Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফরজ গোসলের পদ্ধতি ও সতর্কতা

উসমান বিন আব্দুল আলিম | প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

মানুষ আল্লাহর সেরা সৃষ্টি।মানুষের জন্য আল্লাহর বিধান মানা অত্যাবশ্যক বা জরুরী। আল্লাহ তায়া’লা মানুষের জীবন পরিচালনা করার জন্য নিয়ম-নীতি তৈরি করে রেখেছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে।

একজন মুসলমান কী খাবে, কী পরবে। কীভাবে তার প্রাত্যহিক জীবনে চলাফেরা করবে তার পুরো নির্দেশনাবলী আল্লাহ তায়া’লা প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে সমুদয় মানুষের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে প্রিয় নবী (সা.)এর মাধ্যমে একেবারে সহজ সরল ভাবে সঠিক পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। যা হুকুম ভেদে আমাদের ওপর ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত হয়ে থাকে।

আল্লাহ তায়া’লা মানুষদেরকে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেত্র বিশেষ আদেশ দিয়েছেন। তন্মধ্যে আল্লাহর একটি আদেশ হচ্ছে; তোমরা সবসময়ই পবিত্র অবস্থায় থাকবে। যদি কোন কারণে অপবিত্র হয়ে যাও, তাহলে তৎক্ষণাৎ তোমরা পবিত্র হয়ে নেবে।

যেমন আল্লাহ তায়া'লা কোরআন শরীফে বলেন; ‘তোমরা যদি অপবিত্র অবস্থায় থাক, তবে নিজেদের শরীর (গোসলের মাধ্যমে) ভালোভাবে পবিত্র করে নাও।’ (সুরা মায়েদা : ৬)

এ-জন্য আমাদেরকে নিরন্তর পবিত্র থাকার চেষ্টা করতে হবে। আর এই অপবিত্র থেকে পবিত্র হওয়ার একটি উত্তম মাধ্যম হচ্ছে অপবিত্র জায়গা পরিষ্কার রাখা। পরিষ্কারের অন্যতম উপায় হলো গোসল, ওজু অথবা শুধুমাত্র জায়গাটা পরিষ্কার করে নেয়া।

আর গোসলের মাধ্যমে পবিত্র হবারও বিভিন্ন ধরণ ফিকাহ এবং হাদিসের কিতাবে বর্ণিত আছে। যেমন : ফরজ, সুন্নাত ও মুস্তাহাব গোসল। এই পার্থক্য ক্ষেত্র বিশেষ হয়ে থাকে। যেমন; সহবাসের পর (সূরা মায়েদা-৬), স্বপ্নদোষ হবার পর, মহিলাদের রক্তস্রাবের পর (বোখারী -৩০৯), সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর(কানযুল উম্মাল-৯/১১০৯) ইত্যাদি কারণে গোসল ফরজ হয়ে থাকে। একটি মাস›আলা মনে রাখা উচিৎ সেটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া জীবিতদের ওপর ফরজ। (বুখারি, হাদিস : ১১৭৫)

আবার কখনো গোসল আমাদের ওপর সুন্নাতও হয়ে থাকে। যেমন ; জুমার দিনে নামাজের পূর্বে (তিরমিজি -৪৮৬), দুই ঈদে নামাজের আগে (ইবনে মাজাহ-১৩০৬)এমন কী ইহরাম পরিধানের জন্য (তিরমিজি-৭৬০), ইত্যাদি

কখনো বা গোসল মুস্তাহাব হয়ে থাকে। যেমন ; কদরের রাতে(বোখারী-৩৪), সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের আগে(তিরমিজি-২৭২৩), শিঙা লাগানোর পর। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৯৪) মাতাল বা বেহুঁশ ব্যক্তির স্বাভাবিক জ্ঞান ফেরার পর (বুখারি, হাদিস : ৬৪৬), ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার সময়, যদি সে পাক থাকে তবু গোসল করা মুস্তাহাব। কিন্তু সে যদি নাপাক থাকে, তবে তো গোসল করা ফরজ, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দানকারীর জন্য (আবু দাঊদ -২৭৪৯)ইত্যাদি

পৃথীবির যেকোন কাজের একটা পদ্ধতি বা রুটিন আছে। পদ্ধতি ছাড়া কাজ হয় না। এমনিভাবে ফরজ গোসলেরও কিছু শর্ত বা নিয়ম আছে।কিন্তু অজ্ঞতার কারণে আমরা পবিত্রতা অর্জন করতে পারি না। আমরা ঠিকই বর্ণিত কারণ গুলোর পর ফরজ গোসল করে থাকি, কিন্তু গোসলের নিয়ম না জানার কারণে বা ফরজ গোসলে কী কী কাজ করতে হয় তা অজ্ঞতার ফলে আমাদের গোসল হয় না। আমরা পবিত্র হতে পারি না, অপবিত্র থেকে যাই। তাই আমাদের নামাজ-ও হয় না, কেননা আপনি তো অপবিত্র হওয়ার পর পবিত্র-ই হননি!

এইযে আমরা আমল করলাম, নামাজ পড়লাম, এগুলো আমাদের কিছুই কবুল হচ্ছে না। সাওয়াব হচ্ছে না বরং উল্টো গুনাহ হচ্ছে। কারণ, আমরা পবিত্রতাই অর্জন করতে পারিনি।অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সামনে হাজির হচ্ছি। যদি আমাদের ওপর গোসল ফরজ হয়, তাহলে সে সময় নিয়ম মেনে ফরজ গোসল সম্পূর্ণ করতে হবে। তখন আমাদের আমল কবুল হবে।

এরজন্য আমাদের জানতে হবে ফরজ গোসলের পদ্ধতি। কীভাবে গোসল করলে আমরা অপবিত্র থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে পারবো। আর আমাদের ফরজ গোসল সম্পূর্ণ হবে।

আমরা জানি গোসলের ফরজ তিনটি কুলি করা(বোখারী -২৫৭), নাকে পানি দেয়া(বোখারী-২৬৫), পুরো শরীরে পানি পৌঁছানো(আবু দাউদ -২১৭।

অথচ দেখা যায় যখন আমরা সহবাসের পর বা যেসবের পর গোসল ফরজ হয়, তখন আমরা গোসল করে থাকি। কিন্তু আমরা নাকেও পানি দিচ্ছি না। কুলিও করছি না। আবার বলা হয়েছে পুরো শরীরে পানি পৌঁছাতে, কিন্তু আমাদের অসতর্কতার কারণে পুরো শরীর ভেজছে না।

তাই সবাইকে বলবো; আমাদের ওপর যখন গোসল ফরজ হয়ে যায়, তখন আমরা নিন্মোক্ত পন্থা গুলো অবলম্বন করার চেষ্টা করবো। খুব গুরুত্ব সহকারে খেয়াল করবো।একটু সতর্ক থাকলেই আপনি হবেন পবিত্র। অন্যথায় এতো কষ্ট করে আমরা যেই আমল গুলো করছি একটুখানি অজ্ঞতার কারণে, অসতর্কতার ফলে জান্নাত কামানোর পরিবর্তে জাহান্নাম কামিয়ে ফেলছি। যা একজন সচেতন মুসলমান কখনোই করতে পারে না।

ফরজ গোসলের সময় যেই বিষয় গুলো খেয়াল করবেন;
সহবাস বা স্বপ্নদোষ হওয়ার পর প্রথমে প্রস্রাব করবেন। তারপর গোসলের জন্য আসলে লেগে থাকা শুকরাণুর জায়গা গুলো পরিষ্কার করে নেবেন। লজ্জাস্থান ধৌত করে নেবেন। ভালো করে গরগরা সাথে কুলি করবেন। নাকের ছিদ্রের ভেতর বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুল দ্বারা ভালো করে পানি পৌঁছাবেন। হাত ভিজিয়ে কানের ছিদ্র মুছবেন। নাভির ভেতর পরিষ্কার করে পানি দেবেন। নারীরা তাদের নাকফুল নেড়ে ভেতরে পানি পৌঁছাবেন। খেয়াল করতে হবে পুরষদের জন্য যেনো দাড়ি, চুল, গোফের গোড়া সমূহ ভালোভাবে পানিয়ে ভিজে। অথবা কারো হাতে যদি ঘড়ি বা আংটি থাকে তা নেড়ে ভেতরে পানি পৌঁছাতে হবে।

তবে নারীদের চুল বাঁধা অবস্থায় না খোলে গোড়ায় পানি পৌঁছানো সম্ভব হলে পুরো চুল ভেজানো জরুরি নয়।আর যদি আগ থেকেই খোলা থাকে, তাহলে পুরো চুল ভেজানো জরুরি।

অনেক মেয়েদের দেখা যায় তারা হাতে নেইলপালিশ, রঙ ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন তাদের জন্য উচিৎ হচ্ছে এগুলো উঠিয়ে তারপর পানি পৌঁছানো। (রদ্দুল মুহতার-১/১৪২)

লেখক :মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া বলিয়ারপুর, সাভার, ঢাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ