অভিবাসী সঙ্কট ও পশ্চিমাদের বৈষম্যনীতি

দেশে দেশে যুদ্ধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন উদ্বাস্তু হয়ে পড়ছে। স্বদেশে
দেশের ৪ হাজার ৬০০ ইউনিয়ন-পৌরসভার ১ হাজার ৫৪টি ওয়ার্ড ও ১২টি সিটি করপোরেশনের ৪৩৩টি ওয়ার্ডে ৬ দিনের গণটিকা কার্যক্রমের প্রথম দিন গত শনিবারে টিকা কেন্দ্রগুলোতে টিকা গ্রহণেচ্ছু মানুষের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও বিপুল উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক ৭ দিনে প্রায় ১ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে বলে আগে জানালেও পরবর্তীতে তা কমিয়ে ৩২ লাখ করার কথা জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক। সে মোতাবেক গণটিকাদান কর্মসূচি শুরুর দিনেই গণ ও নিয়মিত টিকা দেওয়া হয়েছে ৩০ লাখের বেশি মানুষকে। গত কিছুদিন ধরে ৩ লাখ করে নিয়মিত টিকাদান চলছিল। টিকা দেওয়ার মোট সংখ্যা থেকে এই ৩ লাখ বাদ দিলে প্রথম দিন ২৭ লাখের বেশি গণটিকা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব জানিয়েছেন, প্রথমদিনেই লক্ষ্যমাত্রার ৯২ থেকে ৯৫ শতাংশ টিকা দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা একটা বিরাট সাফল্য। এ থেকে দুটি বিষয় বিশেষভাবে সামনে এসেছে। প্রথমত, দেশের মানুষ যে টিকা নিতে খুবই উৎসাহী ও আগ্রহী সেটা প্রমাণিত হয়েছে। টিকার ব্যাপারে গণসচেতনতা বেড়েছে, এটা তারও প্রমাণ। দ্বিতীয়ত, এই গণটিকা কার্যক্রম সফল করে তুলতে স্বাস্থ্যকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এটা তাদের দায়িত্বনিষ্ঠারও প্রমাণ। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ প্রাপ্য। দেশব্যাপী করোনার গণটিকাদানের এমন কর্মসূচি এই প্রথম হওয়ায় কোথাও কোথাও অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, স্বজনপ্রীতি, সিদ্ধান্তের হেরফের ও হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, প্রতি কেন্দ্রে ২শ থেকে ৩শ টিকা সরবরাহ হয়। কিন্তু টিকার তুলনায় লোকসংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেককেই টিকা না পেয়ে ফেরৎ যেতে হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বিফল হওয়া বিড়ম্বনাকর ও হতাশাজনক। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন ও টিকা একই দিনে হওয়ায় বিলম্ব ও হয়রানি বেশি হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টিকাকেন্দ্রের তাৎক্ষণিক পরিবর্তনও হয়রানি বাড়িয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ ঘটেছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। এনজিওদের সম্পৃক্ততা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনিয়মের জন্ম দিয়েছে। টিকাকেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। স্বাস্থ্যবিধি ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ত্রুটি ও দুর্বলতা ছিল। সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের অভাব, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অপারাগতা এবং সমন্বয়হীনতা গণটিকা দানের ক্ষেত্রে লক্ষ করা গেছে। লকডাউন নিয়ে, টিকা নিয়ে এ অভিযোগ পুরনো। যে কোনো কর্মসূচির কাক্সিক্ষত সফলতা নির্ভর করে বাস্তবোচিত চিন্তাভাবনা এবং পরিকল্পনার ওপর। দক্ষ, অভিজ্ঞ, সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মীবাহিনীও এ জন্য অপরিহার্য। করোনা প্রতিরোধে টিকার উপযুক্ত বিকল্প এখনো পাওয়া যায়নি। টিকা গ্রহণকারী করোনা থেকে তুলনামূলকভাবে অধিক নিরাপদ। অথচ এই টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমরা বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারিনি। ভারতের সিরামের ওপর এককভাবে নির্ভরতা যে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না, সেটা প্রমাণিত হয়েছে। সিরাম টিকা না দেওয়ায় আমরা টিকাদানে পিছিয়ে পড়েছি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও আমাদের চেষ্টা-প্রচেষ্টা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে দেশে টিকা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত এখনো আমরা নিতে পারিনি। উপহার ও কেনা টিকার সংখ্যা নিয়েও সরকারি মহলের একেক জন একেক কথা বলেছেন। টিকাদান নিয়ে সমন্বিত সিদ্ধান্ত লক্ষ করা যায়নি। নতুন করে টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হয়েছে এবং মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া প্রত্যক্ষ করা গেছে। ইতোমধ্যে ১ কোটিরও বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছে। নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জটিলতা মোকাবিলা করতে হয়েছে অনেককে। নিবন্ধন দ্রুত ও সহজ হলে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতো। নিবন্ধন আসল নয়, টিকা পাওয়াই মূল কথা। সেই টিকা, যার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখন নিবন্ধনকারীরা ফিরতি বার্তা পায়নি। নিবন্ধনকারীদের টিকার ব্যবস্থা না করে গণটিকা কর্মসূচি নেওয়া কতটা সুবিবেচনার পরিচায়ক হয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। টিকা নিয়ে এ ধরনের তালগোল অবস্থা কাম্য হতে পারে না। নিয়মিত টিকাদান অব্যাহত ও জোরদার করার পাশাপাশি গণটিকা কার্যক্রম চলতে পারে।
যত দ্রুত সম্ভব দেশের মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে গণটিকা কার্যক্রম একটি যথাযোগ্য উদ্যোগ বটে, তবে তা অবশ্যই ত্রুটিমুক্ত ও হয়রানিমুক্ত হতে হবে। টিকার ব্যাপারে কোনো কারণে মানুষের মধ্যে হতাশা-নিরাশা ও অনীহভাব যাতে না আসে, তা দেখতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেছেন, প্রথমবারের মতো হওয়ায় এই ক্যাম্পেইনে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। ভবিষ্যতে সেগুলো সংশোধন করা হবে। এ বক্তব্য ইতিবাচক। গণটিকা কর্মসূচির আরো কয়েকদিন বাকী আছে। সেই দিনগুলোতে আর যাতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি না হয়, সেই দিকে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক-সজাগ থাকতে হবে। ভবিষ্যতে এ কর্মসূচি বাড়ানো হলে সে ক্ষেত্রেও এদিকে নজর রাখতে হবে। টিকা নেওয়ার ব্যাপারে শুরুতে মানুষের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা গেলেও এখন তা নেই। অধিকাংশ মানুষের মধ্যে এই সচেতনতা জাগ্রত হয়েছে যে, টিকা নিলে তারা করোনা থেকে অধিক নিরাপদ থাকবে। ফলে টিকায় তাদের আগ্রহ বেড়েছে। এই আগ্রহ ধরে রাখতে হবে। বিভিন্ন দেশে টিকা গ্রহণে মানুষের অনীহা দূর করতে নানা রকম প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও তারা আগ্রহী হচ্ছে না। আমাদের দেশের মানুষ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এটা টিকায়ন সফল করার সবচেয়ে বড় শর্ত। মানুষের আগ্রহ ও সদিচ্ছাকে সম্মান জানাতে হবে, কাজে লাগাতে হবে। চলতি বছরের মধ্যে আমাদের টিকাদান কর্মসূচি এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, যাতে বেশিরভাগ মানুষ ২ ডোজ টিকা পায়। এজন্য প্রয়োজনীয় টিকার সংস্থান করতে হবে। কিনে হোক, আর উৎপাদন করে হোক প্রয়োজনীয় টিকার বন্দোবস্ত করতে হবে। টিকার প্রয়োজন সহসা কমে যাবে বা শেষ হবে, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। সুতরাং টিকার আয়োজনের পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। যাতে এ কর্মসূচি সহজ ও সুসমন্বিত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।