Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আর্থিক অনটনে মাদারীপুরে বন্ধ হয়ে গেছে একাধিক কিন্ডারগার্টেন

মাদারীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২০ পিএম

মাদারীপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও করোনাকালীন আর্থিক অনটনসহ নানা কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কিছু কিন্ডারগার্টেন। যেসব প্রতিষ্ঠান টিকে আছে, তাদেরও কাটছে চরম দৈন্য-দশায়। নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে টিকে যাওয়া কিন্ডারগার্টেনগুলোকে। বেশ কিছু কিন্ডারগার্টেন ঘুরে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

মাদারীপুর জেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের তথ্য মতে, করোনা মহামারীর কারণে কিন্ডারগার্টেনসহ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ভর্তি হয়নি শিক্ষার্থীরা। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে বেসরকারী শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই। এছাড়া অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে অবশিষ্ট বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মাদারীপুর জেলায় করোনার আগে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ছিল ১০৩টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ছিল ৫০টি, শিবচরে ২৫টি, কালকিনিতে ১৮টি ও রাজৈর উপজেলায় ১০টি। এখন জেলায় বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ২৭টি কিন্ডারগার্টেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় বন্ধ হয়েছে ১০টি, শিবচর উপজেলায় ১০টি, কালকিনিতে ২টি ও রাজৈর উপজেলায় ৫টি। এছাড়া যারা টিকে আছে, তাদের আর্থিক অবস্থাও নাজুক।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সদরের বেশ কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে ভাড়া বাড়িতে যে সমস্ত কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারী স্কুল ছিল, তা দেড় বছর ভাড়া দিতে না পারায় বেশির ভাগই ছেড়ে চলে গেছে। এসব বেসরকারী বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নিজস্ব আয়ে চলা এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারিরা রয়েছে চরম বিপাকে। এছাড়াও যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ জোড়াতালি দিয়ে চালু করেছেন, তারাও আছেন চরম সংকটের মধ্যে। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় কি করে প্রতিষ্ঠান চালাবেন এই চিন্তায় পরেছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে আরো জানা যায়, খোদ মাদারীপুর জেলা সদরে গোল্ডন ফিউচার, প্রভাতী শিশু একাডেমী, বর্নমালা আইডিয়াল, জেএকে চাইল্ড কেয়ার স্কুল, প্রভাতি শিশু শিক্ষা নিকেতন, স্বামী প্রবানন্দ বিদ্যানিকেতন, কবি নজরুল, সোনামনি শিশু বিদ্যালয়, সপ্তঙিঙ্গাসহ ব্রাক পরিচালিত বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

মাদারীপুর শহরের তাজনন্নেছা কল্লোল শিশু বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা ফকির মোহাম্মদ শাজাহান জানান, নিজস্ব ভবনে হওয়ায় তার বিদ্যালয়টি জোড়াতালি দিয়ে কোন রকমে টিকে আছে। তবে এই বছরে তেমন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি না হওয়ায় তিনিও সংকটের মধ্যে রয়েছেন। করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার আগে তার বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিলো ১৭৫ জন। বর্তমানে আছে ৪০ জন। এই বছরে ভর্তি কম হওয়ায় স্কুলের ১০ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারীর বেতন কিভাবে দিবেন, সে চিন্তায় পড়েছেন এই অধ্যক্ষ। গত দেড় বছরে ছাত্র বেতন আদায় না হওয়ায় কর্মরত শিক্ষকদের বেতন ভাতা দিতে না পারায় ৪ জন শিক্ষক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। অন্যদের বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে সামান্য কিছু দিয়েছেন, তবে তা জীবন ধারণের মতো নয়।

ভাড়া বাড়িতে স্থাপিত শহরের এক সময়ের সুনাম অর্জনকারী কিন্ডারগার্টেন ‘চিলড্রেন গ্রেসে’র অধ্যক্ষ মো: মোখলেছুর রহমান জানান, চিলড্রেন গ্রেস কিন্ডারগার্টেনের মাসিক বাড়ি ভাড়া ৩০ হাজার টাকা। বাড়ির মালিক চিকিৎসক আলী আকবর করোনাকালীন এক বছর বাড়ি ভাড়া দাবি করেননি। তবে এখন স্কুল চালু হওয়ায় বাড়ি ভাড়া নিবেন বলে জানিয়েছেন। মানবিক কারনে বকেয়া বাড়ি ভাড়ার হয়তো কিছু ছাড় দিতে পারেন। তার স্কুলেও করোনার আগে ৩’শ এর মতো ছাত্রছাত্রী ছিলো। এ বছর তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। শিক্ষক ছিলো ১৪ জন বর্তমানে টিকে আছে ১১ জন অথচ এই কিন্ডারগার্টেনটিতে এক সময়ে ২৭ জন শিক্ষক ছিল।

মাদারীপুর জেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান রিপন জানান, নিজস্ব আয় নির্ভর কিন্ডারগার্টেনগুলো যারা ভাড়া বাড়ি নিয়ে স্কুল করেছিলো তাদের বেশির ভাগই ভাড়া দিতে না পারায় বাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। জেলার কিন্ডারগার্টেনগুলোর মধ্যে মাদারীপুর শহরের তিনটি কিন্ডারগার্টেন চিলড্রেন গ্রেস, কল্লোল শিশু বিদ্যালয় ও এফ এইচ কিন্ডারগার্টেননের অবস্থা এক সময় ভলো ছিলো। ভাল অবস্থানের এই তিনটি বিদ্যালয়ের সাথে আরো ৫ থেকে ৬টি কিন্ডার গার্টেনের অবস্থাও মোটামুটি ভালো ছিলো। বর্তমানে তাদের অবস্থাও ভালো নেই।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন মূলত আমাদের নিয়ন্ত্রনে নেই। আমরা তাদের শুধু পাঠ্য বইগুলো দিয়ে থাকি। তবে করোনার জন্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন নেইও।’

এ ব্যাপারে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেন বা বেসরকারী প্রথমিক বিদ্যালয় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। এ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আমাদের কিছু করনীয় নাই। তবুও করোনাকালীন সময়ের দুর্দিনের পর স্কুল পরিচালনার ব্যাপারে কোন সহযোগিতা তারা চাইলে আমরা তা দিতে প্রস্তুত আছি।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদারীপুর

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ