Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্মরণকালের অস্ত্রভান্ডার তালেবানের দখলে

আপাতত ধ্বংসের পরিকল্পনা নেই যুক্তরাষ্ট্রের

ডানা ইশরাত | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

আফগান সামরিক বাহিনীকে দেওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২ হাজারেরও বেশি সাজোয়া যান ও ৪০টি বিমানভর্তি স্মরণকালের বৃহৎ এক অস্ত্রভান্ডার দখলে নিয়েছে তালেবানরা। মার্কিন তৈরি হামভি, প্লেন, হেলিকপ্টার, নাইট-ভিশন গগলস এবং ড্রোনসহ নানা অস্ত্রে ভরপুর এই ভান্ডার। আফগানিস্তান দখলের পর তাদের তালেবান যোদ্ধাদের হাতে বহুল ব্যবহৃত একে-৪৭ রাইফেলের পরিবর্তে মার্কিন নির্মিত এম-৪ কারবাইন এবং এম-১৬ রাইফেল দেখা গেছে। এছাড়া, তাদের মার্কিন হামভি ও মাইন প্রতিরোধক অ্যামবুশ প্রটেক্টেড গাড়িতেও দেখা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, তালেবানের হাতে মার্কিন অস্ত্র থাকার অর্থ হচ্ছে মনস্তাত্তি¡কভাবে তারা বিজয়ী। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর দ্রæত পতন ঘটে। এ অবস্থায় কয়েকশ’ কোটি ডলারের মার্কিন অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম তালেবানের কব্জায় আসে। এসব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে বø্যাক হক হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে এ-২৯ সুপার টুকানো বিমানও রয়েছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল যে, আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রসজ্জিত করতে গত ২০ বছরে দেশটি ৯ হাজার কোটি ডলার খরচ করেছে, যদিও তাদের এই প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র তালেবান হামলা ঠেকাতে পারেনি। উল্টো মার্কিন সেনাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক সদস্য তালেবানে যোগ দিয়েছে।

এক পরিসখ্যানে দেখা যায়, ২০০২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীকে ২৮শ’ কোটি টাকার সমরাস্ত্র দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বন্দুক, রকেট, নাইট-ভিশন গগলস, গোয়েন্দা নজরদারি চালানোর জন্য ড্রোন। তবে উপহারের তালিকায় সবকিছুর উপরে ছিল বø্যাকহক হেলিকপ্টার। তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান সেনাদের এটা বেশ এগিয়ে রাখত।

মার্কিন গভর্নমেন্ট একাউন্টিবিলিটি অফিসের ২০১৭ সালের তথ্য অনুসারে, আমেরিকা আফগানিস্তানকে ৭৫,৮৯৮টি গাড়ি; ৫,৯৯,৬৯০টি অস্ত্র; ১,৬২,৬৪৩টি যোগাযোগের সরঞ্জাম, ২০৮টি বিমান ও হেলিকপ্টার এবং ১৬,১৯১টি গোয়েন্দা ও নজরদারি সরঞ্জাম দিয়েছে। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এসব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দেওয়া হয়। আফগানিস্তানকে দেওয়া বিমান ও হেলিকপ্টারের ৪৬টি এখন উজবেকিস্তানে রয়েছে। তালেবানদের কাবুল দখলের পর এসব এয়ারক্রাফট ব্যবহার করে প্রায় ৫শ’ আফগান সেনা উজবেকিস্তানে পালিয়ে যায়।

এছাড়া, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানকে ৭ হাজার ৩৫টি মেশিনগান; ৪ হাজার ৭শ’ ২টি হামভি গাড়ি, ২ হাজার ৪০টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ২ হাজার ৫শ’ ২০টি বোমা ও ১ হাজার ৩শ’ ৯৪টি গ্রেনেড লাঞ্চার দিয়েছে ওয়াশিংটন। আফগানিস্তান পুনর্গঠনের বিশেষ মহাপরিদর্শকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনের হিসাব অনুসারে, শুধু গত দুই বছরে আমেরিকা আফগান সামরিক বাহিনীকে ১৮ মিলিয়নেরও বেশি রাউন্ড ৭.৬২ মিমি এবং .৫০-ক্যালিবারের গোলাবারুদের দিয়েছে।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘যা কিছু ধ্বংস হয়নি, এখন তা তালেবানদের।’ এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি রয়টার্সকে জানিয়েছে, ‘আমরা ইতোমধ্যেই তালেবান যোদ্ধাদের আফগান বাহিনীর কাছ থেকে মার্কিন তৈরি অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত হতে দেখেছি। এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের মিত্রদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হুমকি।’ তবে, মার্কিন কর্মকর্তারা সিএনএনকে বলেছেন যে, এ মুহূর্তে, বিমানবন্দরে আমেরিকান সৈন্যদের জন্য সরাসরি কোনও হুমকি দেখা না দিলে বিমান হামলা বা অন্যান্য উপায় ব্যবহার করে অস্ত্র ধ্বংস করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ নেওয়ার আপতত কোন পরিকল্পনা নেই।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অস্ত্রগুলো আইএসআইএসের হাতে অথবা চীন বা রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে বলে উদ্বিগ্ন মার্কিন কর্মকর্তারা। তালেবান যোদ্ধাদের হাতে আমেরিকান অস্ত্র পৌঁছে যাওয়াকে আমেরিকা ও তার মিত্রদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য মাইকেল ম্যাককউল। কিন্তু ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জোসেফ ভোটেল বলছেন, যেসব সমরাস্ত্র তালেবানের হাতে গেছে, সেগুলো স্পর্শকাতর প্রযুক্তি সম্বলিত নয়।

বিশ্লষকরা বলছেন যে, আমেরিকা আফগান সামরিক বাহিনীর জন্য রেখে যাওয়া সমস্ত সরঞ্জাম ধ্বংস করেনি কারণ তাদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, আফগান বাহিনী পাল্টা লড়াই করবে না। লং ওয়ার জার্নালের বিল রোজিওর মতে,‘ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অস্ত্র ও যানবাহন পিছনে ফেলে রাখা হচ্ছে পরিকল্পনার ব্যাপক অভাবের একটি লক্ষণ যা আফগাস্তিান থেকে মার্কিন প্রস্থানকে তরান্বিত করেছে।’

তবে, মার্কিন কর্মকর্তারা সন্দিহা যে, তালেবানরা মার্কিন তৈরি ছোট অস্ত্র এবং সাঁজোয়া যান ব্যবহার করতে সক্ষম হলেও আমেরিকান বিমানকে একটি কার্যকর যুদ্ধ ইউনিটে পরিণত করতে পারবে না। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমাদের সৈন্য, নাবিক এবং বিমানবাহিনী তাদের বিমান ব্যবহার করার জন্য মাসের পর মাস প্রশিক্ষণে ব্যয় করে। তালেবানরা তা করে না।’

রোজিও সিএনএনকে বলেন, ‘তালেবানদের জন্য আরও অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। হেলিকপ্টার এবং প্লেনগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য কার্যকর রাখা তাদের জন্য খুব কঠিন হতে চলেছে। রাশিয়ান বিমান, সেগুলোতে তাদের অভিজ্ঞতা বেশি এবং পাকিস্তানিরাও সেগুলোতে সাহায্য করতে পারে।’

রোজিও আরও বলেন, ‘তারা স্বল্প এবং মাঝারি মেয়াদে বিমান ব্যবহার করতে সক্ষম হতে পারে কিন্তু কোন ধরনের সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকলে, এতে সেগুলোর স্থায়িত্বকাল তুলনামূলকভাবে কমে যাবে। যুদ্ধ ক্ষমতা হিসেবে তারা যা অর্জন করেছে তা হল, সাঁজোয়া যান ও হালকা সাঁজোয়া যান এবং এমনকি কিছু ট্যাঙ্ক ও কামান।’ সূত্র : সিএনএন, রয়টার্স।



 

Show all comments
  • Nayeem Islam ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৫ এএম says : 0
    নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে। (সূরা রাদ : আয়াত ১১)।
    Total Reply(0) Reply
  • Shahidul Islam ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৫ এএম says : 0
    বিশ্বকে আমাদের বিজয় সহ্য করতে হবে, কারণ আমরা কারও বাড়িতে হামলা করিনি। আমরা বিশ্বকে বলি যে, আমরা সমগ্র বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক চাই, কিন্তু আমাদের ধর্মীয় বিষয়ে কারো হস্তক্ষেপ আমরা গ্রহণ করি না। আমরা কারও শক্তি গ্রহণ করি না বা কারও অস্ত্রের কাছে আত্মসমর্পণ করি না। -জবিহুল্লাহ মুজাহিদ
    Total Reply(0) Reply
  • Lotiful Khabir ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৬ এএম says : 0
    এগুলো দিয়ে ভারতের সাথে একটু Practice করা উচিত। সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না দেখার জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Uttam Sarker ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৬ এএম says : 0
    মুসলিম দেশে মুসলিম রিতিতে মুসলমান চলবে মুসলিম নীতিতে। আমি আফগানিস্তানের কথা বলছি। বিশ্ববাসীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, যেহেতু এই দেশটির মোট জনসংখ্যার ৯৯৳•৭৫% ভাগ মানুষই মুসলিম, অতএব অন্ততপক্ষে একটি দেশকে সম্পুর্ণ রূপে কুরানের আইন অনুযায়ী চলতে সবাই সহযোগিতা করুন। আমি বিশ্ববাসীর কাছে পুণরায় বিনীতভাবে অনুরোধ করছি! এখানে কোনো ইহুদী, খৃষ্টান ,বৌদ্ধ কিংবা হিন্দু ,কারো সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপক অগ্ৰহন যোগ্য! একেবারে গ্ৰহনযোগ্য নয়!! দয়াকরে ,সমগ্ৰ বিশ্ববাসীর সহযোগিতা কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Kholil Ahmed ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৭ এএম says : 0
    এমন কোন অস্ত্র নাই নাই যা তালেবান ব্যাবহার করতে জানেনা সবি পারবে
    Total Reply(0) Reply
  • Hurishi Mayo ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৭ এএম says : 0
    এদের কথায় আল্লাহর নবী (সা:)সেই সাড়ে চোদ্দশ বছর আগে বলে গেছেন । আর এরাই ইমামুল মাহদির সাথে যোগদান করবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Sunny Chowdhury ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫৭ এএম says : 0
    সবি হচ্ছে আমেরিকান পলিসি.... এশিয়ার রাজনৈতিক অবস্থা ঘোলাটে করতে এইসব করা। অস্ত্র দিয়ে গেছে এবার নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করো। তবে এটাও মনে হচ্ছে মার্কিনিদের সময় ফুরিয়ে আসছে।
    Total Reply(0) Reply
  • হোছাইন আহমাদ ২২ আগস্ট, ২০২১, ৬:১৩ এএম says : 0
    ঈমানদার অস্ত্রের জোরে বলিয়ান নয়, ঈমানদার আল্লাহু আকবার বলে এক মুঠো বালু নিক্ষেপ করলে তা কাফিরের জন্য বোমায় রূপান্তরিত হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Rifat ২২ আগস্ট, ২০২১, ৯:৪৯ এএম says : 0
    তারা ছোট ছোট অস্ত্র ব্যবহার করে, অস্ত্রে সুসজ্জিত আফগান বাহিনীকে পরাজিত করেছে,তারা অবশ্যই বড় বড় অস্ত্র ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। আল্লাহই তাদের সাহায্য করবেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ