Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মৃত্যুপথযাত্রীদের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অক্সিজেন সেবা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪১ পিএম

করোনা মহামারি চলছে বিশ্বব্যাপি। বৈশ্বিক এই মহামারিতে গ্রামের মানুষের জন্য বিনামূল্যে অক্সিজেনের সিলিন্ডার সেবা পৌঁছে দেয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সামাজিক দায়বদ্ধতার মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে এসব ব্যক্তি বা তাদের প্রতিষ্ঠান করোনাকালে পাশে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষের।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিশন, বাংলাদেশ আইইবি ও ম্যাক্স গ্রুপের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় ১৫০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। যার সিংহভাগ উপকারভোগী হলো করোনায় অক্সিজেনের কারণে মৃত্যুপথযাত্রী। এবিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিশন, বাংলাদেশ আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন শিবলু ইনকিলাবকে বলেন, দেশের মানুষ যখন কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে, তখন আমরাও প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ অনেক প্রকৌশলীকে হারিয়েছি। কেনো এমন উদ্যোগ নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও আইইবির সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী আবদুস সবুরের পরামর্শক্রমে আমরা সারাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিই। আইইবি ও ম্যাক্স গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করি। ১৮ জুলাই উদ্বোধন হয় এটি। এখনও চলমান আছে। আমাদের এই সেবায় যদি একজন মানুষও বেঁচে যান, আমরা মনে করি এটাই আমাদের সাফল্য। তিনি বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার মূল্যবোধ থেকেই আমরা এমন উদ্যোগ নিয়েছি। একই কথা বললেন সংগঠনটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম হাজারী।

এই প্রকল্প থেকে কুমিল্লার বুড়িচং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০টি সিলিন্ডার বরাদ্দে কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন কাজ করেছেন প্রত্যক্ষভাবে। বাসস’র এই সিনিয়র রিপোর্টার ইনকিলাবকে বলেন, করোনা মহামারিতে এই অদৃশ্য ভাইরাসের কাছে আমরা সবাই অসহায়। এই সময়ে মানুষের মানবিকতাকে জাগ্রত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পূর্বসূরিরা দেশের প্রয়োজনে যদি জীবন উৎসর্গ করতে পারেন, তাহলে আমরা কেনো এই মহামারিতে মানুষের পাশে থাকতে পারবো না? তিনি প্রকৌশলী আবদুস সবুরসহ প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে যারা কাজ করছেন, তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা যে, তারা মানবতার সেবা করে যাচ্ছেন।

উপকারভোগী এলাকা কুমিল্লা-৫ এর জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান এই প্রতিবেদককে বলেন, যারা অক্সিজেন সিলিন্ডার অনুদান দিয়েছেন এবং যারা তাদের নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের দ্বারে দ্বারে এই সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন, তাদেরকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষ করে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুরসহ আইইবি’র সকল প্রকৌশল ও ম্যাক্স গ্রুপের সকল কর্মকর্তাকে আমি বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগ ও আমার এলাকার সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, যারা এই মহৎ কাজে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। যারা নিজেরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় না করে এমন মহৎ কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন, তারাই প্রকৃতপক্ষে সমাজসেবক। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এই মহৎ কাজ করায় মহান আল্লাহর কাছে তাদের জন্য আমি দোয়া করি।

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মীর হোসেন মিঠু ইনকিলাবকে জানান, করোনাকালে আমরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ৪২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার পেয়েছি। যার মধ্যে জিহান গ্রুপের কর্ণধার শাহজাদা আহমেদ রনি ১০টি, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিশন, বাংলাদেশ ও ম্যাক্স গ্রুপ থেকে সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন ও সাংবাদিক আবদুল অদুদের মাধ্যমে ১০টি, আনন্দ পাইলটিয়ান্সের পক্ষে ডা. এম এ হাশেমের মাধ্যমে ৯টি, বুড়িচং উপজেলা সমিতি, ঢাকার পক্ষ থেকে সভাপতি এমএ মতিন এমবিএর মাধ্যমে ৬টি, উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আখলাক হায়দারের মাধ্যমে ৫টি ও এম এ গনি ব্রিকসের পক্ষ থেকে কামাল হোসেনের মাধ্যমে ২টি সিলিন্ডার পেয়েছি। তিনি বলেন, এসব সিলিন্ডার না পেলে আমরা করোনায় হিমসিম খেতে হতো। বেসামাল হয়ে পড়তো স্বাস্থ্যসেবা। তিনিও সকলকে এজন্য ধন্যবাদ জানান।

কেনো এমন কাজে সম্পৃক্ত হলেন প্রশ্ন করলে বুড়িচং উপজেলা সমিতির সভাপতি এমএ মতিন এমবিএ ইনকিলাবকে বলেন, কোভিড-১৯ ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের মধ্যে যাদের শাঁস কষ্ট হয়, তাদের জন্য অক্সিজেন সাপোর্ট খুবই জরুরি | সময়মতো অক্সিজেনের অভাবে যে কোনো রোগী মারা যেতে পারে | তাই নিজেদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সমিতির সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতায় আমরা এমন কাজে সম্পৃক্ত হয়েছি। তিনি বলেন, আপনার আমার দেয়া একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষটির জীবন বাঁচাতে পারে।

জিহান গ্রুপের কর্ণধার শাহজাদা আহমেদ রনি ইনকিলাবকে বলেন, এলাকার মানুষের সেবায় সামাজিক দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করে আমি এমন মহৎ কাজে অংশগ্রহণ করি। এই সেবার মাধ্যমে যদি ১০টা লোক প্রাণে বেঁচে যান, নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করব বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এছাড়াও বিভিন্ন গ্রামভিত্তিক নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে অক্সিজেন সেবা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে অনেক সামাজিক মানুষ ও সংগঠন। কেউবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে এই সেবা। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই সংস্কৃতি অব্যাহত থাকুক, এমনটাই আশা করছে দেশের আপামর জনগণ।



 

Show all comments
  • Mohammad Alamgir ২৪ আগস্ট, ২০২১, ৫:৩৪ পিএম says : 0
    It's a great initiative.I hope all people should appreciate this work & should stand beside them.May Allah (SW) accept this great work.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ