Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুয়াকাটায় বাড়ছে পর্যটক

একই সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উপভোগ পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ায় হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে

মো. জাকির হোসেন পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকত থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ’ বিখ্যাত এই দেশাত্মবোধক গানের পংক্তির মতোই কুয়াকাটার সাগর সৈকত। এ সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত প্রাণ ভরে উপভোগ করা যায়। একই সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপূর্ব নৈঃস্বর্গিক মনোরম দৃশ্য অবলোকনের সুর্যোগ দেশের আর কোথাও নেই। প্রকৃতির এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক পটুয়াখালী জেলার এই সাগর সৈকত কুয়াকাটায় আসেন।

করোনা মহামারির ভয়াল থাবায় দ্বিতীয় দফা ১৪০ দিন পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৯ আগস্ট থেকে খুলে দেয়া হয়েছে সারাদেশের পর্যটন কেন্দ্র। ওইদিন থেকে কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত ও পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার ঘোষণার পর পরই গত ২০ ও ২১ আগস্ট যথাক্রমে শুক্র ও শনিবারকে সামনে রেখে কুয়াকাটার বিভিন্ন হোটেলে বুকিং শুরু হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ করে লঘুচাপের প্রভাবে গত ১৯ আগস্ট থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সতর্ক বার্তার প্রভাবে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় পর্যটকদের আগমন কিছুটা কম হয়। এরপরও কয়েক হাজার পর্যটক কুয়াকাটায় আসেন।

এদিকে সরকারের পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার ঘোষণার পরপরই কুয়াকাটার হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে এসেছে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। আবাসিক হোটেল-মোটেল, খাবার হোটেল, স্টেশনারি, ঝিনুক, বার্মিজ মালামাল বিক্রির দোকানি থেকে শুরু করে কাঁকড়া ফ্রাই, বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফার, স্পিডবোট মালিক, ভাড়ায় মটরসাইকেল চালকসহ সকল ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। হোটেল-মোটলসহ খাবার দোকানগুলো তাদের ধোঁয়া মোছাসহ পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করে পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত। অপেক্ষায় আছে অসছে শুক্রবারের জন্য। তাদের আশা এই শুক্রবারে বড় ধরনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া না থাকলে ব্যাপক পর্যটকের আগমন ঘটবে কুয়াকাটায়।

এদিকে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন কেন্দ্রের সকল ধরনের কার্যক্রম চলমান রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। গত ১৭ আগস্ট পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন সভাপতিত্বে কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়েছে। কীভাবে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে করোনাকালীন সময়ে হোটেল-মোটেল, ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখা যায়, সেসব দিক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে। বিধিনিষেধ বজায় রাখতে সচেতনতার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

কুয়াকাটার হোটেল বনানী কমপ্লেক্সের ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, প্রতিমাসে তাদের হোটেলে কর্মচারী বেতনসহ অন্যান্য খরচ মিলে প্রায় দেড়লাখ টাকা খরচ হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মালিকপক্ষকে ক্রমাগত লোকসানের বোঝা টানতে হচ্ছে। এবারে তাদের হোটেলের সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ৩২টি রুমের ৫০ ভাগ বুকিং তারা পেয়েছিল; কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্তে¡ও তাদের ১৬টি রুমের মধ্যে ১০টি রুমের পর্যটক এসেছে। পর্যটন কেন্দ্র দির্ঘদিন পর চালু হওয়ায় তারা আশান্বিত। সামনে পর্যটন মৌসুম শুরু হচ্ছে। এ সময় লোকসান কাটিয়ে উঠার আশা করছেন তারা।

কুয়াকাটা খান প্যালেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল খান জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা তাদের হোটেলে ৫৬ সিটের ৫০ ভাগ বুকিং দিয়েছিল এবং আশানুরূপ পর্যটক আসায় তারা সন্তুষ্ট।
কথা হয় ফোর স্টার মানসম্পন্ন কুয়াকাটার সিকদার রিসোর্ট ও ভিলার অপারেশন ম্যানেজার এমডি আলামিনের সাথে তিনি জানান, সরকার যে শর্ত দিয়ে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, সেভাবেই পর্যটকদের বরণ করতে আমাদের এ প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত ছিলাম। আমাদের ১২টি ভিলা এবং ৬৮টি রুম রয়েছে। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ৫০ ভাগ বুকিং দেয়ার নিয়ম মেনে তারা সম্পূর্ণ পর্যটক পেয়েছেন। তিনি আরোও জানান এ দুর্যোগের মধ্যে পর্যটকদের আশানুরূপ আগমনে তারা সন্তুষ্ট।

কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ জানান, কুয়াকাটায় দেড় শতাধিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। গত বছরের লকডাউনে এবং এবছরে একনাগাড়ে ১৪০ দিন পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় কয়েক শতকোটি টাকার লোকসান হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের ঘিরে কুয়াকাটার সবকিছু নির্ভর করে, সে হিসেবে লোকসানের পরিমাণ আরও কয়েকগুণ হবে। তারপরও সরকার ঘোষিত নিয়ম নীতি মেনে তারা ব্যবসা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।

এদিকে একটানা বন্ধ থাকায় বহু হোটেল-মোটেলের কর্মচারী পর্যন্ত চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে সকল মালিকরা লোকসানের বোঝায় কাহিল হয়ে আছেন, শত শত কোটি টাকার লোকসানের ধকলে পড়েছেন তারা। তিনি পর্যটন খাতে কুয়াকাটার ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেয়ার দাবি জানান। তারপরও সাড়ে চার মাস পরে ফের কুয়াকাটা খুলে দেয়ায় পর্যটক দর্শনার্থীসহ কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা স্বস্তিবোধ করছেন। এ সপ্তাহে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকায় পর্যটকদের আগমন কিছুটা কম হয়েছে, দূর-দূরান্তের পর্যটকারা তেমন আসেনি। তবে আগামী মাস থেকে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে এবং কমবে তাদের লোকসানের বোঝা এমন প্রত্যাশা কুয়াকাটার সকল ব্যবসায়ীদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুয়াকাটায় বাড়ছে পর্যটক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ