Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মরিশাসে নৌঘাঁটি নির্মাণ করছে ভারত

দিয়াগো গার্সিয়া দ্বীপের দুর্ভাগ্য নেমে আসে কি না শঙ্কিত বাসিন্দারা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপক‚লীয় দেশ মরিশাসের একটি দ্বীপে গোপনে নৌঘাঁটি নির্মাণ করছে ভারত। মঙ্গলবার স্যাটেলাইটে পাওয়া ছবি, আর্থিক পরিসংখ্যান ও অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে আল-জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ভারত দেশটির আগালিগা দ্বীপটিতে গোপনে ৩ কিলোমিটার বা ১.৮ মাইলের দীর্ঘ বিমান উড্ডীন ও অবতরণের জন্য রানওয়ে নির্মাণ করে আসছে এবং বিশালাকার দুটি নৌ জেটি নির্মাণের উদ্দেশ্যে নকশা করেছে যা আল-জাজিরার অনুসন্ধানী টিম আই ইউনিটের গোপন অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। সামরিক বিশেষজ্ঞগণ আল-জাজিরার প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন যে, দ্বীপটি সামুদ্রিক গুপ্তচরবৃত্তি ও নজরদারি মিশন পরিচালনার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। জানা যায়, মরিশাসের অধিবাসীদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজেটে আগালেগা দ্বীপে সামরিক স্থাপনা তৈরি করছে বলে ওই দ্বীপের বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেছে ভারত এবং তার ব্যয়ভারও সম্পূর্ণরূপে ভারত সরকারই বহন করবে। তবে দ্বীপের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুধুমাত্র তাদের কল্যাণে ভারত সরকারের ২৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সামরিক স্থাপনা তৈরির বিষয়ে নিশ্চিত না। বরং তারা নিজেদের ক্ষেত্রে অতীতের ডিয়াগো গার্সিয়া দ্বীপের দুর্ভাগ্য নেমে আসে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত। ২০১৮ সালে প্রথম মরিশাসে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের বিষয়ে গুজব ও সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই সময় মরিশাস ও ভারত কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করেছিল। উভয় দেশই দাবি করেছিল, দ্বীপের বাসিন্দাদের মঙ্গলের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। আগালিগা দ্বীপটি ভারতের মূল দ্বীপটি থেকে এক হাজার ১০০ কিলোমিটার দূরে এবং এখানে প্রায় ৩০০ লোক বাস করে। স্যাটেলাইটে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, দ্বীপটিতে দুটি বড় জেটি এবং তিন কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ রানওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। নয়া দিল্লির গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহযোগী ফেলো অভিষেক মিশ্র বলেন, ‘বিস্তৃত দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগর ও মোজাম্বিক চ্যানেলে নজরদারি বাড়ানোর জন্য এটি ভারতের জন্য বিমান এবং নৌ উপস্থিতির জন্য একটি গোয়েন্দা অবকাঠামো। আমার ব্যক্তিগত তথ্য, আমার পরিচিত লোকদের সাথে কথোপকথনের ওপর ভিত্তি করে বলছি, ঘাঁটিটি আমাদের জাহাজের বার্থিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হবে এবং রানওয়েটি বেশিরভাগই আমাদের পি-৮১ বিমানের জন্য ব্যবহার করা হবে। পি-৮১ হচ্ছে ভারতের উপক‚লীয় টহলের যুদ্ধবিমান। এটি নজরদারি কাজেও ব্যবহৃত হয়। অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজের গবেষখ স্যামুয়েল ব্যাশফিল্ড জানান, অনেক দেশের কাছে ভ‚রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের হটস্পটে পরিণত হয়েছে ভারত মহাসাগর। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরে ভারতের জন্য এমন জায়গা থাকা গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে নিজেদের জাহাজগুলোকে সহায়তা করতে পারে তাদের বিমান এবং সেখানে অপারেশনের জন্য লঞ্চিং প্যাড হিসাবে ব্যবহার করা যায়।’ এদিকে সামরিক নৌঘাটির ব্যাপারে জানতে চায়লে মরিশাসের সরকার ২০১৮ সালের মতো আবারো জানায় যে, আগালেগায় সামরিক ঘাটি স্থাপনে ভারতের সাথে মরিশাস সরকারের কোনো ধরণের চুক্তি সম্পাদিত হয়নি। তাছাড়া আগালেগা দ্বীপের লোকজনকে দ্বীপান্তর করার কোনো ইচ্ছাও তাদের নেই। সামরিক ঘাটি শব্দের ব্যবহার স্পষ্ট করতে গিয়ে তারা জানায় যে, সামরিক সরঞ্জাম মজুদকরণ, সেনা সদস্যদের আশ্রয় ও স্থায়ী ভাবে সামরিক অভিযান পরিচালনার সুবিধার ক্ষেত্রে মরিশাসের আগেলাগায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোনো কর্তৃত্বে নেই। অপরদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি তারা। উল্লেখ্য, আগালেগা দ্বীপের বাসিন্দারা নিজেদের ভাগ্যে ডিয়াগো গার্সিয়া দ্বীপের দুর্ভাগ্য নেমে আসার আশঙ্কা করছে, যা পূর্বে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অনৈতিক উপনিবেশের একটি অংশ ছিলো। কেননা ১৯৬৬ সালে ব্রিটিশরা যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ওই দ্বীপটি লিজ দিয়েছিলো তার ক্ষেত্রেও ঠিক একই রকমের ঘটনা ঘটেছিলো। আল-জাজিরা।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ