Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খোদায়ী আজাবের জীবন্ত নিদর্শন-১

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

সম্প্রতি প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা যায়, ভারতে সাপের কামড়ে ৫৮ হাজার লোকের মৃত্যু হয়। খবরটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারিকালে ভারতে আরেক সর্প মহামারি কি না এরূপ প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। এ জনবহুল বিশাল ভারতে বছরে ৫৮ হাজার লোক সাপের কামড়ে প্রাণ হারালে তাতে বিস্মিত হবার কিছু নেই। কেননা সারা দুনিয়াটাই সাপে ভর্তি, প্রত্যেক দেশেই সাপের কামড়ে কিছু না কিছু লোকের প্রাণহানি ঘটে, সবদেশেই এর পরিসংখ্যান রাখা হয় কি’না বলা কঠিন।

সাপ মানুষের শত্রু এটা ইসলামের ঘোষণা। সাপ ও বনি আদমের মধ্যে শত্রুতা বাবা আদমের সময় হতে। ইবলিশ শয়তান মানুষের অদৃশ্য শত্রু, সর্বদা সে মানুষকে প্রতারিত করার কাজে নিয়োজিত, কিন্তু সাপ মানুষের দৃশ্যমান, সে সুযোগমতো মানুষের প্রাণহানিও ঘটায়।
সাপের প্রকারভেদের অন্ত নেই, কোরআন ও হাদীসে কয়েক প্রকার সাপের নাম উল্লেখিত হয়েছে এবং সাপ সর্ম্পকিত বেশকিছু ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আখেরাতে সাপ মানুষের পাপাচারের আজাব হিসেবে নিদর্শন।
হাদীসে সাপ সর্ম্পকে নানা কথা ও কাহিনী প্রচলিত আছে। উদাহরণস্বরূপ : ১। হযরত কাতাদাহ (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন থেকে ওসব সাপের সাথে আমাদের শত্রæতা দেখা দিয়েছে, আমরা ওদের থেকে আত্মরক্ষা করিনি।

২। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, আমরা মিনায় রসুলুল্লাহ (সা.) এর সাথে একটি গর্তের কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। সেসময় রসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি ‘সূরা মোরসালাত’ নাজিল হয়, আমরা অতি আগ্রহসহকারে তা শ্রবণ করছিলাম। হঠাৎ একটি সাপ বের হয়। তিনি তা মেরে ফেলার নির্দেশ দিলেন। তাই আমরা তা মারার জন্য দৌড়াতে থাকি কিন্তু সাপটি আমাদের থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এতে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা তার ক্ষতিসাধন হতে বেঁচে গেলে এবং সেও তোমাদের ক্ষতিসাধন হতে বেঁচে গেল! (বোখারী, মুসলিম)।

৩। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, সাপ, বিচ্ছু , ইঁদুর, কাক আল্লাহর নাফরমান। (বায়হাকী)। ৪। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি সাপ মেরে ফেলেছে , সে যেন একজন কতলযোগ্য মোশরেককে মেরে ফেলেছে, আর যে ব্যক্তি তাকে ভয়ে ছেড়ে দেয় সে আমাদের অর্ন্তভুক্ত নয়। (মুসনাদে ইমাম আহমদ)।

৫। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি সাপকে এই ভয়ে ছেড়ে দেয় যে সে আমাদের প্রতিশোধ নেবে, তার প্রতি আল্লাহর , তাঁর ফেরেশতাদের এবং সমস্ত লোকের অভিশাপ। ৬। হজরত আবু সাঈদ খোদরী (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত কাফেরদের কবরে তাদের ওপর ৯৯টি অজগর নিয়োজিত করবেন, সেগুলো কেয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে দংশন করতে থাকবে, কামড়াতে থাকবে। এগুলোর মধ্যে এক অজগরও যদি জমিনে (দুনিয়ায়) ফুঁক দেয় তাহলে জমিনে ঘাস জন্মাবে না। (ইবনে আবি শাইবা)।

৭। তিরমিযীর একটি হাদীসে বলা হয়েছে, কোনো কাফের বা ফাসেক-ফাজেরকে কবর কিভাবে স্বাগত জানাবে সে সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: তার ওপর ৯০ বা ৯৯ অজগর নিয়োজিত করা হবে। সেগুলোর মধ্য হতে কোনো একটিও যদি জমিতে ফুঁক দেয় তাহলে দুনিয়ার স্থায়িত্ব কালের মধ্যে তাতে কিছুই জন্মিবে না (জন্মানোর উপযোগিতা থাকবে না) এবং হিসাব কিতাবের জন্য উত্থিত করা পর্যন্ত দংশন করতে থাকবে এবং মুখমন্ডলে ছোবল মারতে থাকবে।

৮। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সকল প্রকারের সাপ এবং বিশেষভাবে ‘আসওয়াদে সালেখ’ (দুষ্ট বিষাক্ত সাপ) এবং ‘আবতার’ সাপকে মেরে ফেল। এই দুই প্রকারের সাপ (নারীর) গর্ভপাত এর কারণ হয় এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়। (বোখারী, মুসলিম)।
৯। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: মদীনা মোনাওয়ারায় কিছু জ্বীন আছে, তারা ইসলাম গ্রহণ করেছে। সুতরাং তোমরা যখন গৃহে কোনো সাপ দেখ, তা মারার পূর্বে তিনদিন পর্যন্ত সর্তক করতে থাকবে। এরপর যদি সে তোমাদের সামনে আসে, তাহলে তাকে মেরে ফেল। কেননা নিশ্চিত সে শয়তান।

১০। আব্দুর রহমান আবু ইউলা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেনে : যখন ঘরে সাপ দেখা যাবে তখন উচ্চস্বরে তার উদ্দেশ্যে বলবে, তোমার নিজের ওয়াদা স্মরণ রাখা উচিত, যা তুমি নূহ (আ.) ও সুলায়মান (আ.) এর সাথে করেছিলে। এর পরেও যদি দেখা দেয় তাহলে মেরে ফেল (ওসদুল গাবা)।
১১। বোখারী ও মুসলিমের বর্ণনানুযায়ী, রসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ অবস্থায়ও ‘আসওয়াদাইন’ অর্থাৎ সাপ ও বিচ্ছু মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।

‘আফআ’ নামক আর এক প্রকারের সাপ আছে। এ সাপের বর্ণনায় একটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। যা তার মানবতাবোধের পরিচায়ক। সাপের ইতিহাসে এটি একটি ব্যতিক্রমি ঘটনা, যাকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোনো নেক আমলের ফল বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। যাতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে মানবের চিরশত্রু সাপ দ্বারাই লোকটির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।



 

Show all comments
  • Nishi Islam ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:১১ এএম says : 0
    মাদায়েনে সালেহ স্থানটির নাম আল্লাহর নবী হযরত সালেহ (আ.)- এর নাম থেকে এসেছে। পরবর্তীতে তার কথা না মানায় তার জাতি আল্লাহর আজাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে তিনি এই স্থা্ন থেকে হিযরত করে চলে যান। এরপর থেকে এটি একটি মৃত নগরীতে পরিণত হয়। এই স্থানটি এখনও একটি বড় ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন বহন করে চলছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mofazzal Hossain ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:১২ এএম says : 0
    সামুদ জাতির কাছেও অলৌকিক নিদর্শন হিসেবে উষ্ট্রী পাঠানো হয়েছিল; কিন্তু তারা তা ঘিরে পাপে জড়িয়েছিল। অলৌকিক নিদর্শন চোখ জুড়ানোর জন্য নয়। এটি প্রকাশিত হয় মানুষকে সতর্ক করার জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Naib Al Emran ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:১২ এএম says : 0
    আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে সত্য পথ প্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। নবী-রাসুলদের দায়িত্ব আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। কোনো নবী-রাসুল ইচ্ছা করলেই কাউকে হেদায়েত করতে পারতেন না। তাঁরা নিজ থেকে অলৌকিক নিদর্শনও প্রকাশ করতে পারেন না। মহান আল্লাহর হুকুমেই তাঁরা অলৌকিক নিদর্শন প্রকাশ করেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazera Zahir Chowdhury ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:১৩ এএম says : 1
    দুনিয়া হলো পরীক্ষাকেন্দ্র। আর অদৃশ্যে বিশ্বাস ইসলামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে বাধ্য করে ঈমানদার বানানো হলে পরীক্ষা অর্থহীন।
    Total Reply(0) Reply
  • গিয়াস উদ্দিন ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:০৫ এএম says : 0
    আমাদের সকলের উচিত খোদায়ী আজাব থেকে বাঁচার জন্য রাসুল (সা.)-এর দেখানো পথে চলা
    Total Reply(0) Reply
  • নাজিম ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:০৬ এএম says : 0
    তথ্যবহুল এই লেখাটির জন্য খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী হুজুরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন