Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আবারো বিতর্কিত ছাত্রলীগ

প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : কেন্দ্রীয় নেতাদের সতর্কতা সত্ত্বেও বারবার বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি সংগঠনের এই নীতি সংগঠনের জেলা ও মহানগর শাখার নেতাকর্মীরা মানে না। নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খুনখারাবিতে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্ররাজনীতির ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তাদের কর্মকা-ে ছাত্রলীগ যেমন; তেমনি ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেও বিব্রত হতে হচ্ছে বারবার। এসব সংগঠনবিরোধী তথাকথিত ছাত্রনেতাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নিরীহ ছাত্রীরাও। সরকারি দফতরে টেন্ডারবাজি ও জমি দখল, টাকার ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে জড়ানো ছাড়াও ভাড়াটে হিসেবেও ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও তারা যাত্রা ও জুয়া পরিচালনার দায়িত্বেও রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
সর্বশেষ গত সোমবার সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম। আহত নার্গিস বর্তমানে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের মুন্সী আশিকুজ্জামান কমলকে গত ২ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়েত হোসেন নয়নসহ ৩০ থেকে ৪০ জন রামদা, চাপাতি, রড, হর্টার বের করে হামলা করে। এ ঘটনায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর নির্মাণকাজের টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগের বিরোধে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রশাসনকে জিম্মি করার অভিযোগ এনে লাগাতার অবরোধের ডাক দেয় ছাত্রলীগের একাংশ। এ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ক্যা¤পাসে সেদিন অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগÑ শেখ হাসিনা হল ও কলা ভবনের বর্ধিত কাজসহ প্রায় ৯৭ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে চবি প্রশাসন। এ টেন্ডার পাওয়ার জন্য চবির সাবেক নেতাদের তিনটি সিন্ডিকেট চেষ্টা করছে। এ টেন্ডারে সকলের জন্য উন্মক্ত থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজেদের দখলে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের ভেতরেই। অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া সন্ত্রাসী এবার সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের মানববন্ধনে যোগ দিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ছাত্রলীগ। ৩১ জুলাই ঘটনাটি ঘটে শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের সন্ত্রাসবাদ নিরসনের লক্ষ্যে করা মানববন্ধনে। এর আগে গত জুন মাসের ১৬ তারিখে সদর রোডে পুলিশের চেকপোস্টে নাশকতার উদ্দেশ্যে বহন করা পেট্রলবোমার প্রধান সরঞ্জাম পেপসি-সেভেন আপের ৭টি বোতল, একটি ছুরি ও একটি আধুনিক হাতুড়িসহ আটক হওয়া যশোরের শষীপাড়া এলাকার বাসিন্দা আ: আজিজের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ সাংবাদিককে পেটানোর ১০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগ কর্মীরা দুই সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করে। আহত দুই সাংবাদিক সামছুল আরেফিন হিমেল দৈনিক ইনকিলাব এবং বি এম শাহজাহান বিশ্বাস দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। পরে আহত সাংবাদিকদের রাবির মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এছাড়াও দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল কাস্টমসের জয়েন্ট কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানকে লাঞ্ছিত করেছে শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আকুল হোসেন ও তার দলবল। সুবিধা না পেয়ে অফিসে হামলা করে ছাত্রলীগ নেতা লাঞ্ছিত করেছে যশোরের বেনাপোল কাস্টমস জয়েন্ট কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানকে।
কাস্টমসের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকুল হোসেন তার দলবল নিয়ে আকস্মিকভাবে বেনাপোল কাস্টমস অফিসে হাজির হয়ে জয়েন্ট কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানকে লাঞ্ছিত করে। ঘটনার সময় অফিসের অন্য কর্মকর্তারা ছুটে এসে তাকে রক্ষা করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার দাসের নির্দেশে সবুজ হোসেন নামের এক ছাত্রদল কর্মীকে মারধর করেছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এতে ছাত্রদল কর্মী সবুজ গুরুতর আহত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সাড়ে সাত বছরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হয়েছেন ৫৫ জন। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত এ প্রাণহানি ঘটে। এসব ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০১৪ সালে সবচেয়ে উত্তাল সময় কাটায় ছাত্রলীগ। ওই বছরের আগস্টেই অর্ধশত অপরাধমূলক কর্মকা- ঘটায় তারা। সশস্ত্র সংঘর্ষ, পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের সামনে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের ওপর হামলা, রেলস্টেশন ভাঙচুরসহ নানা ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা এর হল বন্ধ করে দিতে হয়। এপ্রিলের প্রথম দুই সপ্তাহে ১৫টি হামলা-সংঘর্ষে নিহত হন দু’জন।
এদিকে, সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নারগিসকে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে কোপানো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলমের সঙ্গে বর্তমানে কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মো: দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বদরুল আলমকে সন্ত্রাসী দাবি করে এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিশ্বের সর্ববৃহৎ, ঐতিহ্যবাহী একটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এদেশের সাধারণ ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সকল প্রকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাত্র সংগঠনটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা বিনির্মাণ, দেশরতœ শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ, ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যেহেতু ছাত্রলীগ একটি বৃহৎ ছাত্র সংগঠন এবং অসংখ্য নেতাকর্মী এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তাই কারো ব্যক্তিগত অপকর্মের দায়ভার ছাত্রলীগ কখনো নিতে পারে না বা কারো ব্যক্তিগত অপকর্মের দায়ভার কোনো সংগঠনের ওপর চাপিয়ে দেয়াও ঠিক না।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গত ৩ অক্টোবর সিলেট এমসি কলেজে সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনায় ছাত্রলীগ অত্যন্ত ব্যথিত এবং উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। উক্ত নৃশংস সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং আটক বদরুল আলমের সঙ্গে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমানে কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। বর্তমানে সন্ত্রাসী বদরুল আলম শিক্ষক হিসেবে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার আলহাজ আয়াজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। ছাত্রলীগ গণতন্ত্র মোতাবেক শুধুমাত্র নিয়মিত ছাত্ররাই সংগঠনের সদস্য হিসেবে সক্রিয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে, কোনো চাকরিজীবী না। সাংগঠনিক নিয়মেই কর্মক্ষেত্রে যোগদানের সঙ্গে সঙ্গেই তার সদস্যপদ বাতিল বলে গণ্য হয়। সিলেট এমসি কলেজে সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকা- একান্তই বদরুল আলমের ব্যক্তিগত নৃশংসতা। তার ব্যক্তিগত অপকর্মের দায়ভার কোনোভাবেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিতে পারে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবারো বিতর্কিত ছাত্রলীগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ