Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আমাদের পায়ে পায়ে শত্রু : শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি উদ্দেশে বলেছেন, আমাদের পায়ে পায়ে শত্রু আছে, পদে পদে বাধা আছে। আমাদের চলার পথ মসৃণ না, কণ্টাকাকীর্ণ। আমাদের চরাই-উৎরাই পার হয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারি বিদেশি শক্তির মদদে স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্ত এখনও অব্যাহত আছে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে জাতিকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন।

গতকাল জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে যুক্ত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

সভার শুরুতে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের নিহত শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রকাশনা পত্রিকা ‘মাতৃভূমি এবং জয় বাংলা’ ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধস্ত একটি দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছিল তার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এবিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যদিও দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বিজয় অর্জনের পর স্বাধীনতার পর সেই ১৯৭২ সাল থেকেই কিন্তু চক্রান্ত শুরু। সেই চক্রান্ত মোকাবেলা করেই বাংলাদেশকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এখনও যুদ্ধাপরাধী, পরাজিত শক্তি এবং ১৫ আগস্টের খুনী, ফাঁসি যাদের হয়েছে তাদের বংশধররা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। যে আন্তর্জাতিক শক্তি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছিল তাদের কিছু কিছু এদের মদদ দিয়ে থাকে। কাজেই এ ব্যাপারে জাতিকে সতর্ক থাকতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, এই বাংলাদেশে ১৫ আগস্টের যে হত্যাকান্ড ঘটে গেছে এবং এরপর ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, আমার জীবনের ওপর বহুবার হামলা, ’৭৪ সালে কামালের (শেখ কামাল) ওপর হামলা হলো। তাকেও গুলি করে হত্যার চেষ্টা হলো যখন দেখলো সে বেঁচে গেছে। তার নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হলো। অর্থাৎ পরাজিত শক্তি সবসময়ই এক্ষেত্রে সক্রিয় ছিল।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রদের ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জন সেই মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন বা যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সবসময় ছাত্ররাই করেছে। তারাই সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে।

জাতির পিতার অমোঘ বাণী ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস’ উল্লেখ করে তিনি তা সকলকে মনে রাখার আহবান জানিয়ে বলেন, এ ধরনের বাধাবিঘ্ন আসতেই থাকবে। কিন্তু সৎ পথে থাকলে এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং আদর্শ নিয়ে যদি চলা যায় তাহলে যে কোন কঠিন পথ পাড়ি দিয়েও অবশ্যই সাফল্য অর্জন করা যায়। তবে, এটাও ঠিক সত্যের পথ সবসময় কঠিন হয়। আর সেই কঠিন পথকে যারা ভালবেসে গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে পারে তারাই সাফল্য আনতে পারে।

তিনি বলেন, জাতির পিতার নামটা মুছে ফেলতে চাইলেও আজকে ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। তেমনি বঙ্গবন্ধুর নামও সারাবিশ^ জানে। আর কারো পক্ষে এটা মুছে ফেলা সম্ভব না। সেটা সম্ভব হয়েছে কারণ, আমরা তার (জাতির পিতার) আদর্শ নিয়ে চলেছি, লক্ষ্য স্থির করে চলেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক থাকে সবসময় ক্ষমতাসীনদের পদলেহনকারি। এই চাটুকারের দল সব সময় নিজের দেশের এবং নিজের মানুষের ভাগ্য নিয়েও ছিনিমিনি খেলেছে। সব সময় আঁতাত করে আমাদের দেশের সর্বনাশ করেছে। যে জন্যই ’৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যখন গণহত্যা শুরু করে তখন স্থানীয় দালাল চক্র এবং পাকিস্তানী বাহিনীর দোসররা কোনদিন চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক। আর তারপর যখন বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করলো এবং পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পরাজিত হলো তখন সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই তারা ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড করেছিল।

আর এর পরেই বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামটা চিরতরে মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়েছিল। একটা মাত্র টিভি চ্যানেল এবং রেডিওতে এবং স্কুল কলেজের পাঠ্য বইয়ে বিকৃত ইতিহাস প্রচার শুরু হলো। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং চেতনাসহ সবকিছু ধ্বংস করা হয়েছিল। ভাবখানা এমন যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি আবার পাকিস্তানের একটি প্রদেশে পরিণত হয়েছিল এবং সেইসব পাকিস্তানীরা আবার আমাদের ওপর এসে খবরদারি করবে-এটাই যেন আকাক্সক্ষা ছিল, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা জাতির পিতাকে হত্যার নেপথ্য ক্রীড়ানকসহ এদেশে হত্যা ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির গোড়াপত্তনকারি হিসেবে সেনাশাসক জিয়াউর রহমানকে পুণরায় অভিযুক্ত করে বলেন, ’৭৫ এর পর যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে হত্যা, কু, ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেখানে তার দলেরও যেমন বেইমান, মোনাফেক, মীরজাফর ছিল-খন্দকার মোস্তাক গং আর তাদের শক্তিটা ছিল জিয়াউর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার করার কথা উল্লেখ করে বলেন, খালেদ মোশাররফ আহত হয়ে গেল এবং জিয়াকে সেক্টর কমান্ডার করা হয়েছিল। কিন্তু সে কখনো পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি চালিয়েছে এরকম কিন্তু কোন নজির নাই। এরকম কোন নজির কেউ দেখাতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনী ফারুক-রশিদের দম্ভভরে বিবিসিতে প্রদত্ত স্বেচ্ছায় ইন্টারভিউ প্রদানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কর্নেল ফারুক-রশিদ বিবিসিতে যে ইন্টারভিউ দিয়েছিল সে ইন্টারভিউতেও তারা স্বীকার করেছে, শুধু তাই নয় অনেক পত্র-প্রত্রিকাতেও তাদের বক্তব্য এসেছে-জিয়াউর রহমান এই খুনীদের সাথে সবসময় ছিল। এই জিয়াউর রহমানই ছিল মূল শক্তির উৎস এবং সেই বেইমানিটা করেছিল। অথচ এই জিয়াকে মেজর থেকে জাতির পিতাই মেজর জেনারেল করেছিলেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, মেধাবী ছাত্রদের অস্ত্র, মাদক ও অর্থ তুলে দিয়ে বিপথে নিয়ে গেছে জিয়াউর রহমান। তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে হুমকি দিয়েছিল, আওয়ামী লীগকে মোকবিলা করতে তার ছাত্রদলই যথেষ্ট। তিনিও ছাত্রদলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, আমার দেখা নয়া চীন ও গোয়েন্দা ডায়েরী ৭ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছেছ। সেখান থেকেই বাংলাদেশের ইতিহাস এবং অনেক সত্য বেরিয়ে আসে।

সরকার প্রধান বলেন, ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টালিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন, বাংলাদেশ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ সিরিজের বইগুলো সম্ভবত পৃথিবীতে প্রথম প্রকাশিত এমন একটি গ্রন্থ যা কারো বিরুদ্ধে করা গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে, জাতির পিতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানী গোয়েন্দাদের রিপোর্ট নিয়ে প্রকাশিত। ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে তিনি বইগুলো পড়ার আহ্বান জানান।

মায়ের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মা ছাত্রলীগ সংগঠনকে গড়ে তোলায় দিকনির্দেশনা দিতেন। আর্থিক সংকট দেখা দিলে নিজের হাতের গয়না বিক্রি করে টাকা জোগাড় করে দিয়েছেন। সব সময় আমাদের পরিবারের উপর গোয়েন্দা নজরদারি ছিল। আমার মা এত সু²ভাবে কাজগুলো করতেন, গোয়েন্দারা টেরই পায়নি।

ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আব্দুর রহমান। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন- ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক।



 

Show all comments
  • Gazi Sarowar Hossain Babu ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৪৩ এএম says : 2
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাস্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জন্য দোয়া ও শুভ কামনা রইল।
    Total Reply(0) Reply
  • চান্দু ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৪৪ এএম says : 4
    ভালো মানুষের শত্রু বেশি থাকে
    Total Reply(1) Reply
    • ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩৮ এএম says : 0

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেখ হাসিনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ