Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যশোরের ৩ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী উচ্ছ্বসিত নতুন যাত্রা- চকলেট, ফুল ও মাস্ক দিয়ে বরণ

যশোর ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:৫৪ পিএম

দীর্ঘদিন পরে খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে যশোরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎসাহ, কেটেছে হতাশা। সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে শুরু করেছে। আর স্কুলে ঢুকতেই ফুল ও চকলেট দিয়ে বরণ করছেন শিক্ষকরা। দীর্ঘদিন পর নতুন সাজে সেজেছে ক্যাম্পাস। এসব দেখে বিমোহিত শিক্ষার্থীরা। আর দীর্ঘদিনপর আবারো পাঠদান করতে পেরে খুশি শিক্ষকরাও। তবে বাচ্চারা স্বাস্থ্যবিধি মানবে কিনা এ নিয়ে অভিভাবকদের ভেতর রয়েছে শঙ্কা। কেউ কেউ আবার স্কুলের ক্লাস টাইম বাড়ানোরও দাবিও জানিয়েছেন।
যশোরের জেলা প্রশাসক বলছেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ একেবারেই কম বিধায় কোন সমস্যা হবে না।
জানাগেছে, যশোরের আট উপজেলায় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ১ হাজার ৯শ’টি। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষাধিক। দীর্ঘদিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় উপস্থিত হয়েছে এসব শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিতে সরকার যে ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে, তা শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিস। এর আগে সপ্তাহখানিক ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো করা হয়েছে ধোয়া-মোছার কাজ। দূরত্ব বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় বেঞ্চ সংযোজন করা হয়েছে। প্রবেশ গেটে ‘নো মাস্ক, নো স্কুল’ সহ বিভিন্ন সচেতনতা ও নির্দেশনামূলক লেখা টানানো হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জটলা ভিড় এড়াতে নির্দিষ্ট দূরত্বে বৃত্ত অঙ্কন করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, দীর্ঘদিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির দিনটা স্মরণীয় করতে শিক্ষার্থীদের স্কুলে বরণ করেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শিক্ষার্থীদের আগমনকে সুন্দর করতে ফুল-কলম বা রংবে রংয়ের বেলুন দিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্কুলে আগত শিক্ষার্থীদের করতালি দিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছে।
যশোর ফুলবাড়ি ছিদ্দিন আওলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সীমু জানান, স্কুলের ঢোকার সাথে সাথে আমার তাপমাত্রা মেপে, চকলেট ও ফুল দিয়ে, যদের মাস্ক নেয় তাদের মাস্ক দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষকরা। স্কুলকে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে। স্কুলে আসতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। আশা করি এভাবে আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সবাই অগের মতো স্কুলে হৈ চৈ করে বেড়াতে পারবো। নবম শ্রেণীর ছাত্র অমিত হাসান জানান, দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলায় আমি খুব ভালো লাগছে। আনেক বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছে। শিক্ষকদের সাথে দেখা হয়েছে। সরাসরি দীর্ঘদিন পর ক্লাস করে খুব ভালো লাগছে। নতুন খয়েরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী কেয়া সাহা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে এসে খুব খুশি। এমনি আমাদের স্কুলের পরিবেশ খুব সুন্দর। তার পরে দীর্ঘদিন পর স্কুলে এসে দেখি, পুরো ক্যাম্পাস সাজ সাজ রব। আমাদের বরণ করার জন্য ফুল-চকলেট দিয়েছে।
যশোর জেলা স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শরিফুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন পর সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে এক দিকে যেমন আনন্দিত; অন্যদিকে দুচিন্তাও রয়েছি। হাজার হলেও বাচ্ছা তো! বাসা থেকে মাস্ক পরিয়ে বার বার বলে দেওয়া হয়ে মাস্ক যাতে না খোলে। কিন্তু কতক্ষণ মাস্ক পরে থাকবে সেটা নিয়ে চিন্তিত। মাস্ক খুলে ফেলতে পারে। তাছাড়া স্কুলের ঠিকমত স্বাস্থ্যবিধি মানবে কিনা সেটা নিয়েও রয়েছি উদ্বিগ্ন। সবচেয়ে ভালো লাগছে, এতো দিন আমার ছেলে সকাল ১০ টা ১১ পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকতো। স্কুলের যাওয়ার আনন্দে আজ সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠেছে। সবমিলিয়ে আবারও আমার সন্তান যে স্কুলে লেখাপড়ায় ফিরতে পেরেছে, এতে আমি খুব খুশি। যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আহসান হাবিব পারভেজ বলেন, আমাদের ঈদের চেয়ে খুশি খুশি লাগছে। পুরা স্কুলটা নতুন মনে হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর স্বশরীরে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিবো। খুশিতে ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠেছি। এর একটাই কারণ কত দ্রুত এইসব শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা হবে। কখন শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিবো।
এই বিষয়ে জানতে যশোর নতুন খয়েরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিক জনাব ইরফান আলী জানান, স্কুলের ভেতরের জঙ্গল কেটে এবং স্কুল ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীরাও স্কুলে আসার পরে ক্যাম্পাস মুখর হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলমুখী হওয়ায় তাদের জন্য আমরা অর্ভথ্যনার জানিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সকল শিক্ষককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যশোর জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেন বলেন, স্কুল খোলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন সাজে সাজান হয়েছে। আগের মতো স্কুলে শিক্ষার্থীদের হৈ চৈ মেতে উঠেছে। দৃশ্যটি দেখে ভালো লাগছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফিরে পেয়েছে তার প্রাণ।
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, দীর্ঘদিন পরে স্কুল কলেজ খুলেছে। সরকারের যে নির্দেশনা রয়েছে, সেটা মেনেই যশোরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ একেবারেই কম বিধায় কোন সমস্যা হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেরা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ