Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দান-অনুদান : যে বিষয়গুলো লক্ষ রাখা জরুরি-১

মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

দান করাকে ইসলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল সাব্যস্ত করেছে। এর অনেক ফজিলতও বর্ণিত হয়েছে কোরআন-হাদীসে। তাই ইসলামের অপরাপর আমলের মতো এই গুরুত্বপূর্ণ আমলটির জন্যও রয়েছে অনন্য সাধারণ কিছু নির্দেশনা ও নীতিমালা। যদি দানের ক্ষেত্রে সেগুলো রক্ষা করা হয় তাহলে এর যথাযথ প্রতিদান পাওয়া যাবে। আমাদের দান বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়ে পরকালে নিজের সামনে উপস্থিত হবে ইনশাআল্লাহ। কাজেই সে নির্দেশনাগুলো আমাদের জানা দরকার।

এক. নিয়ত সহীহ হওয়া : সহীহ নিয়ত বিহীন কোনো আমলেরই আল্লাহর নিকট মূল্য নেই। নিয়ত যদি সঠিক না হয়, আল্লাহর নিকট সেই আমলের কোনো ধর্তব্য হয় না, এমনকি আমলগুলোর সওয়াব ও প্রতিদানও পাওয়া যায় না। এককথায় সকল আমলের শুদ্ধাশুদ্ধি এবং তার সওয়াব ও প্রতিদান নির্ভর করে নিয়তের ওপর। হাদীসের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সহীহ বুখারীর প্রথম হাদীসই হলো এই নিয়ত বিষয়ক। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : নিশ্চয়ই সকল আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তা-ই পাবে, যার নিয়ত সে করবে। (সহীহ বুখারী : ১)।

দান-খয়রাতের ব্যাপারেও একই কথা। দান করতে হয় আল্লাহর জন্য। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তবেই এই দান পরকালে বর্ধিত হয়ে দাতার হাতে ফিরে আসে। ইরশাদ হয়েছে : আর যারা নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এবং নিজেদের মধ্যে পরিপক্বতা আনয়নের জন্য, তাদের দৃষ্টান্ত এ রকমÑ যেমন কোনো টিলার ওপর একটি বাগান রয়েছে, তার ওপর প্রবল বৃষ্টিপাত হলো, ফলে তা দ্বিগুণ ফল জন্মাল। যদি তাতে প্রবল বৃষ্টি নাও পড়ে, তবে হালকা বৃষ্টিও (তার জন্য যথেষ্ট)। আর তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা অতি উত্তমরূপে দেখেন। (সূরা বাকারা : ২৬৫)।

কিন্তু নিয়ত যদি সহীহ ও শুদ্ধ না হয় তখন হিতে বিপরীতও হয়ে যেতে পারে। হাদীসে এসেছে, কিয়ামতের দিন সম্পদশালী ব্যক্তিকে আল্লাহর সামনে হাজির করে আল্লাহ তাকে যেসব নিআমতরাজি দান করেছেন, তার সামনে পেশ করা হবে। দেখে সে চিনে ফেলবে (হাঁ, এসব নিআমত দুনিয়াতে আমার কাছে ছিল।) তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, এগুলোতে তুমি কী আমল করেছ? সে বলবে : যেসব খাতে দান করা আপনি পছন্দ করেন এমন প্রতিটি খাতেই আমি আপনার জন্য খরচ করেছি।

তাকে ডেকে বলা হবে : তুমি মিথ্যা বলেছ! তুমি খরচ করেছ- যাতে তোমাকে দানবীর বলা হয়। তা বলা হয়ে গেছে। অতঃপর তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। তাকে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহীহ মুসলিম : ১৯০৫)।

সুতরাং কথা একটাই, অল্প হোক আর বেশি, দান করব আল্লাহর জন্য। নিয়ত শুদ্ধ করে সামান্য দানও যদি করতে পারি, সেটি মৃত্যুর পরে কাজে আসবে এবং পরকালে আমার আমলনামায় পাওয়া যাবে। এমনকি যদি নিজের হালাল উপার্জন থেকে স্ত্রী ও পরিবারের জন্য খরচ করা হয় তাও বিফলে যাবে না। তার বিনিময়ে আল্লাহ দান করবেন সদকার সওয়াব। হাদীসে এসেছে : আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা-ই তুমি খরচ করবে, তার প্রতিদান দেয়া হবে; এমনকি স্ত্রীর মুখে তুমি যে খাবারের লোকমা তুলে দাও! (সহীহ মুসলিম : ১৬২৮)।

অর্থাৎ, ভুল নিয়তের কারণে নিজের মহামূল্যবান আমলটি যেমন বিনষ্ট হয়ে যায়, তেমনি একান্ত ব্যক্তিগত প্রাত্যহিক কাজও নেক আমলে পরিণত হয় এই বিশুদ্ধ নিয়তের মাধ্যমে।



 

Show all comments
  • মনিরুল ইসলাম ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫৪ এএম says : 0
    দান করা একটি অতি মহৎ কাজ। মানুষের কল্যাণে নিজের অর্থ-সম্পদ ব্যয় বা প্রদান করাকে দান করা বলা হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • মুক্তিকামী জনতা ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫৫ এএম says : 0
    দান করার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমাদের আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করো সেই দিন আসার আগে, যেদিন কোনো রকম বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৪)
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফ আহমেদ ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫৫ এএম says : 0
    দান প্রদানে কাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘মিসকিনদের দান করলে তা শুধু একটি দান হিসেবে পরিগণিত হবে। কিন্তু গরিব নিকটাত্মীয়কে দান করলে তাতে দ্বিগুণ সওয়াব হয়। একটি দানের, অন্যটি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার।’ (তিরমিজি ও নাসাঈ)
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫৫ এএম says : 0
    আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এ দান প্রদান করা হলে পরকালে আল্লাহ এ দানের পুরস্কার দেবেন না।
    Total Reply(0) Reply
  • রেজাউল করিম ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫৬ এএম says : 0
    দান করার পর দানকারী যদি দান গ্রহণকারীকে দানের জন্য খোঁটা দিয়ে কষ্ট দেয়, তাহলে ওই দান ফলশূন্য হয়ে যায়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন