Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকাটাই হচ্ছে হেফাজত নেতাকর্মীদের মূল দায়িত্ব

একান্ত আলাপচারিতায় নয়া আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী

সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কুরাইশী, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নয়া আমীর এবং আলেমেদ্বীন আল্লামা শাহ মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকাটাই হচ্ছে এই মুহূর্তে হেফাজত নেতা-কর্মীদের মূল দায়িত্ব। দ্বীনি ইলম অর্জন আর বিতরণ তালেবে ইলমদের প্রধান কাজ। তাই রাসূলের সুন্নাহকে প্রতিষ্ঠিত করতে তালেবে ইলমদের এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফি ও সদ্য মরহুম আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর আত্মা শান্তি পাবে।
তিনি বলেন, চলমান সঙ্কট কাটাতে সর্বোচ্চ ধৈর্য্য এবং হেকমতের সাথে এ দ্বীনি সংগঠনের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। কোন ভাবেই উসুলে দেওবন্দ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। স্বীকৃতির নামে উসুলে দেওবন্দকে শিকল পড়ানোর চেষ্টা চলছে। স্বীকৃতি দিয়ে এখন উসুলে দেওবন্দের সিলেবাস পাল্টানোর দাবি তোলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে দেশের সর্বস্তরের ওলামা মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতাকে সজাগ থাকতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সদ্য মরহুম হেফাজত আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আমার বড় ভাগিনা। আমার পিতা আল্লামা হারুন বাবুনগরীর অতি প্রিয় নাতি ছিল সে, ওনি তাকে লেখা-পড়া শিখিয়েছেন। সে কারণে জুনায়েদ বাবুনগরীও তার নানা ভক্ত। তাই তার অতি ইচ্ছা ছিল সে মারা গেলে বাবুনগর মাদরাসায় নানার পাশে যেন তার দাফন দেয়া হয়। যেখানে তার মা-বাবার কবরও আছে। বিষয়টি গত ৪ আগস্ট আমার স্ত্রীর জানাজা শেষে সে আমার ঘরে গিয়ে বাবুনগরেই তার দাফন করার জন্য ওসিয়ত করে। এ জন্যই আমি তার শেষ ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা করেছি; কিন্তু আল্লাহ’র ফায়সালাই চুড়ান্ত। আল্লাহ তাকে যেখানে ইচ্ছা; সেখানেই শায়িত করেছে। তার জন্য আমার কোন ক্ষোভ নেই। সকলে তার জন্য দোয়া করবেন এ প্রত্যাশাই করি।
তিনি গত শুক্রবার বাদ জুমা প্রথম দিনই এ প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এবং সৌজন্য সাক্ষাতে আসা গাজীপুর হেফাজতের কর্মীদের উদ্দেশ্যে নসিহতকালে এসব কথা বলেন। এরপর হেফাজতের নায়েবে আমীর আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নতুন আমীর আল্লামা শাহ মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সাথে বাবুনগর মাদরাসায় সাক্ষাৎ করেন।
নয়া আমীর শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর জীবন বৃত্তান্ত : হেফাজতের নয়া আমীর আল্লামা শাহ মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ১৯৩৪ সনের ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার অজপাড়াগাঁ দৌলতপুরস্থ বাবুনগর গ্রামে আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আল্লামা শাহ মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী (র.) ও মাতা উম্মে ছালমা। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। শৈশবে তিনি বাবা আল্লামা হারুন বাবুনগরী কর্তৃক ১৯২৪ সনে প্রতিষ্ঠিত আল-জামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদরাসায় লেখাপড়া করেন। ৮ বছর (চাহরম শ্রেণি) পড়ে ১৯৪৯ সনে তিনি হাটহাজারী মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে ২ বছর (চুয়াম শ্রেণি পর্যন্ত) পড়ে ১৯৫২ সনে পাড়ি জমান ভারতের বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষাঙ্গন ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ মাদরাসায়। সেখানে গিয়ে তিনি আবারো চুয়াম (৯ম শ্রেণি), দুয়াম (১০ম শ্রেণি), উলা ও দাওরায়ে হাদীস শেষ করেন। পরে আরো এক বছর হাদীস শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। ওই সময় তার ওস্তাদ ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী (র.), আল্লামা বলিয়ভী (র.) ও শায়খুল হাদীস আল্লামা সৈয়দ ফখরুদ্দীন (র.)। ওখানে যাওয়ার সাড়ে ৩ বছরের মাথায় আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী ইন্তেকাল করেন এবং সেই ঐতিহাসিক জানাজায় তিনি শরীক ছিলেন। ১৯৬০ সনে তিনি দেওবন্দ থেকে ফেরৎ এসে পিতার প্রতিষ্ঠিত বাবুনগর মাদরাসায় শিক্ষকতায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৮৬ সনে তার গর্বিত পিতা আল্লামা শাহ মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী ইন্তেকাল করলে তিনি বাবুনগর মাদরাসার মুহতামিম নিযুক্ত হন। সে থেকে আজ অবদি তিনি মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ১৯৬০ সনে দেওবন্দ থেকে ফিরেই পিতার নির্দেশে ফটিকছড়ির ধর্মপুর আদু বাপের বাড়ি থেকে বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম মরিয়ম বেগম। তিনি গত ৪ আগস্ট ইন্তেকাল করেছেন। তার ৩ পুত্র মাওলানা মুহাম্মদ আইয়ুব বাবুনগরী, মুফতি মুহাম্মদ মহিউদ্দীন বাবুনগরী ও মাওলানা মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন বাবুনগরী এবং ৮ কন্যা সন্তান যারা সকলে বিবাহিত। তিনি হেফাজতের প্রতিষ্ঠাকালীন সিনিয়র নায়েবে আমীর ছিলেন। কওমী সনদের সরকারি স্বীকৃতি নেয়া বিষয়ে বিরোধের জের ধরে তিনি হেফাজত, হায়াতুল উলিয়া ও বেফাকুল মাদারিস এবং ইসলামী ঐক্যজোটসহ সব সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন। হেফাজত আমীর আল্লামা আহমদ শফির ইন্তেকালের পর তিনি হেফাজতে ফেরেন এবং সংগঠনটির আমীর হবার সম্ভাবনা থাকলেও আপন বড় ভাগিনা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর আত্মত্যাগ মূল্যায়ন দিতে তিনি তা হতে রাজী হননি। তবে ওনাকে হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়। গত বৃহস্পতিবার ভাগিনা হেফাজত আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুতে আমীর পদটি শূন্য হলে জুনায়েদ বাবুনগরীর জানাজায় আল্লামা শাহ মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে হেফাজতের নতুন আমীর ঘোষণা করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ