Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আপাতত বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকবে মালিকা-লিনা

জাপানি জননীর আইনি লড়াই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

আলোচিত শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা বাবা-মায়ের সঙ্গে একই বাসায় থাকবে। আপাতত তারা দুই সপ্তাহ একই পরিবার হিসেবে গুলশানের একটি বাসায় থাকবে। ১৫ দিন পর এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এম.ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। জাপানি মা নাকানো এরিকো এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক বাবা শরীফ ইমরানের সন্তান তারা। জাপানি মা তাদের জিম্মা দাবি করে ছুটে এসেছেন জাপান থেকে। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া বাবা চাইছেন তার নিজ জিম্মায় যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যেতে। এ নিয়ে জাপানি মা ও মার্কিন বাবার চলছে আইনি লড়াই। এ লড়াইয়ের বিষয় হচ্ছে দুই কন্যা শিশু। মা নাকানো এরিকোর পক্ষ থেকে করা হেবিয়াস কর্পাস পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই শিশুকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। ঘটনার সর্বশেষ পর্যায়ে বাবা-মাসহ গুলশানের একটি বাসায় দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনার বসবাসের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এখানে তারা আপাতত ১৫ দিন থাকবে। সমাজসেবা অধিদফতরের ঢাকার ডেপুটি ডিরেক্টর বিষয়টি তত্ত্বাবধান করবেন। দুই শিশু ও তাদের বাবা-মায়ের মতামত নেয়ার পর আদালত এ আদেশ দেন। গুলশানের বাসায় বসবাসকালে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশকে বলা হয়েছে।

এর আগে গতকাল দুপুরে জাপানি জননীর দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা বাবার কাছে নাকি মায়ের কাছে থাকতে চান- এ বিষয়ে শিশুদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন হাইকোর্ট। বিচারপতিদের খাস কামরায় অন্তত ৩০ মিনিট শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন আদালত।
এর আগে মালিকা ও লিনাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস ( এক ধরনের রিট) করেন জাপানি চিকিৎসক মা নাকানো এরিকো। রিটে মেয়েদের নিজের জিম্মায় নেয়ার নির্দেশনা চান ওই নারী।

ওই দিন জাপানি দুই শিশু এবং তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। সঙ্গে তাদের বাবা ও ফুফুকে নিয়ে আসতে বলা হয়। রাজধানীর গুলশান ও আদাবর থানার ওসিকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। কিন্তু এর মধ্যেই ২২ আগস্ট ১০ ও ১১ বছর বয়সী মেয়ে দু’টিকে হেফাজতে নেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ বিষয়টি ২৩ আগস্ট সকালে হাইকোর্টের নজরে আনেন তাদের বাবার আইনজীবী ফওজিয়া করিম ফিরোজ।
আদালত দুই শিশুকে গতকাল পর্যন্ত জেগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দেন। এ সময়ে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জাপানি মা ও বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশি বাবা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন-মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়। সেই সঙ্গে আদালত ওইদিন উভয়পক্ষের আইনজীবীদের ৩১ আগস্টের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করতে ভ‚মিকা রাখতে বলেছিলেন। তবে গত ৩০ আগস্ট রাত পর্যন্ত আইনজীবীদের উপস্থিতিতে কয়েক দফা বৈঠক করেও দুই পক্ষ কোনো সমঝোতায় আসতে পারেনি।
২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করে টোকিওতে বসবাস করছিলেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ।

২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান-এরিকোর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। এরপর গত ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলংকা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।

বাংলাদেশে এসে এরিকো করোনা পরীক্ষা করালে তার রিপোর্ট নেগেটিভ থাকার পরেও ইমরান ওই রিপোর্ট অবিশ্বাস করে সন্তানদের সঙ্গে তাকে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। গত ২৭ জুলাই এরিকোর মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়। এ অবস্থায় দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি ডাক্তার নাকানো এরিকো।



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৩৬ এএম says : 0
    এই মেয়ে গুলির মুখের দিকে তাকিয়ে মা বাবা সব কিছু ভুলে যেতে পারে,কি এমন সুখি হবে এদের অত্যাচার করে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১১:১৬ এএম says : 0
    আমরা আমাদের দেশী ভাইকে আবেদন করিলাম,আপনি আমাদের ভাই আপনার মেয়েরা আমাদের সন্তান বাংলাদেশের সন্তান, আপনার সাথে ভাবি যে কোনো অন্যায় করেছে অথবা আপনি করেছেন,আমরা মনে করি ঘর সংসার পারিবারিক সমস্যা সব পরিবারের থাকে,তাই বলে এই ভাবে তিনটি মেয়েকে বাদ দিয়ে আপনারা দুইজন কি করে সুখি হবেন,এদের মুখের দিকে তাকিয়ে সব ভুলে যান আল্লাহ সর্ব শক্তি মান।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাপানি জননীর আইনি লড়াই
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ