Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধরাছোঁয়ার বাইরে চোরাই সিন্ডিকেট ও গাড়ির মালিকেরা

প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা হচ্ছে বিলাসবহুল দামি গাড়ি
চলতি বছরেই ৩৪টি উদ্ধার : শনাক্ত হয়নি গাড়ির মালিক
স্টাফ রিপোর্টার : তথাকথিত কঠোর গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে চোরাই পথে আসা বিলাসবহুল গাড়ির কেনা-বেচা চলছেই। সেইসাথে থেমে নেই শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নামি-দামি ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি। চোরাইভাবে আনা বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ ও পোরশে, জাগুয়ার, ওডি আর, নিশান জেড এক্সসহ বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি মাঝে মধ্যে উদ্ধার হলেও হচ্ছে। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে চোরাই সিন্ডিকেট ও গাড়ির মালিকরা। এ চক্রটি এতই প্রভাবশালী অবৈধভাবে আনা বিলাসবহুল গাড়ি ধরা পড়লেও মালিকেরা রয়ে গেছে আড়ালে। এসব গাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি রহস্যজনক কারণে। এ অভিযোগ বৈধভাবে আনা গাড়ির মালিক ও আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের।
তাঁরা বলছেন, চোরাইভাবে আনা বিলাসবহুল গাড়ি আটক হয় কিন্তু মালিকেরা ধরা পড়েন না। কারা এসব গাড়ির মালিক তাও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জনসম্মুখে প্রকাশ করছেন না। কেনইবা তাদের ধরতে পারেনি গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর এ নিয়েও নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি, শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টমস, দুদক কোন সংস্থাই গত এক বছরেও কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি। অথচ ইতোমধ্যে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা শত কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ৩৪টি বিলাসবহুল গাড়ি উদ্ধার করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা।
একটি গোয়েন্দা সূত্র জানান, কোন ধরনের রাখ-ঢাক নয়, সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যেই আনা হচ্ছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নামি-দামি গাড়ি। একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এর পেছনে জড়িত। এদের শনাক্ত করে একাধিক প্রতিবেদন দাখিল করার পরেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কাস্টমস, শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদপ্তরের একটি অসাধু চক্রও ওই সিন্ডিকেটের সহযোগী হিসাবে কাজ করছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্তকর্তা জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন সময় যেসব বিলাসবহুল গাড়ি উদ্ধার করা হযেছে এর বেশিরভাগই চোরাইভাবে আনা। অর্থাৎ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা। তবে এদের মালিক শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এসব গাড়ি বেচা-কেনার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না শুল্ক কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এ চোরাই বাণিজ্য চলছে। এতে অবৈধভাবে লাভবান হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থার এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার। কোটি কোটি টাকার শুল্ক আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব বিভাগ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩৪টি গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যগুলো উদ্ধারে অভিযান চলছে। সবগুলো গাড়ি ও গাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে শুল্ক ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কার্নেট ডি প্যাসেঞ্জার সুবিধায় নিয়ে আসা শতাধিক দামি বিলাসবহুল গাড়ি দেশের রাস্তায় চলাচল করছে। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।
গোয়েন্দারা জানান, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা এবং ব্যবহার করা বিলাসবহুল গাড়ির বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান জোরদার করার পর অনেকেই এসব বিলাসবহুল গাড়ি লুকিয়ে রেখেছেন। অনেক মালিক গা ঢাকা দিয়েছেন। লুকিয়ে ফেলা গাড়ি উদ্ধার ও মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যারা এসব গাড়ি কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত তাদেরও ধরার চেষ্টা চলছে।
তবে কাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, কারা এসব গাড়ির মালিক এর কিছু জানাতে পারেনি শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।
শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপায়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশে নিয়ে আসা হয় বেশ কিছু গাড়ি। এরমধ্যে শতাধিক গাড়ি অবৈধ উপায়ে অনেকে ব্যবহার করছেন। কারনেট সুবিধার অপব্যবহার করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এসব গাড়ি বিক্রিতেও একটি চক্র জড়িত রয়েছে। তারাই এগুলো কমিশনের ভিত্তিতে কেনা-বেচায় সহযোগিতা করে থাকে। কোটি কোটি টাকা মূল্যের এসব গাড়ি ও গাড়ির মালিক এবং ওই দালাল চক্রের সদস্যদের আটক করতে কাজ করছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। বিদেশি পর্যটকদের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিদেশ থেকে গাড়ি আনার যে সুযোগ রয়েছে, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই এসব বিলাসবহুল গাড়ি কেনা-বেচা হচ্ছে। অথচ নিয়মানুযায়ী এসব গাড়ি পর্যটকদের জন্য ‘কার্নেট ডি প্যাসেজ’ সুবিধায় বাংলাদেশে এনে আবার ফিরে যাওয়ার সময় ফেরত নিয়ে যাওয়ার কথা।
গত এক মাসে সিলেট এলাকা থেকে একই উপায়ে নিয়ে আসা তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। গাড়িগুলোর মধ্যে ‘জাগুয়ার এস টাইপ’, ‘নিশান ৩০০-জেড এক্স’ এবং ‘মিতসুবিশি’ গাড়ি রয়েছে। এর আগেও মার্সিডিঞ্জ বেঞ্জসহ আরও চারটি গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে সিলেট এলাকা থেকে। গত ৩১ আগস্ট রাজধানীর কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অফিসের পাশে রাস্তায় লাল রংয়ের এসএলকে ২৩০ মডেলের মার্সিডিঞ্জ বেঞ্জ গাড়ি ফেলে যান এক মালিক। পরে গাড়িটি উদ্ধার করেন শুল্ক গোয়েন্দারা।
গত ১২ জুন রাজধানীর বারিধারা এলাকা থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের চারটি বিলাসবহুল গাড়ি উদ্ধার করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। বারিধারার জে ব্লকের ৮নম্বর রোডে স্বদেশ মটরস থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় গাড়িগুলো উদ্ধার করা হয়। অবৈধভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসা গাড়ির বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরুর পর মালিকরা গাড়িগুলো ওই গ্যারেজে রেখে যান বলে ধারণা শুল্ক গোয়েন্দাদের।
গত ৬ এপ্রিল গুলশান-১-এর ৩৩ নম্বর রোডের তুর্কি হোপ স্কুলের পেছনের ১০ নম্বর বাড়ি থেকে এলাকা থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের পোরশে জিপ উদ্ধার করা হয়। প্যাসিফিক গ্রুপের মালিক শফিউল আজম মহসিন শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কার্নেট সুবিধায় গাড়িটি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ব্রিটিশ রেজিস্ট্রেশন প্লেট ব্যবহার করে গাড়িটি ব্যবহার করে আসছিলেন জনৈক মডেল জাকিয়া মুন। এর একদিন আগে গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর রোডের বাসিন্দা কাজী রেজাউল মোস্তাফার ৫ (জি) নম্বর বাড়ি থেকে আরেকটি বিএমডব্লিউ গাড়ি উদ্ধার করা হয়। শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়িটি এনে অবৈধভাবে ভুয়া দলিল দাখিল করে বিআরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশনও নেয়া হয়েছিল। কি করে বা কি ধরনের কাগজপত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন নেয়া হয়েছে তাও রহস্যজনক। এব্যাপারে বিআরটির কর্মকর্তারা কোন কথা বলতে রাজি নন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধরাছোঁয়ার বাইরে চোরাই সিন্ডিকেট ও গাড়ির মালিকেরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ