Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খোদায়ী আজাবের জীবন্ত নিদর্শন-৩

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

‘হায়াতুল হায়ওয়ান’ গ্রন্থে আল্লামা দামিরী কয়েক শ্রেণির সাপের বর্ণনা দিয়েছেন এবং সেগুলোর নানা বৈশিষ্ট্য ও ওষুধি উপকারের কথাও উল্লেখ করেছেন। সাপের বিভিন্ন ক্ষতিকর ও নানা বিস্ময়কর ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন এবং অসংখ্য উপমা পেশ করেছেন। সাপ কর্তৃক মানুষের উপকারের একটি ঘটনার কথা এখানে আমরা উল্লেখ করতে চাই যা বিষাক্ত কালো সাপের সাথে জড়িত অথচ মানুষের শত্রু সাপ কোনো মানুষের উপকার করে, এরূপ দৃষ্টান্ত বিরল।

জাহান্নামীদের সাপের আজাব দেয়ার কথা আরো বহু হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কালো রঙের ‘আফআ’ সাপ এক হাজার বছর পর্যন্ত জীবিত থাকে, এটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হয় এবং মানুষকে লাফিয়ে লাফিয়ে হামলা করে। সকল শ্রেণির সাপের মধ্যে এটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর, সিজিস্তান অঞ্চলে অধিক দেখা যায়। এ সাপের একটি বিরল দৃষ্টান্তের কাহিনী এই:

শেখ আবুল হাসান সূফী বর্ণনা করেন যে, একবার ‘তবুক’ নামক স্থানে গমন করি, সেখানে একটি গ্রামে যাই। আমার পানির পিপাসা হয়। আমি পানির পিপাসা নিবরাণের জন্য একটি ক‚পের কাছে গমন করি। সেখানে হঠাৎ আমার পা পিছলে যায় এবং আমি ক‚পের ভেতর পড়ে যাই। ক‚পের ভেতর আমি যথেষ্ট প্রশস্ত জায়গা দেখি, আমি তা ঠিকঠাক করে ওখানে বসে পড়ি। এসময় হঠাৎ একটি ঝঙ্কার শব্দ শুনতে পাই, এতে আমি দারুণভাবে চিন্তিত ও শঙ্কিত হয়ে পড়ি , তখন দেখতে পাই একটি কালো রঙের সাপ আমার উপর পতিত হয়ে এদিক সেদিক চক্কর কাটছে, আমি ভীত অবস্থায় নীরবে বসে থাকলাম । এ সময় সাপটি আমাকে পেঁচিয়ে ধরে ওপরে নিয়ে আসে এবং নামিয়ে দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে।

এখন স্বর্ণ যুগের যেসব পবিত্র আত্মা নেই, যাদের চিঠি শুকনো নদীতে পড়ার সাথে সাথে প্লাবন হয়ে সয়লাবে পরিণত হতো, যারা সেনাবাহিনীসহ নিরাপদে উত্তাল নদী পার হয়ে যেতেন এবং যাদের দোয়ায় গহীন বন-জঙ্গলের হিংস্র জন্তু স্থান ত্যাগ করে চলে যেতো, তেমনি একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য।

উকবা ইবনে আমের ইবনে নাফে হুজুর (সা.) এর যুগে জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) এর খালাতো ভাই ছিলেন এবং ‘মোস্তাজাবুদ দাওয়া’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করতেন। আফ্রিকা জয় করার পর তিনি ‘কায়রোয়ান’ নামক এক গহীন জঙ্গলে গমন করেন। যা সাপের জন্য বিখ্যাত ছিল। তিনি সেখানে উচ্চ স্বরে ঘোষণা করেন: ‘হে উপত্যকার বাসিন্দাগণ! এখন আমরা এ এলাকায় অবস্থান করব। তাই এই এলাকাটি খালি করে দাও।’

এ ঘোষণার পরপরই এক বিস্ময়কর দৃশ্যের অবতারণা হয়। প্রত্যেক পাথর ও গাছের গোড়া হতে সাপ বের হতে থাকে এবং উপত্যকা ছেড়ে অন্যান্য এলাকায় চলে যেতে থাকে। অল্পক্ষণের মধ্যেই সমগ্র এলাকা সাপমুক্ত হয়ে যায়। তখন উকবা তার সঙ্গীদের বললেন ‘বিসমিল্লাহ’, এবার অবস্থান কর। সাপ অতি ভয়ঙ্কর ও আতঙ্ক সৃষ্টিকারী বিষাক্ত প্রাণী। এর কামড়ে মানুষ প্রাণও হারায়। ধর্মীয় বিশ্বাস মতে মানুষের মৃত্যুর পর কবর জীবনে পাপীতাপীদের আজাব-শাস্তির জন্য সাপ নিয়োজিত। জাহান্নামীদের আজাব হিসেবে সাপ অজগর অন্যতম একটি, বহু হাদীসে তার বিবরণ রয়েছে।

নানা প্রকারের সাপ আল্লাহর জমিনে বিচরণ করছে, সব রকমের সাপের কথা মানুষ জানে না। বর্তমানে ইন্টারনেট জগতে বিভিন্ন চ্যানেলে বিশাল বিশাল সাপ দেখানো হয়। আল্লামা কামাল উদ্দীন দামিরী (রা.) তার বিখ্যাত গ্রন্থে ইবনে খালুবিয়ার বরাতে আরবি ভাষায় সাপের একশ নাম আছে বলে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি কুড়ি প্রকারের সাপের আরবি নাম লিখেছেন কাবুল আহবার এর বরাতে। তিনি বলেন: আল্লাহ তা’আলা সাপকে ইস্পাহানে, ইবলিশকে জেদ্দায়, হাওয়াকে আরাফাতে এবং আদমকে সরনদ্বীপ (শ্রীলংকা) এর পর্বতে অবতীর্ণ করেন। সোহেলী ও মাসউদী বরাতে তিনি আরো লিখেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীতে সাপকে সর্বপ্রথম সিজিস্তানে অবতীর্ণ করেন। এ কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় সেখানে এখনো সাপের আধিক্য পরিলক্ষিত হয় বলে ইতিহাসবিদগণ লিখেছেন।

কোরআনে বলা হয়েছে: ‘তোমরা জমিনে অবতরণ করো এ অবস্থায় যে, তোমরা একে অপরের শত্রু।’ আয়াতে আদম, হাওয়া, ইবলিশ ও সাপকে সম্বোধন করা হয়েছে বলে উলামার সর্বসম্মত মত। জাহেজ এর মতে, বিষক্রিয়ার দিক থেকে সাপ তিন প্রকারের। এক প্রকারের সাপ হচ্ছে যার দংশনের ফলে ওষুধ কোনো কাজ করে না। এ শ্রেণির সাপের নাম ‘সূ’বান’ ও ‘আফআ’। যা ভারত বর্ষে দেখা যায়। দ্বিতীয় প্রকারের সাপের দংশন করলে তার ওষুধ আছে, তার চিকিৎসা হয়। এই দুই প্রকারের সাপের দংশনে মানুষ ভয়াতঙ্কে মৃত্যুবরণ করে। আরো নানা প্রকারের সাপ রয়েছে। বিষাক্ত দুই প্রকারের সাপ মেরে ফেলার নির্দেশ হাদীসে রয়েছে। (হায়াতুল হায়ওয়ান অবলম্বনে)।



 

Show all comments
  • হাফেজ মোহাম্মাদ ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:৩৭ এএম says : 0
    জাযাকাল্লাহু খায়রান
    Total Reply(0) Reply
  • মুক্তিকামী জনতা ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩২ এএম says : 0
    নমরুদকে আল্লাহ তাআলা তখনই শাস্তি দিয়েছেন, যখন সে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করেছে। অনুরূপভাবে আদ, সামুদ প্রভৃতি জাতিকে তাদের সীমাহীন পাপাচারের কারণে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩৩ এএম says : 0
    সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধা দেওয়া ফরজ। মুমিন এ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে না।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ফজলুল করিম ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩৩ এএম says : 0
    পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুসারে আল্লাহর নির্দেশিত পথ অনুসরণ না করায় কয়েকটি জাতি রাতারাতি ধুলায় মিশে গেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩৩ এএম says : 0
    দুনিয়া হলো পরীক্ষাকেন্দ্র। আর অদৃশ্যে বিশ্বাস ইসলামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে বাধ্য করে ঈমানদার বানানো হলে পরীক্ষা অর্থহীন।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী এম.এস. ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩৪ এএম says : 0
    আমাদের সকলের উচিত খোদায়ী আজাব থেকে বাঁচার জন্য রাসুল (সা.)-এর দেখানো পথে চলা
    Total Reply(0) Reply
  • সোয়েব আহমেদ ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩৪ এএম says : 0
    তথ্যবহুল এই লেখাটির জন্য খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী হুজুরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • MD. REZAUL KARIM SHAPON ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১০:০৪ এএম says : 0
    প্রত্যেক মানুষের উচিত মৃত্যুকে ভয় করা, পরকালকে ভয় করা, মহান আল্লাহর হুকুম মেনে চলা, ইহকাল পরকাল সকল আযাব থেকে বাঁচতে হলে 05 ওয়াক্ত নামজ পড়তে হবে,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন