Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

৬ বছর পর রহস্য উদ্ঘাটন

চট্টগ্রাম থেকে ট্রাঙ্কে লাশ ঢাকায়

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়ে বসবাস করার একপর্যায়ে মনমালিন্যের জেরে খুন করার পর লাশ ট্রাঙ্কে ভরে ঈগল পরিবহনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঘটনার ছয় বছর পর পিবিআই হত্যা রহস্য উদঘাটন এবং খুনী রেজাউল করিম স্বপনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনা ছিল ২০১৫ সালের ৩ মে। গতকাল শনিবার ধানমন্ডিতে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ছয় বছর আগে রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে ঈগল পরিবহনের একটি বাসে আসা লকারের মধ্যে থাকা ট্রাঙ্কে মেলে এক নারীর লাশ। পরিচয় না পাওয়ায় লাশটি অজ্ঞাতনামা হিসেবে উল্লেখ করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় দারুস সালাম থানার এসআই জাহানুর আলী বাদী হয়ে ২০১৫ সালের ৩ মে মামলা করেন। মামলা হওয়ার পর শুরুতে প্রায় তিন মাস তদন্ত করে থানা পুলিশ। এরপর ঘটনার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। কিন্তু দীর্ঘ চার বছর তদন্ত করেও এর রহস্য উন্মোচন হয়নি। মামলাটি লোমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর হওয়ায় পিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। দুই বছর তদন্ত করে এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জড়িত এক আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পিবিআই। এ ঘটনার মূল আসামি রেজাউল করিম স্বপনকে গত শুক্রবার ভোরে কুমিল্লার ইপিজেড এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তিনি দায় স্বীকার করেছেন এবং আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দেবেন বলে জানিয়েছেন।

বনজ কুমার বলেন, ২০১৫ সালের ৩ মে সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রামের কে খান মোড়ে ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট কেটে এক ব্যক্তি একটি ট্রাঙ্ক বাসে তুলে দেন। এসময় তিনি হেলপারকে বলেন, সামনের ভাটিয়ারি কাউন্টার থেকে এই টিকিটের যাত্রী উঠবে। কিন্তু পরবর্তী ওই কাউন্টার থেকে যাত্রী না ওঠায় বাসটি ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে এবং বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে গাবতলী এসে পৌঁছায়। এরপর বাসের সব যাত্রী তাদের জিনিসপত্র নিয়ে নেমে যান। পরে হেলপার দেখেন যে, একটি ট্রাঙ্ক মালিকবিহীন পড়ে আছে। তখন বাসচালক-হেলপার মিলে ট্রাঙ্কটি নামিয়ে দেখেন এটি খুব ভারী। তাদের সন্দেহ হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে দারুস সালাম থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে ট্রাঙ্কটি খুলে একজন অজ্ঞাতনামা তরুণীর লাশ দেখতে পান। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। পরিচিতি শনাক্ত না হওয়ায় অজ্ঞাত হিসেবে লাশটি দাফন করা হয়।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম শহর ও জেলা এলাকার সব থানায় নিখোঁজ জিডির অনুসন্ধান করে তথ্য নিয়ে আসার জন্য পাঠানো হয় তদন্তকারী কর্মকর্তাকে। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তা এক সপ্তাহ ধরে কাছাকাছি প্রায় ১০-১২টি নিখোঁজ জিডির তথ্য উদ্ঘাটন করেন। ২০১৫ সালের ১০ জুন ৫৯৯ নম্বর একটি জিডিতে দেখা যায়, শম্পা বেগম চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে নিখোঁজ হন।

ওই ঘটনায় নিহত শম্পা বেগমের ভগ্নীপতি আব্দুল মান্নান পাহাড়তলী থানায় জিডি করেন। ওই জিডির সূত্র ধরে তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ও নিহত শম্পা বেগমের বাবা ইলিয়াস শেখের (অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর তিনি জানতে পারেন, ২০১৩ সালে রেজাউল করিম স্বপন (অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনী সদস্য) খুলনা তিতুমীর নৌঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। এসময় শম্পা হাসপাতালে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ করতেন। হাসপাতালে ইলিয়াস শেখের স্ত্রীর চিকিৎসার সময় তার মেয়ে শম্পার সঙ্গে রেজাউলের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রথমে প্রেম ও পরে বিয়ের জন্য চাপ দিলে রেজাউল বদলি হয়ে চট্টগ্রাম চলে যান। এরপর ভিকটিম শম্পাও কিছুদিন পরে তার এক ফুপুর বাসায় থাকেন।

তিনি আরো বলেন, তিনি ফয়েজ লেক এলাকায় একটি হোটেলে কিছুদিন অবস্থান করেন। পরে পাহাড়তলী থানাধীন উত্তর নিভিউ আবাসিক এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আনোয়ার হোসেনের টিনশেড বাড়ির একটি বাসায় সাবলেট নিয়ে বসবাস শুরু করেন। এভাবে তারা ২০১৪-২০১৫ সালের মে পর্যন্ত একত্রে বসবাস করেন। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করলেও বিয়ে করেননি। পরে তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য দেখা দিলে রেজাউল করিম শম্পাকে ২০১৫ সালের ২ মে গভীর রাতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে একটি ট্রাঙ্কে ভরে ঈগল পরিবহনের বাসে তুলে দেন। শম্পার বাবাকে জানান, তাকে খুলনার বাসে তুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরে শম্পা বাড়িতে না পৌঁছালে তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। না পেয়ে ভিকটিমের ভগ্নিপতি আব্দুল মান্নান পাহাড়তলী থানায় একটি জিডি করেন। ভিকটিমের বাবা পরে ঘটনার বছর ২৭ মে আসামি রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী চট্টগ্রাম অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। পিবিআই ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। সবশেষ এ মামলার রহস্য উন্মোচন করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রাঙ্কে লাশ ঢাকায়

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ