Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অকুস প্রতিরক্ষা চুক্তির নিন্দা, ‘পারমাণবিক যুদ্ধের লক্ষ্য’ হতে পারে বলে অস্ট্রেলিয়াকে হুশিয়ারি চীনের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:১১ পিএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তির মাধ্যমে পারমাণবিক চালিত সাবমেরিন বহর অর্জন করতে পারে অস্ট্রেলিয়া। এ কারণে তারা চীনের পরমাণু হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং।

বেইজিংয়ে কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র হিসেবে বিবেচিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের মতে, চীনা সামরিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, অস্ট্রেলিয়ার জাহাজগুলো পারমাণবিক অস্ত্রাগার দিয়ে আপগ্রেড করা হতে পারে। যদিও তারা শুধুমাত্র প্রচলিত অস্ত্র বহন করবে বলে আশ্বাস দেয়। চীনের সামরিক বিশেষজ্ঞরা অস্ট্রেলিয়ায় সম্ভাব্য হামলার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন, কারণ গ্লোবাল টাইমস দাবি করে, ওয়াশিংটন এবং লন্ডনের পক্ষে পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনকারী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে জাহাজগুলো সজ্জিত করা তুলনামূলকভাবে সহজ হবে।

রিপোর্টে একজন নাম না জানা সিনিয়র সামরিক বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, শুধুমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত রাষ্ট্রেরই পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন সাবমেরিন আছে এবং যুদ্ধের সময় তাদের পক্ষে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। সূত্র জানায়, পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের দেয়া আশ্বাস ‘অর্থহীন’ বলে মনে করে বেইজিং। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সামরিক ব্যক্তি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পক্ষে অস্ট্রেলিয়ান সাবমেরিনে পারমাণবিক অস্ত্র এবং সাবমেরিন উৎক্ষেপণ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা সহজ হবে।

আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায়, চীন সরকার বলেছে, পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন চালু করার প্রস্তাব একটি বিপজ্জনক উন্নয়ন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, এটি ‘আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, অস্ত্র প্রতিযোগিতা তীব্র করে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’ চীন বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে একটি নতুন ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তা জোটের নিন্দা জানিয়ে বলেছে যে এই ধরনের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তৃতীয় দেশগুলোকে টার্গেট করা উচিত নয়। এর ফলে এই অঞ্চলে তীব্র অস্ত্র প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হতে পারেরে তিনি সতর্ক করেন।

অস্ট্রেলিয়া, ইউকে এবং ইউএস মিলিতিভাবে অকুস (এইউকেইউএস) চুক্তি নিয়ে কাজ করছে। এই ব্যবস্থার অধীনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন মোতায়েনের প্রযুক্তি এবং ক্ষমতা প্রদান করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও প্রভাব, বিশেষ করে তার সামরিক গঠন, তাইওয়ানের উপর চাপ এবং বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে মোতায়েনের বিরুদ্ধে জবাব দেয়ার উপায় খুঁজছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন তাদের যৌথ ঘোষণায় চীনের নাম উল্লেখ করেননি। বাইডেন প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, যারা সময়ের আগে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছিলেন, বলেছিলেন যে, এই অংশীদারিত্ব বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্য নয়।

কিন্তু চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, ‘তিনটি দেশ আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অস্ত্র প্রতিযোগিতা জোরদার করছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’ বেইজিংয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘চীন সবসময় বিশ্বাস করে যে, যেকোনো আঞ্চলিক প্রক্রিয়া শান্তি ও সময়ের উন্নয়নের ধারা অনুযায়ী হওয়া উচিত এবং পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা উচিত ... কোনো তৃতীয় পক্ষকে লক্ষ্য করা বা তার স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করা উচিত নয়।’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেছিলেন যে, চুক্তিটি বৈরী হওয়ার জন্য নয় এবং এটি ব্রিটেনের পরের প্রজন্মের পারমাণবিক সাবমেরিনের খরচ কমাবে। জনসন পার্লামেন্টকে বলেন, ‘এখন যেহেতু আমরা অকুস তৈরি করেছি, আমরা সাইবার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং আন্ডারসিয়ার ক্ষমতা সহ অন্যান্য উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার আশা করি।’ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মরিসনের মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, এই অংশীদারিত্ব অস্ট্রেলিয়ার ২০১৬ সালের ফরাসি জাহাজ নির্মাতা নেভাল গ্রুপের সঙ্গে চুক্তির অবসান করে যাতে তারা দুই দশকেরও বেশি পুরনো কলিন্স সাবমেরিনকে প্রতিস্থাপন করার জন্য বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি নতুন সাবমেরিন বহর তৈরি করতে পারে।

যদিও তিন নেতা জোর দিয়েছিলেন যে অস্ট্রেলিয়া পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে না কিন্তু জাহাজগুলোর জন্য পারমাণবিক প্রপালশন সিস্টেম ব্যবহার করবে যাতে হুমকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে ফ্রান্স বাইডেনের বিরুদ্ধে ‘তাদের পিঠে ছুরিকাঘাত’ এবং তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো আচরণ করার অভিযোগ করেছে। ‘এই নৃশংস, একতরফা এবং উদ্দেশ্যমূলক সিদ্ধান্ত ট্রাম্প যা করতেন তা আমাকে মনে করিয়ে দেয়,’ লে ড্রায়ান ফ্রান্সইনফো রেডিওকে বলেন। ‘আমি রাগান্বিত এবং বিরক্ত। এটা মিত্রদের মধ্যে করা যায় না।’ সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ট্রিবিউন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ