Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কমলেও বিষয়টি স্বস্তির নয় : স্বাস্থ্য অধিদফতর

করোনা সংক্রমণ-মৃত্যুহার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমলেও বিষয়টি এখনো স্বস্তির নয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ কথা জানান অধিদফতরের মুখপাত্র প্রফেসর ডা. মো. রোবেদ আমিন।

এদিকে জানা গেছে, টিকার এসএমএস না পেয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ অপেক্ষা-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। নিবন্ধনের পরও টিকা না পাওয়া মানুষ এখন ২ কোটি ৩২ লাখের বেশি। অথচ দিনে প্রথম ডোজ দেয়া হচ্ছে গড়পড়তা দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষকে। এ অবস্থায় অপেক্ষমানদের টিকার প্রথম ডোজ পেতে সময় লাগবে তিন মাসেরও বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রাজধানীর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের। হাসপাতালটিতে নিবন্ধন করে টিকার অপেক্ষায় রয়েছেন ১ লাখ ৪২ হাজার মানুষ। এ তালিকায় জুলাই মাসের ৮ ও ৯ তারিখে নিবন্ধনকৃতরাও রয়েছেন। আর টিকার জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ১ লাখের মতো মানুষ অপেক্ষায় রয়েছেন ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে।

তবে টিকার সংকট হবে না দাবি করে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, চেষ্টা চলছে টিকাদান কার্যক্রমের সক্ষমতা বাড়ানোর। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ মুখপাত্র বলেন, অনেকগুলো সংখ্যাতত্ত¡ দেখিয়েছি কিন্তু আমাদের সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বস্তির নয়। কোভিড-১৯ এর স্টেবল ট্রান্সমিশন যদি বলা হয় তাহলে পাঁচ শতাংশের নিচে নিয়ে আসতে হবে। এখনো আমাদের সংক্রমণের হার ১৩ শতাংশের বেশি। এটা পাঁচ শতাংশে চলে আসার পরও যে একটি দেশ কোভিড-১৯ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে তা বলা যাবে না। একটা সময় আসতে হবে যখন আমরা বলতে পারবো ২৪ ঘণ্টায় কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। কোনো মৃত্যু হয়নি। এ অবস্থা যদি আমরা দুই থেকে তিন সপ্তাহ টানা রাখতে পারি তখন আমরা বলতে পারবো কোভিড-১৯ সম্পূর্ণ রূপে নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।

সংক্রমণ আবারও বাড়তে পারে কি না সাংকবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বলা খুব কঠিন, কারণ যে ইনফেকশান হচ্ছে এটি আনপ্রেডিকটেবল একটি ভাইরাস। এটার অনেক ধরনের ভ্যারিয়েন্ট আছে। বাংলাদেশ কিন্তু ইতোমধ্যে সবগুলো ভ্যারিয়েন্ট দেখেছে। আলফা, বেটা, গামা, ডেলটা। এসব ভ্যারিয়েন্টের প্রাকৃতিক একটি বৈশিষ্ট্য হলো এ ধরনের ভ্যারিয়েন্টগুলো দীর্ঘ সময় থাকে না, দুর্বল হয়ে পড়ে। যে কারণে বর্তমান সময়ে আলফা, বেটা, গামা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।

ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের যে বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা গেছে বিভিন্ন দেশে, দুই থেকে তিন মাস ঝড়ের মতো প্রভাব থাকে এরপর ধীরে ধীরে এই ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট কমে যায়। হয়তো বাংলাদেশও সেই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেটাও বলতে পারছি না নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে আসবে কি না। সম্ভাবনা সব সময় থাকবে। আমরা যদি স্বাস্থ্য বিধিগুলো মেনে চলি, তাহলে যে কোনো ভ্যারিয়েন্ট আসুক না কেন সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম থাকবে বলে জানান তিনি। টিকা নিয়ে তিনি বলেন, বিশেষত সিনিয়র সিটিজেন যারা আছেন আমাদের দাদা-দাদি, নানা-নানিদের টিকা দেওয়ার জন্য নিবন্ধনের ব্যবস্থা যেন আমরা নিজেদের উদ্যোগে করি। টিকা প্রাপ্তির কারণে সবাইকে টিকা দিতে আমাদের অনেক সময় লেগে যাবে। আমাদের দেশে উৎপাদন হচ্ছে বা আমরা যদি অনেক টিকার ব্যবস্থা করতে পারতাম তাহলে অনেক বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া যেত।

যেসব বিষয় নিয়ে সাবধান থাকতে হবে:
আমাদের দেশে হাইপার টেনশন, ডায়াবেটিস বড় সমস্যা। আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ে যে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে সেখানে এ ধরনের রোগীদের তালিকাভুক্ত করা হয়। পরামর্শ দেওয়া হয় স্বাস্থ্য সম্পর্কে। সেটা জানতে হবে ও গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার বিনামূল্যে এসব রোগীদের ওষুধ দেয়। সংক্রামক রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে চর্বিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত লবণ, মিষ্টি ও শর্করা জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। তামাক ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।

দেশে এখন পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৪ কোটি ১৩ লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে এক ডোজ পেয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৮১ লাখ। অর্থাৎ নিবন্ধনের পর টিকার অপেক্ষায় এখন ২ কোটি ৩২ লাখ মানুষ। অথচ দিনে প্রথম ডোজ দেয়া হচ্ছে দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষকে। এ হারে টিকা দেওয়া হলে বর্তমানে নিবন্ধিত ব্যক্তিদের প্রথম ডোজ নিশ্চিতেই সময় লেগে যাবে ৩ মাসের বেশি।

অন্যদিকে, দেশে বর্তমানে টিকার মজুদ ৬৬ লাখের মতো। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, সরবরাহ অব্যাহত থাকায় টিকার কোনো সংকট হবে না। তবে কেন্দ্রের সক্ষমতার চেয়ে বেশি নিবন্ধনের কারণে জট তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে টিকাদান কার্যক্রমের পরিসর বাড়ানোর ভাবনা অধিদফতরের।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র প্রফেসর ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সক্ষমতা আছে টিকা দেয়ার এবং সেই সক্ষমতা অনুযায়ী তারা এসএমএস পাঠায়। ঠিকাদানকারী কেন্দ্র যেগুলো আছে তার থেকে আরো কিভাবে বাড়ানো যায় সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। মহামারি থেকে সুরক্ষায় দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য ঠিক করেছেন নীতিনির্ধারকরা। এর মধ্যে চলতি বছরেই ৭ কোটি মানুষকে টিকা দিতে চায় সরকার।##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ