Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ই-কমার্স লেনদেনে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৭ এএম

ডিজিটালাইজেশনের পথ ধরে দেশে ডিজিটাল লেনদেন, অনলাইন ব্যাংকিং ও কেনাকাটার হার বেড়েছে। বিশেষত করোনাকালীন বাস্তবতা মানুষকে অনলাইননির্ভর লেনদেন ও কেনাকাটার উপর নির্ভরশীল করে তুলেছে। কোটি কোটি মানুষের হাতে হাতে থাকা ডিজিটাল ডিভাইস, গ্যাজেট মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে সহজেই পণ্য সামগ্রী ভোক্তাদের হাতে পৌঁছে দেয়ার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারকচক্র রাতারাতি অনলাইনে পণ্য সরবরাহ ও পরিষেবার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। হঠাৎ করেই পাদপ্রদীপের আলোয় আসা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালির শত শত কোটি টাকার প্রতারণার তথ্য ফাঁস হওয়ার পর গত দুই মাসে দেশের অন্তত ১৯টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দেশে বর্তমানে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এদের মধ্যে ২০-২৫টির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো গুরুতর। ডিজটালাইজেশনের আশির্বাদ স্বরূপ ক্রমবর্ধমান অনলাইন লেনদেন এখন এসব অভিযুক্ত কোম্পানির প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে। ক্রমবর্ধমান ই-কমার্স সিস্টেম বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা জাগিয়েছিল, তা এখন নানাভাবে ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে।

শেয়ারবাজার লুণ্ঠন থেকে শুরু করে এমএলএম মার্কেটিং, যুবক-বিসমিল্লাহ গ্রুপ থেকে ই-ভ্যালি পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ ভোক্তা ও এজেন্টরা। মানুষ নিঃস্ব ও প্রতারিত হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে যে সব আইনগত উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেয়া হয় তাতে বেহাত হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার বা প্রতারিত ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো সাফল্য দেখা যায়নি। করোনাকালীন বাস্তবতায় দেশে ই-কমার্সের প্রসার বাড়লেও এটি এক-দুই বছর ধরে শুরু হয়নি। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দেশে ই-কমার্স কার্যক্রম তথা অনলাইনে পণ্য পরিষেবা বিস্তার লাভ করেছে। তবে এতদিনেও এসব অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানির লেনদেন তৎপরতা মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠিত না হওয়াটা বিস্ময়কর। অর্থমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে ই-ভ্যালির মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের শত শত কোটি টাকার সম্পদ লুণ্ঠনের দায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এড়াতে পারে না। একইভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কেও দায়িত্ব নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর অনুমোদন, নিবন্ধন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ব্যবস্থা ছাড়াই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো শত শত কোটি টাকার ব্যবসা করে মুনাফার অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করার মওকা পেয়েছে।

একেকটি বড় বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থা, মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে গণমাধ্যম ও আদালত পর্যন্ত নড়েচড়ে বসে। এবারও তার ব্যতিক্রম নেই। ই-ভ্যালির বিরুদ্ধে একের পর এক প্রতারণার মামলা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন, রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে, তবে লুণ্ঠিত অর্থ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনার ক্ষেত্রে আশাপ্রদ কিছু দেখা যাচ্ছে না। একটি ব্যাপক সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক খাতকে সাধারণ মানুষের কাছে অনাস্থাপূর্ণ ও ভঙ্গুর করে তোলার সাথে জড়িত সকলকে চিহ্নিত করে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই কেবল এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। অনালাইনে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় সরকার এখন ডিজিটাল ই-কমার্স অ্যাক্ট বিল পাসের পাশাপাশি একটি শক্তিশালী রেগুলেটরি সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানা যায়। অনেক দেরিতে হলেও স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দায় পরিশোধের বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে ই-কমার্স ব্যবস্থাকে মানুষের আস্থায় নিয়ে আসা অসম্ভব নয়। হাজার হাজার মানুষ প্রতারিত হওয়ার পর তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া শুধুমাত্র কতিপয় ব্যক্তিকে আটক করে জেলহাজতে দিয়ে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন লেনদেনে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এখনই সময়। প্রস্তাবিত ই-কমার্স অ্যাক্ট এবং শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা গঠনের প্রক্রিয়া দ্রুতায়িত করতে হবে। দেশের সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিবন্ধিত ও নিরাপত্তামূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করা ছাড়া এ ক্ষেত্রে প্রতারণা রোধ করা সম্ভব নয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ই-কমার্স

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৩১ জানুয়ারি, ২০২২
২৬ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন