Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভয়াবহ মানবিক সঙ্কটের দ্বারপ্রান্তে হাইতি

দুর্গতদের সহায়তায় যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড ও ফ্রান্স ত্রাণবাহী নৌবহর পাঠাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে তিনশ’ সেনাসদস্য যাচ্ছে

প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাড়ে ৩ লাখ মানুষ গৃহহীন। ২শ’টি আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা পেয়েছে মাত্র ছয় ভাগের এক ভাগ উদ্বাস্তু
ইনকিলাব ডেস্ক : হারিকেন তা-বের পরবর্তীতে দুর্যোগকবলিত হাইতিকে খাদ্য ও পরিবেশগত বিপর্যয় মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছে। ভয়াবহ মানবিক সংকট পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে খবরে বলা হয়েছে। হাইতির সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি জানিয়েছে, হারিকেন ম্যাথিউয়ের আঘাতে নিহতের সংখ্যা ৯শ’র কাছাকাছি পৌঁছেছে। এই সংখ্যা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাস্তাঘাট, সেতু ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন অবকাঠামো বিধ্বস্ত হওয়ায় আর্তদের কাছে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছনোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে।
এদিকে হাইতিতে সহায়তা পাঠানো বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার করে জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স-এর কমান্ডার ও দেশটির নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল সেড্রিক প্রিঙ্গল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নাগাদ ৩৫০ সেনাসদস্য আর্তের সেবায় হাইতিতে অবতরণ করবে। হাইতির দুর্গতদের সহায়তায় নেদারল্যান্ড ও ফ্রান্স ত্রাণবাহী নৌবহর পাঠাবে। পাঠাতে পারে যুক্তরাজ্যও। শুক্রবার হাইতির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। হাইতির সিভিল প্রটেকশন অথরিটির দেয়া তথ্য মতে, এ মুহূর্তে দেশটির প্রায় সাড়ে ৩ লাখ আর্ত মানুষের সার্বিক সহায়তা প্রয়োজন, যাদের মাত্র ছয় ভাগের এক ভাগ মানুষকে প্রায় ২শ’ আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা করে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত হাইতি দূতাবাসের কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান অ্যারিয়েল ডোমিনিক ইতোমধ্যে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে জানিয়েছেন, রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্স, পেটি গোভ এলাকার নদীর যে সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে, ওই সেতুটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর ফল হবে ভয়াবহ। এতে করে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ সরবরাহ ভয়াবহভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সমস্যাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে যে ব্যাপারটি, তা হলো, হাইতির এই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উর্বর মাটি সবচেয়ে বেশি ফসল ফলাতো এবং এসব ফসল, ফসলি মাঠসহ ধ্বংস হয়ে গেছে। ডোমিনিক জানান, ইতোমধ্যে সরকারি উদ্যোগে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কিছুটা হলেও চলনক্ষম করে তুলতে অবিরত খেটে চলেছে স্বেচ্ছাসেবী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী। ম্যাথিউ’র আঘাতে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হাইতির আরেক শহর শান্তালের ডেপুটি মেয়র মার্ক সোনিয়েল নোয়েলসহ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবতাবাদী সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের আঞ্চলিক পরিচালক জন হাসে সিএনএন-এর কাছে মত প্রকাশ করতে গিয়ে খাদ্য সমস্যার কথাই তুলে এনেছেন। তারা জানান, হাইতিতে মানবিক সমস্যাকে প্রকটতর করে তুলবে তীব্র খাদ্যসংকট। সোনিয়েল নোয়েল ভীষণ হতাশায় বলেন, যেন অকুল পাথারে পড়েছি। সব ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে। ভেঙে পড়ে গেছে সমস্ত ফলের গাছ। কীভাবে কি হবে কিছুই বুঝতে পারছি না। জন হাসে জানান, হাইতির যে দক্ষিণাঞ্চল প্রধান খাদ্য উৎপাদক অঞ্চল হিসেবে দেশজুড়ে স্বীকৃত, সেটিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তীব্র খাদ্য সংকটের সূত্র ধরে দেশটিতে দ্রব্যের বিনিময়মূল্যের তীব্র অস্থিতিশীলতা থেকে শুরু করে সহিংসতা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। একটা দেশের গোটা ব্যবস্থাপনাকে নাড়িয়ে দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা সরেজমিন পরিদর্শনে দেখেছেন, সেতুসহ, সাধারণ রাস্তা ঝড়ে, মধ্যপথে গাছ পড়ে ভীষণরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেইসঙ্গে দুর্গম হয়ে উঠেছে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে বানের পানি, দূষিত করে তুলেছে পানীয় জলের যত আধার। এধরনের জলোচ্ছ্বাসের পর মহামারী হয়ে পানিবাহিত যে রোগগুলো দেখা দেয়, ওগুলোর জন্য বেশ অনুকূল পরিবেশ ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণস্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন পার্টনার্স ইন হেলথের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, হাইতিতে কলেরা সংক্রমণ এ ধাক্কায় বহুগুণে প্রকট হয়ে উঠতে পারে। সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১২ সালের হারিকেন স্যান্ডির পর হাইতিতে কলেরার যে প্রকোপ দেখা দিয়েছিল তা আজো অব্দি বজায় আছে। এক্ষেত্রে নতুন করে ম্যাথিউর আক্রমণে রোগের সংক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে। গত বৃহস্পতিবার হাইতির ওপর দিয়ে বয়ে যায় ক্যাটাগরি চারের আওতাভুক্ত (ঝড়ো বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২০৯-২৫১ কিলোমিটার) হারিকেন ম্যাথিউ। ঝড়টি পরে দিগ পরিবর্তন করে ক্যাটাগরি তিনের আওতাভুক্ত হয়ে (ঘণ্টায় ১৭৮-২০৮ কিলোমিটার) শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলে আঘাত হানে। সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভয়াবহ মানবিক সঙ্কটের দ্বারপ্রান্তে হাইতি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ