড এবং গাড়ি চালকের সুবিধা গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত পিয়াসা কিভাবে পাচ্ছিলেন। আর পিয়াসাকে গ্রেফতারের দু’দিন আগে এমডি কিভাবে বারিধারার সেই ফ্ল্যাটে পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন, এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন মাসুম।
এদিকে রোববার রাতে গ্রেফতারের পর সোমবার তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে গুলশান ও মোহাম্মদপুরে পৃথক দুটি মামলা হয়। এরপর আদালতে উপস্থাপন করলে উভয়ের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়। পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি টিম রাত ৯টা ২৫ মিনিটে বারিধারা এলাকা থেকে পিয়াসাকে এবং ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম রাত ১২টা ৫ মিনিটে মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে মৌকে গ্রেফতার করে। পিয়াসার কাছ থেকে ৭৮০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ছয় লিটার মদ ও সিম্বা ব্র্যান্ডের ৪টি প্রিমিয়ার বিয়ার জব্দ করা হয়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আলিশান জীবনযাপন ছিল মডেল পিয়াসা ও মৌয়ের। নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী, দেশি-বিদেশি দামি পোশাক, শেলফের তাকে তাকে সাজানো জুতাসহ বাহারি সব পণ্যের সমাহার ছিল তাদের বাসায়। বাসার ভেতরে প্রবেশ করলে চোখ চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম। কারণ তাদের দৃশ্যমান আয়ের উৎসের সঙ্গে জীবনযাপনের ব্যয়ের ছিল আকাশ-পাতাল ব্যবধান। গোয়েন্দাদের ভাষায়, পিয়াসার বাসা ছিল অনেকটা ‘রাজরানি’র ঘরের মতো।
যেখানে বিলাসী জীবনযাপনের জন্য সবই ছিল। ব্যবস্থা ছিল মনোরঞ্জনের। তারা বাসার মধ্যেই গড়ে তুলেছিলেন ‘মিনিবার’। যেখানে আনাগোনা ছিল ধনাঢ্য ব্যক্তিদের। সবচেয়ে বেশি যাতায়াত ছিল ধনীর দুলালদের। তাদের বাসায় এনে ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করত দুই মডেল। নামিদামি বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যপদ থাকার সুবাদে সেখানেও টার্গেট ঠিক করত তারা।
পিয়াসা ও তার সঙ্গী মৌকে আটকের পর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে মডেল মৌ-এর বাসার নিচে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (উত্তর) শাখার যুগ্ম-কমিশনার হারুন-অর-রশীদ।
তিনি বলেন, তারা দুজন একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে আমরা অনেক ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ পেয়েছি। সেসব ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আজ তাদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। দুইজনের বাসায় বিদেশি মদ, ইয়াবা, সিসা পাওয়া যায়। মৌয়ের বাড়িতে মদের বারও ছিল।
ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আটক দুই মডেল হচ্ছেন রাতের রাণী। তারা দিনের বেলায় ঘুমাতেন এবং রাতে এসব কর্মকাণ্ড করতেন। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পার্টির নামে বাসায় ডেকে আনতেন তারা। বাসায় আসলে তারা তাদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলতেন এবং ভিডিও করে রাখতেন। পরবর্তীতে সেসব ভিডিও এবং ছবি ভিকটিমদের পরিবারকে পাঠানোর হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন এবং মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।