Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চলছে হরিলুট, ভুয়া ভাউচারে কোটি টাকা আত্মসাৎ

দিনাজপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এক প্রতিষ্ঠানেই ১৭ বছর চাকরি

মাহফুজুল হক আনার, দিনাজপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

সরকারি বিধিমালাকে উপেক্ষা করে একটানা ১৭ বছর একস্থানে থেকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য কায়েম করেছেন দিনাজপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) কম্পিউটার বিভাগের চীফ ইন্সট্রাক্টর নিমাই কুমার দত্ত।
অভিযোগ রয়েছে তার মাধ্যমে প্রাক্তন প্রিন্সিপাল মাসুদ রানা এবং ইলেক্ট্রিক্যাল বিভাগের চীফ ইন্সট্রাক্টর শেখ রাকিবুল হাসানসহ ৫ জনের একটি সিন্ডিকেট ভুয়া বিল ভাউচারে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের। এরছাড়া নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার মামলায় মাস খানেক হাজতবাস করলেও সেই তথ্য গোপন করে চাকরি বিধি লঙ্ঘন করেছেন তিনি। দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগের ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠনসহ দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগিরা।
জানা গেছে, দেশে বিদেশে কর্মসংস্থান এবং দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে ২০০৪ সালে দিনাজপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষন কেন্দ্রটি। এতে গ্রাফিক্স ডিজাইন, আইটি সাপোর্ট সার্ভিস, সুইং মেশিন অপারেশন, ম্যাশিনারী, ইলেকট্রোনিক্স ইন্সটলেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স, প্লাম্বিং, মোটর ড্রাইভিং উইথ বেসিক, কম্পিউটার অপারেশন এবং মেইনটেন্যান্স এর কারিগরি বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ পেয়ে বিদেশ গিয়ে দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে প্রশিক্ষিত জনশক্তিরা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিকে অবৈধভাবে আয়ের উৎসে পরিণত করে গেল কয়েক বছরে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত করেছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে লিখিতভাবে করা অভিযোগের সূত্রে জানা গেছে, গেল ১৭ বছরে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ১ কোটি টাকা আত্মসাতের ফিরিস্তি পাওয়া গেছে। স্টেপ প্রকল্পে গার্মেন্টস ট্রেডের জন্য (জিডি-৪) একটি ব্রান্ডেড ফ্রেবিক্স ইন্সপেকশন মেশিন কেনায় বরাদ্দ ছিল ৪ লাখ টাকা। কিন্তু ৮০ হাজার টাকায় স্থানীয় ভাবে তৈরি মেশিন কিনে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। জিডি ৩ প্রকল্পে ট্রেডের শিক্ষার্থীদের শেখানোর জন্য ২০১৯ সালে তার মাধ্যমে ১৪ লাখ টাকায় ক্রয় দেখানো হয়েছিল একটি পিএলসি মেশিন। কিন্তু নির্ধারিত ব্রান্ডের কোম্পানীর পরিবর্তে নিম্নমানের মেশিন ক্রয় করায় এখন অকেজো ওই মেশিনটি। ফলে ওই মেশিন এখন প্রতিষ্ঠানের মাথা ব্যথার কারণে পরিনত হয়েছে। শুধু তাই নয় মেশিনটি অকেজো থাকার কারণে ওই ট্রেডেই ভর্তি করা হয়নি কোন শিক্ষার্থী। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহারের জন্য (জিডি-১ প্রকল্পে) কেনা ৪টি ডিজিটাল ইন্টারেক্টেভিটি বোর্ডের প্রতিটির বাজার দর প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার হিসেবে সবোর্চ্চ দাম ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতিটির ক্রয় মূল্য ৮ লাখ করে ৪টির দাম পরিশোধ দেখানো হয়েছে ৩২ লাখ টাকা। এখাতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। এছাড়াও স্টেপ (জিডি-১ প্রজেক্টের) প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাখিল করা (টেন্ডার মূল্য) দর ছিল ৩৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। তৎকালিন প্রিন্সিপার মাসুদ রানাসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে ওই সময়ে ফিন্যান্স ইনচার্জের দ্বায়িত্বে থাকা ইন্সট্রাক্টর নিমাই কুমার দত্ত ৩৮ লাখ ৩১ হাজার টাকা বিল পরিশোধ দেখিয়ে হাতিয়ে নেন আরো ৩ লাখ ১১ হাজার টাকা। (জিডি-৪ প্রকল্পে) আরেকটি টেন্ডারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দর ছিল ২৪ লাখ ৯ হাজার টাকা। কিন্তু বিল ভাউচারের কাগজপত্র পরিবর্তন করে ২৬ লাখ ৯ হাজার ২শ’ টাকা পরিশোধ দেখিয়ে আত্মসাত করা হয়েছে আরো ২ লক্ষাধিক টাকা। (জিডি-৫ প্রকল্পে) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দর ছিল ১১ লাখ ৯৯ হাজার পাঁচশত টাকা। একই কায়দায় পরিশোধ দেখানো হয়েছে ১২ লাখ ৯৫ হাজার পাঁচশত টাকা। এভাবেই হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
দুর্নীতি ছাড়াও অমানবিক এবং গুরুতর অভিযোগ রয়েছে যে, বিভিন্ন কাজের বিলের টাকার জন্য ধর্ণা দিতে দিতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয় বন্ধ হয়ে অকস্মিক ভাবে মারা যান ওই কাজে নিয়োজিত একজন ঠিকাদার। এ সুযোগে ভুয়া বিল ভাউচারে সেই কাজের ১০ লাখ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। আত্মসাতের টাকায় বগুড়ায় শিববাটিতে স্নেহা ভিলা নামে কোটি টাকা খরচে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন তিনি। অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা জানতে চাইলে ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়সহ অনিয়মের মাধ্যমে পকেটে টাকা পুরার অভিযোগ অস্বীকার করছেন কম্পিউটার বিভাগের চীফ ইন্সট্রাক্টর নিমাই কুমার দত্ত। তবে বৈধ টাকায় বগুড়ার শিববাটির পৈত্রিক জমিতে স্নেহা ভিলা নামে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি। অভিযোগকারীদের মতে তদন্ত হলে সরকারের কারিগরি বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিক্তিক অর্থ লোপাটের আরো তথ্য বেরিয়ে আসবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ